রাজধানীর বাজারদর : সবজিতে স্বস্তি মাছ-ডিমের দাম অপরিবর্তিত

আগের সংবাদ

বই সংকটে উৎসবে ছন্দপতন : শিক্ষার্থীদের হাতে দেয়া হয় একটি-দুটি অথবা গতবছরের বই > ফেব্রুয়ারির আগে সব শিক্ষার্থী বই পাবে না

পরের সংবাদ

উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ১, ২০২৩ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার দক্ষিণ থেকে : টেকনাফ-কক্সবাজারের শুঁটকিপল্লীগুলোতে কর্মতৎপরতা বেড়ে গেছে। শীত মৌসুমের শুরু থেকে উপকূলে চলছে পুরোদমে শুটকি তৈরির ধুম। সাগর থেকে ট্রলারে আনা ফ্লাইং (পাখি), নাইল্লা, ছুরি, লইট্টা, সুরমা, সুন্দরী, রূপচাঁদাসহ ২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে এসব মাছ শুকিয়ে তৈরি হচ্ছে শুঁটকি। শুঁটকি তৈরির কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারী-পুরুষের। তাদের উপার্জন বাড়ায় করোনা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে চলেছে এলাকাবাসী। 
ব্যবসায়ীদের দাবি, মেকানিক্যাল ফিশ ড্রায়ার ও প্রচলিত পদ্ধতিতে শুকানো এই শুঁটকি মানসম্মত হওয়ায় চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আর মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানালেন, সরকারি সহযোগিতা না থাকার কারণে তারা বিদেশে পর্যাপ্ত শুঁটকি রপ্তানি করতে পারছেন না। যদি সহায়তা মেলে তাহলে বিদেশে শতভাগ মানসম্মত শুটকি আরো বেশি পরিমাণ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। 
সেন্টমার্টিনের শুঁটকি ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ ভোরের কাগজকে জানান, ৪০০ মণ নাইল্লা মাছ ধরা পড়ে তাদের জালে। ওই কাঁচা মাছ কেজিপ্রতি ১০০ টাকায় দরে একমণ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি না করে তা শুকিয়ে ফেলা হয়। এখন এই নাইল্লা শুঁটকি মণপ্রতি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেদিন সাগরে বেশি মাছ পাওয়া যায় সেদিন নায্যমূল্য পাওয়া না গেলে এসব মাছ শুঁটকি করা হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির নেতা মো. সোহেল বলেন, এ বছর আমরা আড়াই লাখ টন শুঁটকি উৎপাদন করতে সক্ষম হব। যার বাজার মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। এসব শুঁটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। তিনিও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি করে করেন।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় শীত মৌসুমের শুরু থেকে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। যার ভেতরে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, শাপলাপুর, সেন্টমার্টিন,  কক্সবাজারের নাজিরারটেক, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়াসহ জেলার বিভিন্ন শুঁটকি মহলে এ শুঁটকির উৎপাদন শুরু হয়েছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধের ওপর বা সৈকত পাড়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচায় সূর্যের তাপে কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়। বিভিন্ন শুঁটকি পল্লীতে দেখা গেছে- শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ মাছ পরিস্কার করছে, কেউ মাচায় শুঁটকি করার জন্য মাছ তুলছেন। কাজের ব্যস্ততায় কথা বলারও সময় নেই শুঁটকি শ্রমিকদের।
সেন্টমার্টিনের শুঁটকি ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস জানান- শীত ও পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে থেকে শুঁটকি মহালে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে বছরের অধিকাংশ সময় বিরূপ আবহাওয়া থাকায় ও করোনাকালীন উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে শুঁটকি উৎপাদন। এ বছরও রূপচাদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, নাইল্যামাছসহ ২০-২৫ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি হচ্ছে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের ৯ মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলে উৎপাদনে একটু ভাটা পড়ে।
নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ জানান, প্রায় ১০০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা এ শুঁটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ৎ। দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল হলো এই নাজিরারটেক। এখানে ব্যবসায়ীও আছেন প্রায় দুই হাজার।
এ মহাল থেকে সবমিলে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন শুঁটকি। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা। জেলার ৬টি স্থান মিলে প্রতি মৌসুমে শুঁটকি উৎপাদন হয় আড়াই লাখ টন, যার বাজারমূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা। এসব শুঁটকি মহলে উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। জেলার শুঁটকি মহলগুলো থেকে দৈনিক ৩০-৩৫ টন শুঁটকি দেশের বিভিন্নস্থানে ট্রাকে করে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যান। তিনি বলেন, প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেয়া হলেও শুঁটকি মহালে সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে। বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকতা এস এম খালেকুজ্জামান ভোরের কাগজকে বলেন, বঙ্গোপসাগর থেকে আহরণ করা বিশেষ করে ছোট আকৃতির মাছগুলো দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করা হয়। কক্সবাজারে উৎপাদিত শুঁটকি দিয়ে সমগ্র দেশের মানুষের চাহিদা মিটানো হচ্ছে। এমনকি শুঁটকির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। কোথাও কোথাও কীটনাশক ব্যবহারের কথা জানান টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা শুঁটকি উৎপাদনে দিন দিন কমে আসছে। নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে কয়েকটি এনজিও সংস্থার সহযোগিতায় আমরা ইতিমধ্যে শুঁটকি ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করে তাদের এ বিষয়ে সচেতন করছি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে উৎপাদিত শুঁটকির একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় পর্যটন শহর কক্সবাজারে। একসময় কক্সবাজারে বেশ কয়েকটি শুঁটকির গ্রাম ছিল। কিছু দরিদ্র মানুষ শুঁটকি তৈরি ও বিপণনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এখন শুঁটকি উৎপাদন হয় বাণিজ্যিকভাবে, বিশাল কলেবরে। কক্সবাজারে শুঁটকি উৎপাদনের সবচেয়ে বড় মহাল নাজিরারটেক শুঁটকি মহাল। কক্সবাজার শহরের পশ্চিম সাগরের তীরে এই নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লী। এটি নতুন চর এলাকা। এছাড়া টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীর দ্বীপ, শামলাপুরে বছরজুড়ে চলে শুঁটকি মাছের উৎপাদন। বিশাল এলাকাজুড়ে শত শত বাঁশের মাচায় নানা জাতের মাছ শুকানো হয়।
তবে অপরিকল্পিতভাবে শুঁটকি উৎপাদন করায় এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হচ্ছে। যারা এই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে অনেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষযে সরকারের নজর দেয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম টেকনাফ শাখার সভাপতি আলহাজ ছৈয়দ হোছাইন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়