হাছান মাহমুদ : সেই নৈরাজ্যের পথেই হাঁটছে বিএনপি

আগের সংবাদ

ভূরাজনীতির ফাঁদে প্রত্যাবাসন! রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এডিটরস গিল্ডের গোলটেবিল বৈঠক : ৫ বছরে সংকট আরো বেড়েছে

পরের সংবাদ

ইআরডির প্রতিবেদন : বৈদেশিক ঋণ ছাড়ে ভাটা

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২২ , ১২:৫৫ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : অনুদান বাড়লেও কমেছে বৈদেশিক ঋণ ছাড়ের পরিমাণ। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে মোট ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের ঋণসহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-আগস্টে ১১৪ কোটি ২৯ লাখ (১.১৪ বিলিয়ন) ডলারের ঋণ ছাড় করেছিল দাতারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
অথচ গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় বিদেশি ঋণপ্রবাহের উল্লম্ফন নিয়ে শুরু হয়েছিল চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছর। প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ৪৯ কোটি ডলারের বিদেশি ঋণসহায়তা এসেছিল। গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে যা ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি। তবে দ্বিতীয় মাস আগস্টে তা নিম্নমুখী হয়ে গেছে। এই মাসে ৩৭ কোটি ৬৩ লাখ লাখ ডলারের ঋণ ছাড় করেছে দাতারা, যা আগের মাস জুলাইয়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ কম।
করোনাকাল-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে গত অর্থবছরে কম সুদের বিদেশি ঋণ প্রাপ্তিতে রেকর্ড গড়েছিল বাংলাদেশ। ওই অর্থবছরে ১ হাজার কোটি (১০ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিদেশি ঋণ ছাড় করেছিল দাতারা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক অর্থবছরে এত বেশি ঋণসহায়তা পায়নি বাংলাদেশ।
ইআরডির প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দাতাদের কাছ থেকে যে ৮৬ কোটি ৪৩ লাখ ডলারের ঋণসহায়তা পাওয়া গেছে, এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য এসেছে ৮৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আর অনুদান পাওয়া গেছে ৩ কোটি ১৪ লাখ ডলার। গত বছরের একই সময়ে প্রকল্প সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ১১০ কোটি ৮৭ লাখ (১.১০ বিলিয়ন) ডলার। অনুদান এসেছিল ৩ কোটি ৪২ লাখ ডলার।
ইআরডির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ৭৯৫ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার (৭.৯৬ বিলিয়ন) ডলার ঋণসহায়তা পেয়েছিল বাংলাদেশ। তার আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে এসেছিল ৭৩৮ কোটি (৭.৩৮ বিলিয়ন) ডলার।
বাংলাদেশে বিদেশি ঋণ বাড়তে থাকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে। ওই বছরই এক লাফে অর্থছাড় ৩০০ কোটি থেকে ৬৩৭ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। তারপর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আসে ৬৫৪ কোটি ডলার।
হঠাৎ বিদেশি ঋণ কমার কারণ সম্পর্কে অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা মহামারি করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থার কাছ থেকে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি ঋণসহায়তা পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তো আর কোভিডের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতিতে অন্যরাও আগের চেয়ে কম ঋণ নিচ্ছে। সে কারণেই বিদেশি ঋণ কমছে।
তিনি বলেন, এই কঠিন সময়ে আমাদের দেখেশুনে ঋণ নিতে হবে। কম সুদের ঋণ ছাড়া অন্য ঋণ নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, আমাদের বিদেশি ঋণের পরিমাণ এখন ৯৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। চিন্তার বিষয় হচ্ছে, এই ঋণ তো আমরা প্রতি ডলার ৮৪/৮৫ টাকা হিসাবে পেয়েছি। এখন ডলারের দর ১০৮ টাকা ১১০ টাকা। ডলারের বাজার যদি স্বাভাবিক না হয়, দাম যদি না কমে, তাহলে আমাদের ঋণের বোঝা কিন্তু অনেক বেড়ে যাবে। জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ছাড় করেছে জাপান, ৩২ কোটি ৯১ লাখ ডলার। চীনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি দিয়েছে ১৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। বিশ্বব্যাংক ছাড় করেছে ৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার। ভারত দিয়েছে ৭ কোটি ১৯ লাখ ডলার। এছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে পাওয়া গেছে ৪১ লাখ ১০ হাজার ডলার। এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) দিয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার।
তবে ইআরডির তথ্য বলছে, জুলাই-আগস্ট সময়ে দাতাদের ঋণসহায়তার প্রতিশ্রæতি বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের এই দুই মাসে ৭ কোটি ৩৩ লাখ ২২ হাজার ডলারের ঋণসহায়তার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিল দাতারা। এই বছরের জুলাই-আগস্টে প্রতিশ্রæতি দিয়েছে ৩০ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ডলার। এ হিসাবে প্রতিশ্রæতি বেড়েছে ৩ গুণ।
এদিকে জুলাই-আগস্ট সময়ে আগে নেয়া ঋণের আসল ও সুদ বাবদ ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে সরকার। গত বছরের একই সময়ে সুদ-আসল বাবদ ২৯ কোটি ৮২ লাখ ২০ হাজার ডলার শোধ করা হয়েছিল। এ হিসাবে এই দুই মাসে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধ বাবদ প্রায় ৩ শতাংশ বেশি অর্থ শোধ করতে হয়েছে সরকারকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়