বরিস জনসন : বিয়ের পার্টির পরিকল্পনা বদল

আগের সংবাদ

রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাবের শঙ্কা : ইউরোপে মন্দার প্রভাব পড়বে রপ্তানি আয়ে, বিদেশি ক্রেতা ধরে রাখার তাগিদ অর্থনীতিবিদদের

পরের সংবাদ

বাবা-মেয়ের গল্প

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রাতে খাবার টেবিলে বসেই বাবাকে প্রশ্ন করল টুম্পা, আব্বু, এবার আমার জন্মদিনে কী কী করবে?
বাবা বললেন, তুমিই বলো কী কী করতে চাও।
এক নম্বরে হচ্ছে, বন্ধুদের নিয়ে কেক কাটব।
তারপর? বাবা জিজ্ঞেস করলেন।
দুই নম্বরে, তুমি আমাকে নতুন জামা কিনে দেবে।
তারপর কী?
তিন নম্বরে হলো, ওই দিন বিকালে আমরা ঘুরতে যাব।
হাসতে হাসতে বললেন বাবা, তোমার কি আরো নম্বর বাকি আছে নাকি?
না বাবা। এই তিনটাই।
টেবিলের অন্যপাশ থেকে মা কিছুটা রাগ রাগ গলায় বলে উঠলেন, টুম্পা মামণি, তুমি কিন্তু বড় হচ্ছ। বড়রা জন্মদিন পালন করে না তুমি জানো না?
আমার বন্ধুরা কিন্তু সবাই জন্মদিনে অনেক অনেক মজা করে মামণি।
মা-মেয়ের কথার মাঝখানে বাবা বলে উঠলেন, আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি যা যা বলেছ তাই তাই করা হবে তোমার জন্মদিনে।
থ্যাংক ইউ মাই সুইট আব্বু, বলে দশ বছর বয়সি টুম্পা খাওয়ায় মন দেয়। খাওয়ার পর বাবার সাথে কিছুক্ষণ টিভি দেখে বিছানায় যায় সে। শোয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘুমিয়ে পড়ে টুম্পা।
রাতে হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যায় টুম্পার। না, এমনি এমনি ঘুম ভাঙেনি তার। বাবা-মায়ের আস্তে আস্তে বলা কথায়ই হয়তো কাঁচা ঘুম ভেঙেছে তার।
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে টুম্পা শুনতে পায়, মা বলছেন, টুম্পার সব আবদার তুমি মেনে নিলে, অথচ এ মাসে না তোমার ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল! জন্মদিনে এত কিছু করলে ডাক্তার দেখানোর টাকা আসবে কোথা থেকে? এমনিতেই প্রতি মাসে যে বেতন পাও তাতে টানাটানি করে সংসার চলে।
বাবা বলছেন, শোনো, ডাক্তার আপাতত দেখানোর দরকার নেই। আর বাকিগুলো কোনোমতে হয়ে যাবে। মাসের শেষদিকে না হয় একটু কষ্ট করে চলব।
কিন্তু ডাক্তার দেখানোটাও তো দরকার। সেদিন বুকে ব্যথায় কষ্ট পেলে কত সময় ধরে। আর তুমি কিনা বলছ, কিছুই হয়নি!
বাবা বললেন, আসলেই কিছু হয়নি। সামান্য বুকে ব্যথা হয়েছিল। আমি জানি ওটা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা। খাবারদাবার একটু বাছবিচার করে খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।
কিছু না হলে তো ভালোই, কিন্তু সেটা নিশ্চিত হতেও তো ডাক্তার দেখাতে হবে। আর কঠিন কিছু যদি হয়েই যায় তাহলে যত আগে ডাক্তার দেখাবে ততই ভালো। আর যদি খারাপ কিছু হয় তাহলে আমাদের কী হবে একবার ভেবেছ?
