অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে দেড় লাখ টাকা খোয়া ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

কুরবানির পশুর হাট জমজমাট :

পরের সংবাদ

তনুর ঈদ

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মা-বাবার সাথে ঈদের শপিং করতে গেল তনু। রংবেরঙের জিনিসপাতি দেখে তনু তো আনন্দে আটখানা। এদিকে তাকিয়ে থাকে। ওদিকে তাকিয়ে থাকে। কখনো বা নাচতে থাকে। সবকিছুই যেন পছন্দ হয়েছে ওর।
বাবা বললেন, তুমি কী কী কিনতে চাও?
তনু বলল, সবকিছু কিনতে চাই।
বাবা বললেন, সব তো কেনা যাবে না সোনাবাবা।
তনু বলল, সব কেনা যাবে না কেন?
বাবা বললেন, সব দিয়ে আমরা কী করব? আমাদের যেটা যেটা দরকার, সেটা সেটা কিনতে হবে।
না বাবা, আমি সব কিনব, সব।
মা একটু রাগ মেশানো গলায় বললেন, তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছ তনু?
শপিং করতে আসা কয়েকজন খোকাখুকিকে দেখিয়ে তনু বলল, দেখো মা, দেখো, ওরা কত কথা বলছে। ওদের মা বাবা তো রাগ করছে না।
তনুর কথা শুনে মা-বাবা দুজনেই হাসলেন। তারপর তনুকে নিয়ে জুতোর দোকানে গেলেন। তনুর জন্য কেনা হলো লাল টুকটুকে একজোড়া জুতো। পায় দিয়ে হাঁটলেই লালবাত্তি জ্বলে। বাঁশি বাজে প্যা পো পো। এমন জুতো পেয়ে ওর নাচানাচি আরো বেড়ে গেল।
তারপর কিনে দেয়া হলো রঙিন পায়জামা-পাঞ্জাবি। টুপি। খুশবু। রঙিন কাচের রোদচশমা। ঘড়ি। কিনে দেয়া হলো ঝুমঝুমি। আরো অনেক কিছু। মা-বাবাও কিনলেন জামাকাপড়। দরকারি জিনিসপাতি।
সব শেষে মা বললেন, তোমার কি আরো কিছু লাগবে তনু?
তনু বলল, একটা জিনিস লাগবে মা। আমাকে একটা ঈদ কিনে দাও। খুব সুন্দর একটা ঈদ চাই।
মায়ের তো মাথায় হাত। বাবাটাও অবাক। এ কী বলছে ছেলেটা!
মা বললেন, ঈদ কেনা যায় না বাবা। ঈদ এমনিতেই আসে।
আমাকে ঈদ কিনে দিতেই হবে। ঈদ না নিয়ে আমি বাড়ি যাব না। বলেই ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল তনু।
বাবা বললেন, সামনের বছর তোমাকে ইশকুলে ভর্তি করে দেবো। তুমি অনেক বড় হয়েছ। এমন কথা বললে তুমি ইশকুলে পড়তে যাবে কেমন করে? শোনো বাবাসোনা, তোমার মায়ের কথাই ঠিক। ঈদ কেনার জিনিস নয়। ঈদ হচ্ছে খুশির দিন। এমনিতেই আসে। আকাশে কাস্তেবাঁকা রুপোর চাঁদের হাসি দেখে খুশিতে হাসতে হাসতে ঈদ আসে। আর মাত্র তিনদিন পরেই আসবে রঙিন ঈদ। খুশির ঈদ।
বাবার কথায় শান্ত হলো তনু।
ঘটনা একটা ঘটল ঈদের দিন ভোরবেলা। তনুকে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠেই হাওয়া।
এ-ঘর, ও-ঘর, এমনকি উঠোনের এপাশে ওপাশে কোথাও নেই। মা তনুকে গোসল করিয়ে নতুন জামাকাপড় পরিয়ে দেবে। বাবার সাথে তনু যাবে ঈদগাহে। কিন্তু তনু নেই। কোথায় যাবে এই ছোট্ট খোকা? মা কাঁদতে কাঁদতে ডাকতে লাগলেন, কই গেলি তনু? আমার সোনাবাবা, কই গেলি তুই?
বাবা ভেজা চোখে খুঁজতে বেরোলেন তনুকে। তনুদের বাড়ি থেকে বড়ো রাস্তার দিকে একটা পথ চলে গেছে। বাবা সেই পথ দিয়ে দৌড়ে যেতে লাগলেন। কিছুদূর গিয়েই হঠাৎ থেমে গেলেন। দেখলেন, পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে তনু। জিজ্ঞেস করলেন, এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছ কেন তুমি?
তনু বলল, তোমরা না বলেছ, আজ ঈদ আসবে। তাই তো এখানে দাঁড়িয়ে আছি। এই পথ দিয়ে নানা-নানু আসে। মামা আসে। ঈদও এখান দিয়েই আসবে। ঈদ এলে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি যাব। ঈদ আসছে কেন বাবা?
তনুর কথা শুনে বাবা একেবারে হাসতে হাসতে কুটিকুটি। বললেন, বাড়ি চলো তনু। আমাদের ঈদ এসে গেছে। বাড়ি গিয়ে গোসল করব। তারপর ফিরনি-পায়েস খাব। তারপর নতুন জামা-জুতো পরে ঈদগাহে যাব। নামাজ পড়ব। সেখানে রঙিন রঙিন জামাকাপড় পরে আরো কত মানুষ আসবে!
ঈদ এসেছে! ঈদ এসেছে! এই কথা বলতে বলতে, নাচতে নাচতে বাবার সঙ্গে বাড়ির দিকে ছুটল তনু।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়