মুন্সীগঞ্জে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রতিবন্ধী বৃদ্ধের মৃত্যু

আগের সংবাদ

ব্যাংকের দোষেই বাড়ছে খেলাপি : খেলাপি ঋণের জন্য মূলত দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মন্দ ব্যবস্থাপক, এমডি ও চেয়ারম্যানরা

পরের সংবাদ

শেখ রাসেলের যা কিছু প্রিয়

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ রাসেলের প্রিয় খাবার ছিল- পোলাও, ডিমপোচ, চকোলেট, সমুসা, কোক ইত্যাদি। মজা করে চিনি মিশিয়ে কাঁচা ঢেঁড়সও খেত সে।
শুধু খাবারে নয়, ছোট্ট রাসেল পোশাক পছন্দের ক্ষেত্রেও খুব সচেতন ছিল। বাবার মতো প্রিন্স কোট, সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি ও মুজিব কোট পরতে পছন্দ করত।
সবকিছুর মতো প্রিয় ছিল মায়ের কিনে দেয়া সাইকেলটিও। পরিবারের সদস্যদের মতোই প্রিয় ছিল সাইকেলটি। বিকালে সাইকেলে চড়ে লেকের পূর্বপাড়ে চক্কর মারত রাসেল। ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পূর্বপ্রান্তের সাদা একটি দালান পর্যন্ত সাইকেলারোহী রাসেলের চলার সীমানা। ৩২ নম্বরের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে মা ফজিলাতুন নেছা তীক্ষèদৃষ্টি রাখতেন সাইকেল প্রিয় রাসেলের সাইকেল ভ্রমণের দিকে।
ভাগ্নে সজীব ওয়াজেদ জয় ছিল শেখ রাসেলের প্রিয় সঙ্গী। কাছে পেলেই ভাগ্নের সঙ্গে খুনসুটি করত রাসেল। ভাগ্নের সঙ্গে ভাগাভাগি করে চকোলেট খেত, তার সঙ্গে খেলা করত।
আনন্দ ভাগ করে নেয়ার উদারতায় রাসেল তার ক্লাসের বন্ধুদের খুব প্রিয় ছিল। শেখ রাসেল তার বন্ধুদের খাবার, বই ও খেলারসামগ্রী উপহার দিতে পছন্দ করত। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলে নয়, টুঙ্গিপাড়ায়ও তার অনেক বন্ধু ছিল।
শেখ হাসিনা স্মৃতিচারণ করেন- ‘টুঙ্গিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে রাসেলের খেলাধুলার অনেক সাথি ছিল। বাড়ি গেলে গ্রামের ছোট অনেক বাচ্চা জড়ো করত। তাদের জন্য ডামি বন্দুক বানিয়ে দিয়েছিল। সেই বন্দুক হাতে তাদের প্যারেড করাত। প্রত্যেকের জন্য খাবার কিনে নিয়ে যেত। রাসেলের খুদে বাহিনীর জন্য জামা-কাপড় ঢাকা থেকেই কিনে নিয়ে যাওয়া হতো।’
শেখ রাসেল ছিল বন্ধুবৎসল। পিতার মতো গরিবদের জন্য তার ছিল অপরিসীম দরদ, মমতা। টুঙ্গিপাড়ায় গেলে গ্রামের ছেলেদের জন্য সে যেমন জামা-কাপড়, উপহার নিয়ে যেত, সবার সঙ্গে মিশত; তেমনি বাড়ির বাবুর্চি, দারোয়ান, কাজের লোকদের সঙ্গেও মিশতে পছন্দ করত। অবশ্য পারিবারিক শিক্ষাও তেমনই ছিল।
শেখ হাসিনা তার স্মৃতিচারণে লিখেছেন, ‘রাসেল এমনিতে খাবার খেতে চাইতো না, কিন্তু রান্নাঘরে বাবুর্চি, দারোয়ান, কাজের বুয়ারা ফুল আঁকা টিনের থালায় করে যখন সবাই খেতো তখন ওদের সঙ্গে বসত। রান্নাঘরে পিঁড়ি পেতে বসে লাল ফুল আঁকা থালায় করে কাজের লোকদের সাথে ভাত খেতে পছন্দ করত।’
মাছ ধরতে পছন্দ করত রাসেল। টুঙ্গিপাড়ায় গেলে পুকুরে মাছ ধরত। মজার ব্যাপার হলো- মাছ ধরে আবার ছেড়ে দিত রাসেল! গণভবনে মাছগুলোকে নিয়মিত খাবার খাওয়াত সে।
বাসায় কবুতরের ঘর ছিল, অনেক কবুতর ছিল। মা শেখ ফজিলাতুন নেছা ভোরে উঠে রাসেলকে কোলে নিয়ে কবুতরকে খাবার দিতেন। হাঁটতে শেখার পর রাসেল নিজেই কবুতরের পেছনে ছুটত, নিজ হাতে খাবার দিত। কিন্তু কবুতরের মাংস কখনো খেত না! এ প্রসঙ্গে শেখ রাসেলের বড় বোন শেখ হাসিনা এক লেখায় স্মৃতিচারণ করেন- ‘আমাদের গ্রামের বাড়িতেও কবুতর ছিল। সবাই কবুতরের মাংস খেত। রাসেলকে কবুতরের মাংস দেয়া হলে খেত না। ওকে ওই মাংস খাওয়াতে আমরা অনেকভাবে চেষ্টা করেছি। ওর মুখের কাছে নিয়ে গেছি, মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ওই বয়সে ও কী করে বুঝতে পারতো যে, ওকে পালিত কবুতরের মাংস দেয়া হয়েছে!’
আর প্রিয় ছিল- বাড়ির ‘টমি’ নামের পোষা কুকুরটি। টমির সঙ্গে রাসেলের খুব বন্ধুত্ব ছিল। টমির সঙ্গে খেলা করত। একদিন খেলার সময় টমি জোরে ঘেউ ঘেউ করে ডেকে উঠলে, রাসেল ভয় পেয়ে যায়। কাঁদতে কাঁদতে ছোট আপাকে বলে, ‘টমি বকা দিচ্ছে।’ টমিকে নিজের খাবারের ভাগও দিত রাসেল। আর সেই টমি তাকে বকা দিয়েছে, এটা সে মেনে নিতে পারেনি।
শেখ রাসেল ছোটবেলা থেকেই বেশ সাবধানি, কিন্তু সাহসী ছিল। পিঁপড়া ধরত। একদিন বড় এক কালো পিঁপড়া ধরতে গিয়ে কামড় খেয়ে আঙুল ফুলে যাওয়ার পর আর পিঁপড়া ধরতে যায়নি। কামড়ে দেয়া ওই পিঁপড়ার নাম দিয়েছিল- ‘ভুট্টো’।
এই বন্ধুবৎসল, মিশুক, মানবিক, দুরন্ত শেখ রাসেলের জন্মদিন ছিল গতকাল, ১৮ অক্টোবর। ১৯৬৪ সালের এক হেমন্তের মৃদু শিশির-ভেজা রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল জন্মগ্রহণ করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়