ও নিয়ে তুমি ভেবো না, আমার কিচ্ছু হবে না।
তাই যেন হয়।
এরপর টুম্পার বাবা-মা দুজনেই চুপচাপ। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছেন তারা। কিন্তু টুম্পার যে ঘুম আসছে না। তার শখ মেটানোর জন্য বাবা যে কত কষ্ট করছেন, নিজে ডাক্তার না দেখিয়ে মেয়ের আবদার পূরণ করছেন, এটা বুঝতে পারে ছোট্ট টুম্পাও।
পরদিন সকালে স্কুলে চলে যায় টুম্পা। বাবাও চলে যান অফিসে। রাতে খাবার টেবিলে প্রায় কিছুই বলে না টুম্পা। চুপচাপ খেয়ে নিজের বিছানায় চলে যায়।
একটু পরে বাবা বিছানায় এলে টুম্পাই প্রথম কথা বলে।
বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে সে, বাবা বাবা, একটা দুঃসংবাদ আছে।
কী দুঃসংবাদ মা?
আজ স্কুলের বন্ধুদের আমার জন্মদিনের দাওয়াত দিয়েছিলাম। কিন্তু ওরা কেউই আসবে না। পরীক্ষার পড়াশোনার জন্য ওরা কেউ আসতে পারবে না।
তাই নাকি? তবে তো সত্যিই দুঃসংবাদ। তাহলে এক কাজ করা যাবে। আমরা নিজেরা নিজেরাই কেক কাটব।
না বাবা, নিজেরা নিজেরা কেক কেটে কোনো মজা নেই। তার চেয়ে আগামী বছর আমরা আরো মজা করে কেক কাটব।
আচ্ছা! তাহলে কী করা যায় বলো তো?
আর শোনো, বন্ধুরা যখন আসবেই না, আমার নতুন জামারও দরকার নেই। তাছাড়া গত ঈদে খালামণি যে জামাটা দিয়েছিলেন সেটা তো এখনো নতুনই আছে। একবারও পরা হয়নি। জন্মদিনে আমি ওই জামাটাই পরব।
ঠিক আছে। তাহলে ওই জামাটা পরেই তুমি ঘুরতে যাবে, এই তো?
না বাবা, ঘুরতে যাব না। একটু থেমে টুম্পা বলে, তবে আমরা সবাই মিলে সেদিন বাইরে যাব। তোমাকে নিয়ে আমরা ডাক্তারের কাছে যাব।
টুম্পার শেষ কথাটা শুনে থ মেরে যান ওর বাবা। মিনিটখানেক কোনো কথা বলেন না তিনি। তারপর বুঝতে পারেন, কাল টুম্পার মায়ের সঙ্গে হওয়া কথা সবই শুনেছে টুম্পা। এটা বুঝতে পেরে কিছুটা কষ্ট মেশানো আনন্দ পান তিনি। তার ছোট্ট মেয়েটি বড় হয়ে উঠতে শুরু করেছে।
হঠাৎ করেই তিনি বলে ওঠেন, কী রে মামণি, তুমি কি আমার মেয়ে নাকি মা হয়ে উঠলে?
কেন বাবা, তুমি আমাকে মা বলে ডাকো না! তাহলে মা হয়ে উঠলে তোমার সমস্যাটা কী? আর তোমার তো মা নেই!
না মা। কোনো সমস্যা নেই। আজ বুঝতে পারছি, আমার এক মা না থাকলেও আরেক মা আমার কাছেই আছে। এখন থেকে তুমিই আমার মা। আর আমি তোমার ছেলে।
খাবার টেবিল আর রান্নাঘর গুছিয়ে টুম্পার মা এমন সময় এসে ঢুকলেন বেডরুমে। ঢুকেই দুজনকে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন তিনি, কী ব্যাপার, এত রাতে বাবা-মেয়ে মিলে কী পরামর্শ হচ্ছে!
অনেক অনেক পরামর্শ। তবে বাবা-মেয়ে মিলে না, মা-ছেলে মিলে। বলেই টুম্পার বাবা স্বস্তির একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। টুম্পা আরেকটু জোরে জড়িয়ে ধরল বাবার গলা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়