বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় স্বামীর স্বীকারোক্তি

আগের সংবাদ

বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা : কী করছেন কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

রেস্টুরেন্টের হোস্ট থেকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সিবিআরই। আমেরিকান এই কোম্পানিটির বার্ষিক আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার। এশিয়া প্যাসিফিকের রিজিওনাল হেড হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এ এইচ এম সাইফ হোসেন, যার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্টুরেটের হোস্ট হিসেবে। বেতন ছিল সাড়ে ৪ হাজার টাকা। জীবনের নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সিবিআরইয়ের শীর্ষস্থানীয় এই কর্মকর্তা বাংলাদেশের একমাত্র মিল কিড কোম্পানি ‘ফুড এন্ড ফ্লেভার্স’ এর প্রতিষ্ঠাতাও। ফরচুন ফাইভ হানড্রেড তালিকায় থাকা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সিবিআরই। তার কাজের পরিধি এশিয়া প্যাসিফিকের ১৭টি দেশে বিস্তৃত। এসব অঞ্চলের বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্ট্র্যাটেজি ও পলিসি নির্ধারণে ভূমিকা রাখছেন তিনি।
সম্প্রতি ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ এইচ এম সাইফ হোসেন বলেন, আমার বাবা উপসচিব ছিলেন। আমার গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে গুলশান-২ এর ‘খানা-খাজানা’ রেস্টুরেটে হোস্টের কাজ করি। দুই বছর পর ‘নানদোজ’ নামে আরেকটি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করি। ওখান থেকে দু’মাসের ট্রেনিং নিতে নানদোজের হেড অফিস সাউথ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে যাই। ২০০৭ সালে দেশে ফিরে বাংলালিংকে যোগ দিই। সেখানে সাত বছরে ৭টি প্রমোশন এবং ৪ বার আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। ২০১৩ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব নিই। উচ্চতর ট্রেনিং নিতে ফিলিপাইনে যাই। ২০১৮ সালে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড গ্রুপ চেয়ারম্যান রিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করি। পদোন্নতি পেয়ে ওই ব্যাংকের রিজিওনাল হেড (সাউথ এশিয়া) হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। পরের বছর সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রিয়েল এস্টেট সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সিবিআরইয়ের রিজিওনাল হেড হিসেবে যোগ দিই। বর্তমানে দেশীয় রিয়েল এস্টেট সেক্টরের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে কাজ করছি। এজন্য ভীষণ গর্ববোধ করি। সাইফ হোসেন আরো জানান, খুবই সাধারণ একটি কাজ দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও কখনো মনোবল হারাননি। আত্মবিশ্বাস, মেধা ও একাগ্রতা থাকলে যে কোনো অবস্থান থেকেই যে টপ লেভেলে পৌঁছানো যায়, তরুণদের জন্য তিনি সেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন দেশে কাজ করার চ্যালেঞ্জ ও অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে সাইফ বলেন, একজন বাঙালি হিসেবে বহির্বিশ্বে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যোগাযোগ দক্ষতার দুর্বলতা। বেশিরভাগ মানুষের আত্মবিশ্বাসের অভাব। এ বিষয়ে আরো বেশি কাজ করা দরকার।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের দেশের এ প্রজন্ম বেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আগামীতে এই তরুণরা যোগ্যতার সঙ্গে নেতৃত্ব দেবে, তাদের জন্য দরকার সঠিক গাইডলাইন। তরুণদের জানতে হবে আমাদের দেশের আইডল কারা, জীবনে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের কী ধরনের অভিজ্ঞতা ও ধৈর্যের মধ্য দিয়ে বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে- সেসব বিষয় জানার আগ্রহ থাকতে হবে।
মেধাবীদের বিদেশমুখিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মেধাকে এক স্থানে রেখে দেয়ার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই; বরং তরুণ মেধাবীদের জন্য গেøাবাল মার্কেট সম্পর্কে জানার সুযোগ তৈরি করা জরুরি। যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ, তা যেখানেই হোক অসুবিধা নেই। ক্যারিয়ার গড়তে কোনো তরুণ যদি ভিন দেশে চাকরি নিয়ে, ওই তরুণ যদি নিজের দেশকে ধারণ করে দেশের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পারে- কোনো অসুবিধা নেই। কারণ তিনি ওখানে থেকেও এদেশের জন্য কিছু করা যায় কিনা সে চেষ্টাই করবেন। এতে বিশ্ব দরবারে দেশের সুনাম অর্জনে ভূমিকা রাখবেন তিনি।
২০২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘ফুড এন্ড ফ্লেভার্স’ কোম্পানির ব্যানারে বিভিন্ন ধরনের খাবারের রেসিপি ও রান্নার উপকরণ সরবরাহ করেন সাইফ। তিনি জানান, বর্তমানে ৩১টি রেসিপি সরবরাহ চলমান থাকলেও আমরা ২০০ রকমের খাবারের রেসিপি সরবরাহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এর উদ্দেশ্য খাবার তৈরিতে সময়ের সাশ্রয়, একঘেঁয়েমি দূর করা।
তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি মনে করি, আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে প্রত্যেকেরই ব্যবসা করা উচিত। তবে সাফল্য দ্রুত আসে না, সময় লাগে। ধীরে ধীরে এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। কারণ ব্যবসা করলে নিজের পাশাপাশি পরিবার এবং সমাজের জন্য অনেকভাবে সহযোগিতা করার সুযোগ থাকে। তবে এক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়