বামপন্থি ছাত্রসংগঠন : প্রতিবেদন পেছাল পুলিশের ওপর হামলা মামলার

আগের সংবাদ

শিক্ষকদের উন্নয়নের কথা শোনাবেন শিক্ষামন্ত্রী

পরের সংবাদ

সমুদ্র বন্ধু আলব্যাট্রস

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বহু কাল আগের কথা, ভিন দেশের ফুটফুটে এক রাজকন্যা প্রতিদিন প্রাসাদের ছাদে গিয়ে মুগ্ধ চোখে দেখে দূরের নীল সমুদ্র। উদাস এলোমেলো বাতাস মেখে সাগরের উপরে পাখিরা ঘোরে ফেরে। তার ভালো লাগে বিশাল ডানার উড়ন্ত সাদা পাখিদের। আহা, যদি ওদের বন্ধু হতে পারত!
রাজপ্রাসাদের ফুল-ফলের বাগানে বেড়ানোও ভারি পছন্দ তার। সেখানে গোলাপই ফোটে কত্তো রঙের। গোলাপি, লাল, সাদা, কমলা, হলুদ! বাগানের অসংখ্য পাখিরা রাজকন্যা ইসাবেলার বন্ধু। দূর থেকে মধু খেতে আসা সুচালো লম্বা ঠোঁট মিষ্টি কুটুম একরত্তি হামিংবার্ডের কাছে সেদিন জেনেছে গভীর সমুদ্রের ওই পাখিদের নাম আলব্যাট্রস। হঠাৎ কখনো আসা সোয়ালো, ম্যাগপাই রবিন, নাইটিংগেলও তা-ই বলেছে। ইসাবেলার হাতে, কাঁধে নির্ভয়ে বসে ফড়িং, প্রজাপতিরা। ফুলের রেণু ছুঁইয়ে দেয়। কোঁকড়ানো চুলে গোলাপি রিবন, একই রঙের রেশম কাপড়ের ফ্রকে ফুল ভরা গোলাপ বাগানে দাঁড়ালে তাকেও মনে হয় একটা ফুল। ইষ্টিকুটুম পাখিরা বাগানের ফুলের মধু, আপেল, নাশপাতি, চেরী, ফিগ, পিচ খেয়ে কিচিমিচি গান শোনায়।
মায়ের কাছে ইসাবেলা পাখির গল্প শোনে। মা-ই সাদা, বাদামি দুই রঙের পেলিক্যানের গল্প শুনিয়ে তাকে দেখাবে বলেছে। কিন্তু তার আলব্যাট্রস দেখার ইচ্ছেই বেশি। স্বপ্নে দেখে উত্তাল সমুদ্র ঢেউ, উপরে শনশন বাতাস কেটে আলব্যাট্রসরা উড়ছে। এক সময় মস্ত রাজসিক পাখা ছোট্ট ভাঁজে গুটিয়ে বাগানের আপেল গাছে বসে দিব্যি গল্প শোনাচ্ছে তাকে… নিশুতি রাতে রাজার বাগানের আপেল খেয়ে যায় পাখিটা, প্রতিবারই প্রহরীর তীরের আঘাতে খসে পড়ে অপরূপ এক পালক। এক পলক দেখা গেলেও ধরা যায় না। অবশেষে রাজপুত্র পরপর কয়েক রাত জেগে সফল হলেও অপূর্ব সুন্দর পাখিটাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তক্ষুনি ছেড়েও দেয়… প্রিয় সেই রূপকথাটা পাখিদের কাছে শুনতে শুনতে সে যেন দিব্যি ঘুমিয়েই পড়েছে। এমন নিছক কল্পনার দিন।
ইসাবেলার ১০ বছর বয়স হলো। রাজ্যজুড়ে জন্মদিনের আমেজ, ক্যান্ডেল, কেক, কুকিজ, ক্যান্ডির ছড়াছড়ি। রাজ্যের মানুষ মেতেছে উৎসব, আনন্দে। প্রিয়জনের দেয়া সুন্দর উপহারে সেও আনন্দে ডগমগ। আরো খুশি হতো আলব্যাট্রসদের দেখতে পেলে।
