বোটানিক্যাল গার্ডেনে স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় স্বামীর স্বীকারোক্তি

আগের সংবাদ

বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা : কী করছেন কূটনীতিকরা

পরের সংবাদ

বিএনপি নেতা জামালউদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলা : ২০ বছর পর কারাগারে সেই কাশেম চেয়ারম্যান

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেই ২০০৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রামে অপহৃত হন চট্টগ্রামের আনোয়ারার প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন চৌধুরী। অপহরণের পর তাকে হত্যা করা হয়। এই অপহরণ ও হত্যার অন্যতম খলনায়ক ছিলেন ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের এক সময়কার চেয়্যারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী ওরফে কাশেম চেয়ারম্যান। প্রায় ২০ বছর আগে চাঞ্চল্যকর ‘জামালউদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলা’র ঘটনাটি অনেকেই হয়তো ভুলতে বসেছেন। তবে এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার সেই কাশেম চেয়ারম্যান চট্টগ্রামের পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ নারগিস আক্তারের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেছেন। আদালত তা নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ‘জামালউদ্দিন অপহরণ ও হত্যা’ মামলাটি আবারো আলোচনায় এলো।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ জানান, কাশেম চেয়ারম্যান হাইকোর্টে আগাম জামিনের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু মামলা বিচারাধীন থাকায় আদালত জামিন না দিয়ে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, ঘটনার পরই কাশেম চেয়ারম্যান পালিয়ে বিদেশে চলে যান। মাসখানেক আগে দেশে ফিরে আসেন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া সুলতান ড্রাইভার নামে এক আসামি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানায়, জামাল উদ্দিনকে তিনি কাঞ্চননগরের গহিন পাহাড়ে নিয়ে যান। গুলি করে হত্যার আগ পর্যন্ত জামালউদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন তিনি, কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান। কাশেম চেয়ারম্যানের নির্দেশে জামালউদ্দিনকে হত্যা করা হয়।
২০০৩ সালের ১৩ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নগরের চান্দগাঁও এলাকার বাসায় ফেরার পথে অপহৃত হন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির প্রভাবশালী ও এলাকার জনপ্রিয় নেতা এবং ব্যবসায়ী জামালউদ্দিন। অপহরণকারীরা মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছে ১ কোটি টাকা দাবি করে। প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার।
পরের সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জামালউদ্দিন। তার পরিবার অভিযোগ করে, মনোনয়ন ঠেকাতে আনোয়ারায় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ষড়যন্ত্র ও নির্দেশে তাকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়। অপহরণের দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার কালা মাহবুব নামে এক আসামি ফটিকছড়ির কাঞ্চননগর এলাকায় গহিন পাহাড়ে জামালউদ্দিনের কঙ্কাল দেখিয়ে দেন র‌্যাব-৭ এর তৎকালীন কর্মকর্তাদের। র‌্যাব সদস্যরা সেই কঙ্কাল উদ্ধার করলেও পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে সিঙ্গাপুরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়।
এ ঘটনায় জামালউদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন বাদী হয়ে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন। সাড়ে ৩ বছর ধরে ৯ জন পুলিশ কর্মকর্তা পর্যায়ক্রমে মামলাটি তদন্ত করেন। এ অবস্থায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার তদন্তভার নেয়।
২০০৬ সালের ২০ জুলাই সিআইডি আনোয়ারার তৎকালীন সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, তার ছোট ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতি দিয়ে এবং ১৬ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। কিন্তু ঘটনার মূল হোতাদের বাদ দেয়ার অভিযোগে এর বিরুদ্ধে নারাজি দেন বাদী। আদালত মামলা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দিলে ২০০৬ সালের ১৬ আগস্ট আগের ১৬ জনকেই আসামি করে ফের অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। বাদী এই অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধেও নারাজি দেন।
এদিকে মামলার আসামি কালা মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে লিভ টু আপিল করেন আসামিরা। এটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে।
২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি স্থানান্তর করা হয়। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত বাদীর নারাজি আবেদন নাকচ করে ২০০৬ সালে সিআইডির দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন। দুজন আসামি মারা যাওয়ায় তাদের বাদ দিয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ১৩৫ কার্যদিবস শেষ হয়ে যাওয়ায় মামলাটি ট্রাইব্যুনাল থেকে নিয়মিত আদালতে ফেরত যায়।
পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ আহমেদ জানান, মামলায় মোট ৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। বাদীকে বারবার সমন দেয়ার পরও হাজির হচ্ছেন না। এজন্য সাক্ষ্যগ্রহণও এগোচ্ছে না। মামলার ১৪ আসামির মধ্যে এতদিন কারাগারে ছিলেন শুধু মো. আলমগীর নামে এক আসামি। এবার কাশেম চেয়ারম্যান কারাগারে গেলেন। বাকিরা জামিনে আছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়