পরীমনির ধর্ষণচেষ্টা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি

আগের সংবাদ

অটোরিকশায় বিদ্যুতের বড় অপচয় : প্যাডেলচালিত রিকশা বিলুপ্তির পথে > পুলিশ আটক করলেও ছাড়া পায় > বিকল্প জ্বালানি চায় ক্যাব

পরের সংবাদ

রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে চমকপ্রদ ১০ তথ্য

প্রকাশিত: আগস্ট ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আর দুদিন পরই ২২ শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের
প্রয়াণ দিবস। পাঠ্যবইয়ে পড়ে পড়ে তোমরা নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছ। তারপরও জানার তো আর
শেষ নেই। আজ তোমাদের জানাব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সম্পর্কে চমকপ্রদ ১০টি তথ্য।

রবীন্দ্রনাথের রুটিন

দিন শুরু হতো ভোর ৪টায়। স্নান (গোসল) করে পূজা করতেন। তারপর থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। সকাল ৭টায় নাস্তা সেরে আবার লেখা। ফাঁকে ফাঁকে চলত চা বা কফি পান। বেলা ১১টা পর্যন্ত লিখে আবার স্নান করতেন। তারপর দুপুরের খাওয়া। দুপুরে খাওয়ার পর বিশ্রাম বা ঘুমের অভ্যাস তার ছিল না। পত্রিকা বা বইয়ের পাতা উল্টিয়ে সময় কাটিয়ে দিতেন। বিকাল ৪টায় চা, সঙ্গে নোনতা কিছু। রাতের খাবার খেতেন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে। এ সময় তিনি ইংরেজি খাবার পছন্দ করতেন। অথচ দুপুরে খেতেন বাঙালি খাবার। রাতে খাবার পর একটানা রাত ১২টা পর্যন্ত লিখতেন বা পড়তেন। এই ছিল তার প্রতিদিনের রুটিন।

রবীন্দ্রনাথের পোশাক

বাড়িতে পরতেন গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা আর পায়জামা। উপাসনা বা সভা সমিতিতে যাওয়ার সময় জোব্বা ছাড়াও সাদা ধুতি, জামা ও চাদর ব্যবহার করতেন। ঋতু উৎসবে ঋতু অনুযায়ী নানা রঙের রেশমী উত্তরীয় নেয়া ছিল তার শখ। যেমন বর্ষায় কালো বা লাল, শরতে সোনালি, বসন্তে বাসন্তী। আবার জোব্বার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে উত্তরীয় নিতেন অনেক সময়।

বৃক্ষপ্রেমী রবীন্দ্রনাথ

বৃক্ষপ্রেমী রবীন্দ্রনাথের গানে, কবিতায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য উদ্ভিদ আর ফুলের নাম। শুধু কাব্যেই উল্লেখ রয়েছে ১০৮ গাছ ও ফুলের নাম। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি ফুলের বাংলা নাম তিনি দিয়েছিলেন। অগ্নিশিখা, তারাঝরা, নীলমণিলতা, বনপুলক, বাসন্তী এগুলো তারই দেয়া নাম।

রবীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম

আমরা অনেকেই জানি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাঁচটি ছদ্মনাম ছিল। সেগুলো হল যথাক্রমে- ভানুসিংহ ঠাকুর, আন্নাকালী পাকড়াশী, অকপটচন্দ্র লস্কর, দিকশূন্য ভট্টাচার্য এবং ষষ্ঠীচরণ দেব শর্মা। কিন্তু এছাড়াও অনেকগুলো ছদ্মনাম তিনি ব্যবহার করতেন যা অনেকের অজানা, তা হলো- নবীন কিশোর শর্মণ, বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, শ্রীমতী কনিষ্ঠা, শ্রীমতী মধ্যমা। ১৯২৪ সালে ৮ মে কবিগুরু তার ৬৩তম জন্মদিন পালন করেন চীনে। সেজন্য সেই দেশের সরকার তার নাম দেয় ‘চু চেন তাং’।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ছিল। নিজের জমিদারির প্রজাদের তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা দিয়েছেন। নিজেও হোমিওপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন। ‘হেলথ কো-অপারেটিভ’ তৈরি করে চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা ভারতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম চালু করেন।