‘মা জাহাজ করে কবে নিয়ে যাবে সমুদ্রে?’ তার দেখার আগ্রহ বাড়েই।
ইসাবেলা দিনে দিনে অপরূপ সুন্দর হয়ে উঠছে। ফর্সা গালে লাল গোলাপের আভা, ডাগর নীল চোখে যেন ডানা কাটা পরী। সেদিন একাই প্রাসাদের বাইরে ওক, বার্চ, পাইনের বনে বেড়াচ্ছে, সরু পথ এঁকেবেঁকে দূরে হারিয়েছে। ফেরার সময় পথ খুঁজে না পেয়ে কেঁদে আকুল ইসাবেলা দেখে সামনে ডানাওয়ালা এক পরী, মুহূর্তে যেন মাটি ফুঁড়ে উঠে এলো।
সহানুভূতি ভরা মিষ্টি স্বরে পরী বলে, ‘পথ হারিয়েছো তো? রাজপ্রাসাদে পৌঁছে দেই চলো!’
সে অবাক, ‘সবই জানো! কীভাবে? চেনো বুঝি আমাকে?’
পরী হাসে, ‘বাহ, প্রায় প্রাসাদ বাগানের নাশপাতি গাছে বসি, ফল খাই, তখন দেখি।’
কৌতূহল বাড়ে ইসাবেলার, ‘আমি যে দেখিনি?’ পরীর উত্তর, ‘অদৃশ্য থাকি, কারো দেখার সাধ্য নেই। এসো রওনা দিই, রাজা-রানী চিন্তায় নিশ্চয়ই অস্থির।’
হালকা পাতলা শিশু রাজকন্যাকে পিঠে বসিয়ে পাখা মেললো পরী। অনেকক্ষণ উড়ছেই, তবু পথ কেন ফুরোয় না! চিন্তিত ইসাবেলার মনের কথা পরী যেন বুঝেছে, ‘ভয় নেই, অন্যপথে ঘুরেফিরে যাচ্ছি কিনা, তা-ই!’
পরীর কথা ভালো লাগে না, কণ্ঠও ভয়ানক রুক্ষ, কর্কশ শোনায়।
কিন্তু ছাদ থেকে দেখা সেই অথৈ সমুদ্রের ওপর দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে কেন? বন থেকে তো প্রাসাদ খুব কাছে!
সে তা-ই ফের বলে, ‘এত দূর ঘুরে কেন যাচ্ছো পরী?’
উত্তরের বদলে পরীর তুলতুলে পিঠ পাথরের মতো শক্ত লাগলে আতংকে কেঁপে ওঠে ইসাবেলা। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা, উথাল-পাতাল বাতাস বইছে। ইসাবেলা ভয় পায়, যদি পড়ে যায় ঝঞ্জা মুখর উত্তাল সাগরে! অবশেষে নির্জন এক দ্বীপে নামে পরী। সে চমকে দেখলো পরীর বদলে কদাকার কুৎসিত এক ডাইনী! হিংস্র চোখে খনখনে বীভৎস কণ্ঠে বলে, ‘সুন্দর মেয়েদের অপছন্দ। সুযোগ পেলে ক্ষতি করি। ইচ্ছামতো রূপ বদলে মানুষ, পরী, পাখি, জন্তু হই। এখন এই নিঝুম দ্বীপে বন্দি থাকো, কি মজা!’ খিকখিক হেসে মুহূর্তে অদৃশ্য হয় ডাইনী।
