ফুটপাত থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার

আগের সংবাদ

জ্বালানি তেলের দাম কমল : কেরোসিন ডিজেল পেট্রোল অকটেনের দাম কমেছে লিটারে ৫ টাকা, প্রজ্ঞাপন জারি

পরের সংবাদ

প্রযত্নে মেঘওয়ালা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বারান্দার রেলিংয়ে রাখা কফির মগ থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ওপরের দিকে ওঠে যাচ্ছে। চোখের সামনে বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। আষাঢ়ের জলে সদ্য স্নান শেষ করেছে প্রকৃতি। বৃষ্টির জলে মুছে গেছে পাতায় লেগে থাকা ধুলোর দাগ। বৃষ্টির পর ঝকঝকে ছবির মতো লাগছে চারপাশ। মাথার ওপর স্বচ্ছ আয়নার মতো উপুড় হয়ে আছে সুনীল আকাশ। ঈশানকোণে সাদা মেঘের জমাট আড্ডা। সদ্য বৃষ্টির জল আর তপ্ত মাটির ক্ষণিকের মিলনে অনুর নাকে এসে লুটোপুটি খায় সোঁদামাটির মাতাল গন্ধ। বৃষ্টির পরের এই মুহূর্তটা অনুর কাছে ইন্দ্রপুরীর প্রিয় কোনো গল্পের মতই প্রাণবন্ত ও শিহরণ জাগানিয়া মনে হয়।
রোজ সকালে অনু ঘুম থেকে ওঠে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়। ঝিরিঝিরি বাতাসের সাদর সম্ভাষণে শুরু করে আরেকটা নতুন দিন। সকালের সোনালি রোদ্দুর অনুর গালে এসে খুনসুটি করে। পুলকিত হয় অনু। কফি হাতে এসে দক্ষিণমুখী এই বারান্দায় এসে বেলিফুলের সঙ্গে কথা বলে। কয়েকটা ক্যাকটাস সারা রাতে জমানো খুচরো গল্প রসিয়ে রসিয়ে তাকে বলে। লাভ বার্ড দুটোর দুই জোড়া চোখ অনুর জন্য প্রতীক্ষায় থাকে। অনু এসে তাদের জল খাবার দেয়। মাঝে মাঝে লাভ বার্ড দুটোকে নিজের লেখা নতুন কবিতা আবৃত্তি করে শোনায় অনু। ভালো শ্রোতার মতই কান পেতে শোনে পাখি দুটো। এগুলো অনুর যাপিত জীবনের ফর্দ।
লাভ বার্ড দুটো ছাড়াও অনুর পরিবারে আছেন আরো দুটো প্রাণ। মা ও ছোটভাই রাফিন। বাবা গত হয়েছেন আট বছর তিন মাস হয়। স্কুল শিক্ষিকা মায়ের কাঁচা-মিঠা আদরে শাসনে তার বড় হওয়া। নিয়মের শিকলে বন্দি তার শৈশব ও কৈশোরের উচ্ছ¡লতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ষষ্ঠ সেমিস্টারে পড়া অনুর ভালো কোনো বন্ধুও নেই। ক্লাস শেষ করেই আবার ভার্সিটির লাল বাসে চড়ে বাসায় ফিরতে হয় তাকে। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা কিংবা ঘোরাঘুরি করা তার আর হয়ে ওঠে না। তাই তো অনুর বন্ধুর তালিকায় তেমন কেউ নেই বললেই চলে। রাত জেগে কবিতা লেখা ও গুনগুন করে আবৃত্তি করা অনুর এক ধরনের নেশা। মাঝে মাঝে অবশ্য সে ফেসবুকে আসে। ল্যান্ডস্ক্যাপ বা আকাশের ছবি আর নিজের লেখা কবিতার কয়েকটা লাইন পোস্ট করে। অনুর জীবনে কাছের বন্ধু বলতেই কবিতা, দুটো লাভ বার্ড, বারান্দার ফুলগাছ এবং ওই খোলা আকাশ।

