বুটেক্স ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

আগের সংবাদ

কাতারকে অর্থনৈতিক অঞ্চলে জমি দেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর

পরের সংবাদ

কালকূট

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আসছে শুক্রবার আমার জন্মদিন। অন্যান্যবারের মতো এবার আমার জন্মদিনকে ঘিরে পরিবারের কারো মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তার অবশ্য কারণও আছে। আমি এখন পরিবারের বোঝা অনেকটা। মাত্র বাইশ বছর বয়স আমার। এই বয়সে প্রবীণদের মতো আমার তরুণ শরীরে দুনিয়ার রোগ বাসা বুনেছে। হার্ট, প্রেশার, কোলেস্টেরল, হাঁপানির পর সর্বশেষ যোগ হয়েছে ডায়াবেটিস। অল্প বয়সে এসব জটিল রোগের উৎপত্তি দেখে আমার বাবা-মা যতখানি হতাশ, ঠিক ততখানি বিরক্ত আমার চিকিৎসার পেছনে মাস শেষে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে। বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন সেও বছর তিনেক হবে। পরিবারের উপার্জনকারী বলতে একমাত্র নাসির ভাই-ই ভরসা। বেসরকারি চাকরি করেন তিনি। বেতন কম। সেই কম বেতনের একাংশ চলে যায় আমার চিকিৎসার খরচে। অথচ এই বয়সে আমারও রোজগার করার কথা।

২.
আমাদের পরিবারে একটি খারাপ খবর এলো। চিকিৎসা পরীক্ষায় ধরা পড়ল নাসির ভাইয়ের দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে গেছে। আমরা অকূল সাগরে পড়লাম। নাসির ভাইয়ের কিছু হয়ে গেলে ভিক্ষা করা ছাড়া আমাদের আর কোনো পথ থাকবে না। ডাক্তার জানালেন, অন্তত একটি কিডনি হলেও নাসির ভাই বেঁচে থাকবেন। কিন্তু কিডনির দাম শুনে বাবার মাথায় হাত। এত টাকা পাবেন কোথায়! শেষে বাবা সিদ্ধান্ত নিলেন বাড়ির পাশের ধানের জমিনটি বিক্রি করে তার বড় ছেলের জন্য কিডনি কিনবেন। কিন্তু নাসির ভাই সাফ জানালেন- ভুলেও জমি বিক্রি করা যাবে না।

৩.
বাবা হন্য হয়ে আত্মীয়স্বজনের কাছে টাকা ধার চাইতে লাগলেন। কিন্তু কেউ ধার দিতে রাজি নয়। বড় ফুপা মাকে বললেন, ‘আপনার ছোট ছেলে তো কাজের না এখন। এই বয়সে এত রোগ। ওর একটি কিডনি নিলেই তো পারেন।’
উপায় না পেয়ে মা আমার কাছে এলেন একটি কিডনির আবদার নিয়ে। মাকে খুশি করে বললাম, ‘আমি ভাইয়াকে অবশ্যই কিডনি দেব।’ মা আমাকে জড়িয়ে ধরে অঘোরে কাঁদলেন। তবুও বাবা টাকা ধারের আশায় এর দুয়ারে ওর দুয়ারে দৌড়াচ্ছেন আর প্রতিবার ব্যর্থ হচ্ছেন। কেউ টাকা ধার দিতে রাজি নয়।

৪.
নাসির ভাইকে কিডনি দিতে হলেও মনে মনে আমি ভয়ে তটস্থ। অপারেশন করে আমার শরীর থেকে কিডনি বের করতে হবে। এটা ভাবতে গিয়ে শরীর হিম হয়ে এলো। হাসপাতাল, অপারেশন, কাটা-ছেঁড়া- এগুলোকে চিরকাল ভয় আমার।
ডাক্তার জানালেন রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। দ্রুত শরীরে কিডনি স্থাপন করলেই ভালো।
আজ আমাকে হাসপাতালে আনা হলো। বিকালে অপারেশন। আমার একটি কিডনি আজ নাসির ভাইয়ের শরীরে স্থাপন করাবেন যে ডাক্তার, সে ডাক্তার আমার সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে বললেন, ‘তুমি খুব মহৎ ছেলে। ভাইকে কিডনি দিচ্ছো।’ ডাক্তারের কথায় আমার কোনো ভাবান্তর হলো না। ভয়ে আমার ভেতরটা জমে যাচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে আমাকে নিয়ে গেলে ততক্ষণে হয়তো ভয়ে মরেই যাব। ছুরি, কাঁচি, সুই! না না! ওসবের কথা ভাবতে চাই না।
একটু পর আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হবে। পাশে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা, মা আর নাসির ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু শুভ ভাই। মায়ের জলে ভেজা চোখ। শুভ ভাইয়ের বিষণ্ন মুখ। বাবার আহত চোখ আমাকে দেখছে আর ঠোঁট কাঁপছে। মা আমাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কাঁদলেন।
ডাক্তার এসেছেন। এখনই আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবেন। হঠাৎ বাবা উচ্চস্বরে বলতে লাগলেন, ‘ডাক্তার বাবু, আমার এই ছেলেটা অসুস্থ। ওর কিডনি নেয়ার দরকার নেই। আমিই দেব কিডনি।’
আমরা স্তব্দ হয়ে গেলাম বাবার কথায়। বাবা হয়তো বুঝতে পেরেছেন আমার অপারেশন ভীতির কথা! সেজন্য সন্তানের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা তিনি এই হাসপাতালে বিলিয়ে দিলেন।
শেষ পর্যন্ত বাবাই নাসির ভাইকে একটি কিডনি দিলেন। এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচার আশা নতুন করে দেখতে শুরু করলেন নাসির ভাই।

জোবায়ের রাজু
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়