ইসাবেলার করুণ কান্না বাতাসে ভাসে। সে বোঝে মা-বাবা কেন একা বের হতে নিষেধ করে। আজ খুবই ভোরে তাদের, প্রাসাদরক্ষীদের চোখ এড়িয়ে একাই বনে যাওয়া উচিত হয়নি। মা-বাবার কথা অমান্য করায় এই বিপদ। ভুল বুঝতে পেরে কেঁদে কেঁদে ক্লান্ত সে ঘুমিয়ে পড়ল। জেগে মুগ্ধ বিস্ময়ে দ্যাখে দ্বীপের উপরে পড়ন্ত বিকেলের কোমল আলোতে যেন স্বপ্নের মতোই জোড়ায় জোড়ায় উড়ছে প্রিয় আলব্যাট্রস। বিশাল কালো পাখা, বুকের পালক ধূসর। সে সাহায্যের আশায় ব্যাকুল হাত তুললে পাখিরা নিমিষেই দ্বীপে নেমে অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ‘এখানে কীভাবে এলে লিটল সুইটি?’
বিষণ্ন কাতর ইসাবেলা সব ঘটনা জানিয়ে কাতর কণ্ঠে বলে, ‘বাবা-মায়ের কাছে যাবো।’
আলব্যাট্রসরা আশ্বাস দেয়, ‘হুম, ব্যবস্থা নিচ্ছি প্রিন্সেস। তুমি সারাদিন কিছুই খাওনি, মুখখানা শুকনো। এখানে তোমার খাবারই নেই। অথচ কাল রাজ্যে তোমার জন্মদিনে অঢেল খাবারের আয়োজন হয়েছে।’
ইসাবেলা লজ্জা পায়, ‘ইস, তোমরা সেসব খেতে পারোনি তো!’ হলদে লম্বা ঠোঁট আলব্যাট্রসরা হাসে, ‘ঠিক আছে প্রিন্সেস, আমরা খাই স্কুইড, ক্রিল, মাছ এইসব।’
এবার ইসাবেলার মুখে হাসি ফুটেছে, ‘তোমাদের বন্ধু হবার ভীষণ শখ ছিল, হবে?’
‘হুউ।’ আলব্যাট্রসরা একসঙ্গে রাজসিক ভঙ্গিতে মাথা কাত করে। নিজেদের ভাষায় ফিসফিসিয়ে কিছুক্ষণ শলাপরামর্শ হলো তাদের। এরপর গলা উঁচিয়ে কঁকঁ শব্দে ডাকলো বারবার। এর অল্প পরেই একটা জাহাজ আসতে দেখে পাখিরা খুশি। হাততালি দেয় ইসাবেলাও। মহানন্দে ঘুরে ঘুরে একটু ব্যালে ডান্স দিলে আলব্যাট্রসরাও সেই ছন্দে দৃষ্টি নন্দন নাচ করে। নাচবেই তো, ইসাবেলাকে তার বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার বাহন যে উপস্থিত। দ্বীপে নোঙর করে আলব্যাট্রসদের কিছু মাছ ছুঁড়ে দিলো নাবিকরা, এই আলব্যাট্রস সমুদ্র বন্ধুরাই তো বিক্ষুব্ধ মধ্য সমুদ্রে পথ হারিয়ে ফেললে উজ্জ্বল বাতিঘরের মতো জাহাজের পাশে উড়ে উড়ে তাদের পথ দেখায়।
তাড়াতাড়ি প্রিন্সেসকে আদর, সমাদরে জাহাজে তুলে নিলো তারা। আলব্যাট্রসদের আশাও পূর্ণ এখন। নাবিকরা আনন্দিত যেন আকাশের চাঁদ তাদের হাতে। ভোর থেকে নিখোঁজ রাজকন্যা উদ্ধার হয়েছে। রাজ্যের সবাই হন্যে হয়ে খুঁজছে তাকে।
রংবেরঙের পাল তোলা কাঠের মস্ত জাহাজটা চলতে শুরু করে। গম্ভীর ভেঁপু বাজিয়ে দ্রুত গতিতে সামনে এগুচ্ছে। ওদের সমুদ্র বন্ধু আলব্যাট্রসরাও জাহাজের পাশে থেকে সমানতালে উড়ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়