সেন্ট লুসিয়ায় ধীরে এগুগোচ্ছে উইন্ডিজ

আগের সংবাদ

বিধ্বস্ত শহরে ভূতুড়ে নিস্তব্ধতা : আদালতের নিয়মিত বিচারকাজ বন্ধ > অফিসপাড়া নিথর > বন্ধ হাসন রাজা মিউজিয়াম > পথে পথে ক্ষতচিহ্ন

পরের সংবাদ

সংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক

প্রকাশিত: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেঁজুতি : অতীতের সব সংকট অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক। সবগুলো সূচকেই সাফল্য বিরাজ করছে। ২০২১ সালের ব্যাংকের অনুমোদিত চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, ২০২১ সালে ৩০০ কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা অর্জন করেছে ব্যাংকটি, যা গত ৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
একই সঙ্গে বিগত বছরের চেয়ে পরিচালন মুনাফা ২২ কোটি টাকা বেড়ে এক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১২ সালের পর আবার ব্যাংকটি এ অবস্থান ফিরে পেয়েছে।
জনতা ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি ও ১৫তম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) গতকাল রবিবার এসব তথ্য জানানো হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের বোর্ড রুমে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এমডি এন্ড সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ।
সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং ব্যাংকের পরিচালক অজিত কুমার পাল এফসিএ, কে এম সামছুল আলম, মোহাম্মদ আসাদ উল্লাহ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ, মো. আব্দুল মজিদ, রুবীনা আমীন ও মেশকাত আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক মো. হুমায়ূন কবীর, ব্যাংকের ডিএমডি মো. আব্দুল জব্বার, শেখ মো. জামিনুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, মো. কামরুল আহছান এবং সিএফও মো. নুরুল আলম এফসিএমএ, এফসিএ, কোম্পানি সচিব এমএইচএম জাহাঙ্গীরসহ মহাব্যবস্থাপকরা এজিএমে উপস্থিত ছিলেন।
এজিএম শুরুর আগে ব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্যাংক ভবনে স্থাপিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজ হাতে লিখে জনতা ব্যাংকের নামকরণ করেন।
আয়োজিত সভায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, জনতা ব্যাংক এক সময় উল্টো দিকে হেঁটেছে।
কিন্তু গত তিন বছরে ব্যাংকের অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছে। এ কৃতিত্ব আমরা একা নিতে চাই না। এজন্য আমি ব্যাংকের সব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ দেব। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় এ উন্নতি ঘটেছে। বড় ঋণে না গিয়ে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, দেশে সম্প্রতি ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে। এ খাতে ঋণ বিতরণ পেলে খাতটি আরো বড় হবে।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আব্দুছ ছালাম আজাদ ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে আর্থিক ফলাফলের বিস্তারিত বিবরণসহ ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা তুলে ধরেন। তিনি জানান, আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ শতকরা ২৩ দশমিক ৩৩ ভাগ বেড়ে এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ব্যাংকের ইপিএস (শেয়ারপ্রতি আয়) ২০২০ সালে ছিল ৬৪ পয়সা ২০২১ সালে তা ২০ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১২ টাকা ৯৮ পয়সা। ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫৮ ভাগ বেড়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
একই সঙ্গে বিগত বছরের চেয়ে পরিচালন মুনাফা ২২ কোটি টাকা বেড়ে ১ হাজার ২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর নিট মুনাফা অর্জিত হয়েছে ৩০০ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
অথচ গত বছর এ মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। কৃষি খাতে বিতরণকৃত ঋণ ২ হাজার ৬৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা এবং এসএমই খাতে ঋণ ১১ হাজার ২৭৯ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। বিনিয়োগ খাতে শতকরা ৩৪ দশমিক ০৯ ভাগ প্রবৃদ্ধিসহ অর্জিত হয়েছে ৩৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সিকিউরিটিজ খাতে ৩০ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। মোট সম্পদ ১৯ দশমিক ৭৭ ভাগ বেড়ে ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
শ্রেণিকৃত ঋণ হ্রাসেও ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখিয়েছে জানিয়ে আব্দুছ ছালাম আজাদ বলেন, জনতা ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণ ছিল ২২ দশমিক ৬৯।
সেখান থেকে কমে ১৭ দশমিক ৬১ ভাগে নেমে ১২ হাজার ৩১৯ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। শ্রেণিকৃত ঋণ হতে ২৮৩ কোটি এবং অবলোপনকৃত ঋণ হতে ৮৭ কোটি টাকাসহ মোট ৩৭০ কোটি টাকা নগদ আদায় সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে তদারকি বাড়ানো ও ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ার কারণে বছর শেষে শ্রেণিকৃত ঋণ ক্রমান্বয়ে আরো কমে আসবে।
তিনি আরো বলেন, আমদানি খাতে ৪৭ দশমিক ৭০ ভাগ এবং রপ্তানি খাতে ৮৪ দশমিক ১ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৫১টি থেকে কমে ৩৯টি শাখায় দাঁড়িয়েছে।
২০২১ সালে ভ্যাট ও আবগারি শুল্ক বাবদ জনতা ব্যাংক সরকারি কোষাগারে মোট ৯০৬ কোটি টাকা জমা করেছে। আগের বছর জমার পরিমাণ ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এছাড়া জনতা ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান জনতা ক্যাপিটাল এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ১১৭ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে, যা পূর্ববর্তী বছর ছিল ১৯ কোটি টাকা। আমাদের প্রতিটি ব্যাংক কর্মীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আর্থিক খাত পুনরুজ্জীবিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক। বিগত বছরের ত্রæটি-বিচ্যুতি কাটিয়ে জনতা ব্যাংক ২০২২ সালে আরো সাফল্য দেখাবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়