ডি-৮ সিসিআই বিজনেস ফোরাম এন্ড এক্সপো শুরু আজ

আগের সংবাদ

জ্বালানি নিয়ে হুলুস্থুল : এক মাসের তেল মজুত, অর্ডার ৬ মাসের > রিজার্ভ কমায় আমাদের ঝুঁকি নেই

পরের সংবাদ

দরদাম

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রিদিমা প্রশ্ন করতে খুব ভালোবাসে। অদ্ভুত আর মজার প্রশ্ন করে সে। এই যেমন সেদিনের ঘটনা। হঠাৎ বারান্দা থেকে এসে ডাকল, বাবা।
– হুম।
– তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
– বলো।
– আমরা কাঠবিড়ালী বলি। কাঠবিড়াল বলি না কেন?
এ প্রশ্নের কী উত্তর দেবো আমি। বেশ মুশকিলে পড়ে গেলাম। বললাম, ওদের ওভাবেই ডাকা হয় আর কি।
– এটা কোনো কথা হলো বাবা? একদম বোকার মতো কথা। রিদিমা একটু বিরক্ত হলো। তারপর ভেংচি কেটে বলল, ওদের ওভাবেই ডাকা হয় আর কি!
– বিড়ালদের কিন্তু শুধু বিড়াল ডাকা হয়। আমরা বিড়ালী বলি না।
– তোমার এই কথায় খানিকটা যুক্তি আছে। রিদিমা হেসে বলল।
তারপর আবার বারান্দার দিকে চলে গেল।
পত্রিকা পড়ছিলাম। সেটা সোফার ওপর রেখে বারান্দায় গেলাম। দেখি, সড়কের ওপারের আমগাছে কয়েকটা কাঠবিড়ালী খেলা করছে। রিদিমা সেদিকে তাকিয়ে আছে। ওদের কাণ্ড দেখে আপনমনে হাসছে।
আরেক দিন রিদিমা বলল, তুমি একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?
– আগে প্রশ্নটা শুনি।
– আটানব্বই টাকা কেজি হলে দশ কেজির দাম কত?
– ৯৮০ টাকা।
– হয়নি। আবার চেষ্টা করো।
– চেষ্টার কী আছে। উত্তর তো বলেছি। ৯৮০ টাকা।
– ভুল উত্তর দিয়েছো বাবা।
– তাহলে উত্তর কী হবে?
– উত্তর হলো ৯০০ টাকা।
– কীভাবে?
– আমি বলেছি আটা নব্বই টাকা হলে দশ কেজির দাম কত? মানে এক কেজি আটার দাম নব্বই টাকা। তাহলে দশ কেজির দাম ৯০০ টাকা। হি-হি-হি।
– তাই তো। আমার হিসাবে ভুল হয়েছে।
– ভাগ্যিশ, তুমি ব্যবসায়ী হওনি। তাহলে ধরা খেতে। হি-হি-হি।
– একদম ঠিক বলেছো সোনামা।
কথায় রিদিমা বেশ পাকা। এই দক্ষতা দিন দিন আরো বাড়ছে। একটা নমুনা শোনালে সেটা ভালো করে বোঝা যাবে।
বৃষ্টি আমার বড়বোনের মেয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। হলে থাকে। একদিন সে ফোন করেছে। রিদিমা দৌড়ে গিয়ে ধরল। মোবাইল ফোনের শব্দটাও বাড়িয়ে দিল। ওদের কথা আমি বেশ শুনতে পাচ্ছি।
– হ্যালো বৃষ্টিদিদি।
– হ্যালো বুনু।
– তুমি কেমন আছো?
– ভালো আছি। তুমি কেমন আছো রিদিমা?
– ভালো আছি। তুমি কি খাচ্ছো?
– হ্যাঁ। ভাবলাম খেতে খেতে তোমার সঙ্গে একটু কথা বলি।
– কেন রান্না ভালো হয়নি?
– ভালোই তো হয়েছে। একথা বলেছো কেন?
– শুনেছি হলের রান্না তত ভালো হয় না। তাই হয়তো ফোন করেছো। যাতে আমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে খেতে একটু ভালো লাগে।
– ওরে দুষ্টু। খুব পাকা কথা শিখেছো।
– বৃষ্টি দিদি একটা কথা বলি।
– বলো। অবশ্যই বলো। তোমার কথা শুনতেই তো ফোন দিয়েছি।
– আমি কিন্তু বলে দিতে পারি তুমি কী দিয়ে খাচ্ছো।
– তাই নাকি! আচ্ছা বলো তো কী দিয়ে খাচ্ছি?
– বলব?
– হ্যাঁ, বলো।
– তুমি আসলে…।
– আমি আসলে কী? বলো, কী দিয়ে খাচ্ছি?
– তুমি আসলে হাত দিয়ে খাচ্ছো। হি-হি-হি।