২.
কলিংবেল বাজছে। বাসায় কেউ নেই। তাই অগত্যা বাধ্য হয়েই অনুকেই দরোজা খুলতে হয়েছে। একটা পার্সেল এগিয়ে দিয়ে লোকটা বলল- শুভ দুপুর, ম্যাম। আপনার একটা পার্সেল আছে।
– আমার পার্সেল! আমি তো কোনো কিছু অর্ডার করিনি।
পার্সেল বক্সের ওপর লেখা এড্রেস আবারো ভালো করে খেয়াল করে অনু। ঠিকই তো আছে। এমনকি তার মোবাইল নম্বরও ঠিকঠাক আছে। অথচ এই নম্বরটা মা, ডিপার্টমেন্টের রুমিন ও সারাহ ছাড়া কেউ জানার কথা না। তাহলে কে পার্সেলটা পাঠাল? অনুর মনে শত প্রশ্নের সুনামি। কিছু বলার আগেই পার্সেল রেখে লোকটা উধাও হয়ে গেল।
নিজের রুমে বসে পার্সেলটা আনপ্যাকড করে অনু। কী অদ্ভুত! পার্সলটা খুলে অনু পুরোপুরি তাজ্জব বনে গেল। সাদা সুতি শাড়ির আঁচলে শিল্পীর তুলির নীল আঁচড়। তার ওপর ছোপ ছোপ সাদা মেঘের গল্প। অনেকটা কবিতার মতই। চিরায়ত গ্রামীণ কাটিংয়ে বানানো সাদা ব্লাউজ। কাঠের গলার মালা, কানের দুলেও একটা আস্ত নীল আকাশ এবং সাদা মেঘেদের হৈচৈ। খাঁচ কাটা চুড়িতে আকাশ আর মেঘেদের দারুণ ভাব জমেছে। চোখে ফাগুন ডাকা রহস্যময় হ্যান্ডমেইড কার্ড। গাঢ় নীল কাপড়ে ঢাকা কভার। ভেতরের একপাশে সুনীল আকাশের হাসি আর তার ওপর আঠাতে জমা কয়েক টুকরো তুলোর মেঘ হওয়ার অভিপ্রায়। অনুর মাথাটা খুব ঝিম মেরেছে। সবকিছু স্বপ্নের মতই মনে হচ্ছে তার কাছে। এটা কীভাবে সম্ভব! গতকাল সকালে মনের খেয়ালে অনু মেঘশাড়ি নিয়ে মনের গহিনের সুপ্ত কথাগুলো লিখেছে ফেসবুকে। আর সেই পোস্ট দেখেই অজ্ঞাত কেউ হুবহু মেঘশাড়িটা এঁকে পাঠিয়েছে। কে সেইজন? অনুর চোখ খোঁজে আশপাশে। অতীত এবং বর্তমানের কোথাও এমন কেউ নেই তার। কমপ্লিটলি অনু সারপ্রাইজড। এবার কার্ডের অন্যপাশে লেখা পঙ্ক্তিগুলো পড়ে আরো বিস্মিত হয় অনু।

অনু,
আপনার আকাশে আমার কিছু মেঘ পাঠালাম। আপনার মস্ত আকাশে আমার মেঘেদের কি একটুকুন ঠাঁই হবে? মেঘমালাকে পরে বিকেলে ছাদে আসলে আপনাকে বনলতার চেয়েও বেশি কিছু মনে হবে। অবশ্য আপনার ডান কানে একটা রক্তজবা গোঁজা থাকলে আপনি ক্লিওপেট্রাকে হার মানাবেন- নিশ্চিত। বিশ্বাস করুন, আজকের বিকেলটা মর্ত্যলোকের সবচেয়ে সুন্দরতম হবে।
এই শুনুন, বিকেলে ছাদে আসার সময় মনে করে লাভ বার্ড দুটোকে আপনার সঙ্গে করে নিয়ে আসবেন। বিকেলের শেষ আলোয় ওদেরকেও একটা আকাশ দেবেন। ওরা ওড়ুক আকাশে। মায়া ও ভালোবাসায় খুঁজে পাক আপন নীড়। ভালোবাসা জানবেন ঠোঁটে একজীবনের ভুবনডাঙ্গার হাসি।

প্রযতেœ
মেঘওয়ালা

শেষ বিকেলের আলোয় ছাদে ওঠেছে অনু। অজ্ঞাতনামা সেই চিঠির আর্তির মতো করে সেজেছে সে। ছাদে ওঠেই চারপাশে যেন কাউকে খুঁজছে অনুর মায়াবী চোখ। নাহ্। কোথাও কেউ নেই। অজ্ঞাতনামা কিছু মেঘ আলিঙ্গন করে আছে অনুর শরীর। তার মনের গোপন কুঠুরিতে পুলকিত সুখের উজান আস্ফালন। কানে গোঁজা রক্তজবার টুকটুকে হাসি। রহস্যময় এমন বিকেলে ফুরফুরে বাতাসের কাছে অনু খোলা চিঠি লেখে- ‘ওহে দুষ্টু বাতাস, তারে কইও গিয়া। আমি মেঘকে ছুঁইতে গিয়া একটা আকাশ খুঁজে পেয়েছি।’
শূন্য খাঁচাটা বাম হাতে ধরে আছে অনু। লাভ বার্ড দুটো সুনীল আকাশে এলোমেলো উড়ছে। অনু তাকিয়ে আছে উড়ন্ত সেই পাখিদের ডানার দিকে। পাখি দু’টোর মতো কি অনুও আকাশ ছুঁতে চাচ্ছে?

রফিকুল নাজিম : মাধবপুর, হবিগঞ্জ

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়