কৃষি ব্যাংক প্রচলন

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও বন্ধুপুত্র সন্তোষ মজুমদারকে আমেরিকার ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য। তারা ফিরে এসে কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও নওগাঁর পতিসরে ৮০ বিঘা জমি নিয়ে আদর্শ কৃষিক্ষেত্র তৈরি করেন। পাশাপাশি তৈরি করা হয় ল্যাবরেটরি। ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘পতিসর কৃষি ব্যাংক’ চালু করেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, নোবেল প্রাইজের টাকা দিয়ে তিনি কৃষকদের সুবিধার কথা ভেবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এখান থেকে কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেয়া হতো। এই ব্যাংক চালু ছিল প্রায় ২০ বছর।

কবি রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। তার প্রথম বই ‘কবি কাহিনী’ প্রকাশিত হয় কবির অজান্তে ১৮৭৮ সালের ৫ নভেম্বর। রবীন্দ্রনাথ তখন বিলেতে। কবিবন্ধু প্রবোধচন্দ্র ঘোষ বইটি প্রকাশ করে কবির কাছে পাঠিয়ে দেন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কবিগুরুর মোট ৩১১টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বভারতী গ্রন্থবিভাগ থেকে প্রকাশিত ৮৮টি গ্রন্থ। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ একবার হিসাব করে দেখেছিলেন, গল্পগুচ্ছসহ রবীন্দ্রনাথের ১৮টি গ্রন্থে মোট ৮,৬৩,৩১০টি শব্দ আছে। তার মধ্যে ‘আমি’ আছে ৭,৭৩৭ বার এবং ‘তুমি’ আছে ৩,১৪৭ বার। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৭ সালে ১৬ বছর বয়সে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়।

অভিনেতা রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ প্রথম অভিনয় করেন ১৮৭৭ সালে। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘এমন কর্ম আর করব না’ নাটকে। নাটকে তিনি অলীকবাবুর ভূমিকায় মঞ্চে উঠেছিলেন। তখন তার বয়স ১৬ বছর। নিজের লেখা নাটকে রবীন্দ্রনাথ প্রথম অভিনয় করেন ‘বাল্মিকী প্রতিভা’য় বাল্মিকীর ভূমিকায়। নাটকটি মঞ্চস্থ হয় জোড়াসাঁকোয় ১৮৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি। অভিনয়ের জন্যে রবীন্দ্রনাথকে মঞ্চে মোট ১০১ বার উঠতে হয়েছিল। তার অভিনয় দেখে নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথই দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।’

চিত্রকর রবীন্দ্রনাথ

শুরুতে বিক্ষিপ্তভাবে আঁকলেও রবীন্দ্রনাথ নিয়মিত ছবি আঁকতে শুরু করেন ১৯২৮ সালে। তখন তার বয়স ৬৭ বছর। ১৯০১ থেকে ১৯৪০ এ সময় তিনি এঁকেছিলেন প্রায় ৩ হাজার ছবি। শান্তিনিকেতনের বাইরে তার ছবির প্রথম প্রদর্শনী হয় ফ্রান্সের প্যারিসে ১৯৩০ সালে। প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিলেন ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো। দেশ বিদেশের বহু শিল্পী রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি এঁকেছেন। রবীন্দ্রনাথের প্রথম ছবি আঁকেন তার দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। সময়টা তখন ১৮৮১ সাল।

জাতীয় সংগীত রচনা

ভারতের ‘জন গণ মন অধিনায়ক জয় হে’ এবং বাংলাদেশের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’- এ দুটি জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথের লেখা। এই ঘটনা বিশ্ব সাহিত্যে প্রায় বিরল ঘটনা। কিন্তু মজার বিষয় হলো, ভারতের অপর এক প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীতও পরোক্ষভাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরই লেখা। শান্তিনিকেতনে রবি ঠাকুরের শিষ্য আনন্দ সিমারানকুল (যিনি শ্রীলঙ্কার নাগরিক) রবিঠাকুরের গীতবিতানের একটি গানের অনুকরণেই শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত রচনা করেন, যা হলো- ‘মাতা শ্রীলঙ্কা, নম নম নম নম মাতা, সুন্দর শ্রী বরনী।’

:: আহমেদ শাকিল

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়