– কী দুষ্টু! হি-হি-হি।
– বলো, ঠিক বলিনি?
– তুমি একদম ঠিক বলেছো রিদিমা। আমি হাত দিয়েই খাচ্ছি। এখন রাখি। একটু বাদে ক্লাস আছে।
– আচ্ছা, রাখো। বাসায় এসো।
– আচ্ছা, শুক্রবারে আসব। বাই।
– বাই, বৃষ্টি দিদি।
ফোন রেখে রিদিমা বলল, বাবা, তোমাকে তো একটা মজার ঘটনা বলাই হয়নি।
– তাই নাকি। তা ঘটনাটা কী?
– ঘটনাটা বৃষ্টি দিদির মাকে নিয়ে।
– কী ঘটনা, শুনি।
বৃষ্টি দিদির মা সেদিন বাজার থেকে বেছে বড় বড় ডিম কিনে এনেছে। বাসায় আসার পর রাখতে গিয়ে দ্যাখে ডিমগুলো ছোট ছোট। দেখে তো তার মন খারাপ। পরিচিত দোকানদার তাকে এভাবে ঠকাল। তখনই আবার বাজারে যাওয়ার উদ্যোগ নিলো। ঠিক তখনই দেখলো ডিমগুলো আগের মতো বড় বড়ই লাগছে। বলো, কীভাবে?
– তুমিই বলো। কীভাবে?
– ভুলটা ধরা পরল চশমা পরার পর। ডিম কেনার সময় চোখে চশমা ছিলো। বাসায় এসে চশমা খুলে ডিম রাখতে গেল। দেখল ডিম ছোট ছোট। আবার বাইরে বের হওয়ার জন্য যখনই চশমা পরল, তখনই ডিম বড় মনে হলো। মজার না? হি-হি-হি।
রিদিমার খবরদারিও বেড়েছে। খাবার টেবিলে বাঁ হাত দিয়ে প্রায়ই সে আমার চুল এলোমেলো করে দেয়। বলে, বাসার মধ্যে চুল এত সুন্দর থাকার দরকার নেই।
আবার বাইরে বের হতে গেলে সে কিছুটা ধমকের সুরে বলে, বাবা তোমার চুল এলোমেলো কেন? চুল আঁচড়াও।
পার্কে ঘুরতে গেছি। হাঁটা হলো অনেক দিন পর। গাছ দেখা হলো। পাখি চেনা হলো কয়েক প্রজাতির। লেকের দুধারে নতুন ঝুলন্ত সড়ক করা হয়েছে। সেখানে ভিড় বেশি। রেলিংয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালে ভেজা হাওয়া ঝাপ্টা দিয়ে যায়। অনেক ভালো সময় কাটল। রিদিমা খুব খুশি।
সন্ধ্যা নামছে। বাসায় ফিরব। গেটের কাছে খেলনা বিক্রি করছেন এক লোক। ফুঁ দিচ্ছেন, অসংখ্য বাবল ছড়িয়ে পড়ছে। হাওয়ায় ভাসছে। রিদিমা ছুটে গেল। সে বাবলের পেছনে ছুটছে। একটা বাবল ছুঁতে পারলেই খিলখিল করে হাসছে।
খেলনা বিক্রেতাও বেশ মজা পেয়েছেন। বারবার ফুঁ দিচ্ছেন। ছড়িয়ে পড়ছে বাবল। রিদিমা ছুটছে। খিলখিল করে হাসছে।
– কত দাম এগুলোর? খেলনা বিক্রেতাকে জিগ্যেস করলাম।
– তিন রকম আছে স্যার। একেকটার একেক রকম দাম। ৬০ টাকা, ১০০ টাকা আর ১৫০ টাকা।
– একটু কম নেয়া যাবে না?
– না, বাবা এগুলোর এরকমই দাম। রিদিমা এরই মধ্যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।
খেলনা বিক্রেতা হাসছেন। রিদিমা তার দিকে তাকিয়ে বলল, আঙ্কেল, আপনি আমাকে ১০০ টাকার ওটা দেন।
গাড়িতে বসে রিদিমার মা তাকে জিগ্যেস করল, খেলনা কেনার সময় তুমি বাবাকে দরদাম করতে দিলে না কেন?
রিদিমা আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল। তারপর বলল, জানো বাবা, এই লোকটা ডিসেম্বর আর মার্চ মাসে আমাদের স্কুলের সামনে পতাকা বিক্রি করেন। উনার কাছে কি দরদাম করা ঠিক?
খেলনার পাশে আজও ছোট ছোট কিছু লাল-সবুজ পতাকা আমি দেখেছি। রিদিমাকে বললাম, না সোনামা। সবখানে দরদাম করা ঠিক না। তুমি একদম ঠিক করেছো।
রিদিমা মিষ্টি করে হাসল। তার হাসির সঙ্গে আমার মায়ের হাসির অনেক মিল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়