মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

বাবাই আমার অনুপ্রেরণার বাতিঘর

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বাবা মানে এক সমুদ্র আবদার, অভিমান, অভিযোগ, অনুযোগের পেছনে প্রশান্ত মহাসাগর সমান লুকানো ভালোবাসা। মাথার ওপর শীতল ছায়া বাবা। আড়াল হলেই মনে হয় প্রচণ্ড গুরুত্বপূর্ণ কী যেন নেই, কী যেন নেই। দায়িত্বশীলতা ব্যাপারটা যে কী সেটা একটু একটু করে চোখের সামনে বাবাকে দেখে শিখছি।
বাবা মানুষটা আসলে সুপারম্যানের চেয়ে কিছু কম না। ঊর্ধ্বগতির বাজারে শুধু শিক্ষকতার টাকা দিয়ে সংসার, পড়ালেখাসহ কত কিছু যে ম্যানেজ করতে হয়। কীভাবে যে করেন, তা এই সুপারম্যানই ভালো জানেন। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত হতে দেখিনি। পেশাজীবনে কত চাপ, কত বাধা; ইস্পাত দৃঢ় কঠিন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করতে দেখেছি। তবু দুর্নীতির পথে পা বাড়াতে দেখিনি। অবৈধ পথে ইনকামের কথা কল্পনাও হয়তো করেননি কখনো। ৩২ বছরের শিক্ষক জীবনে তার অসংখ্য গুণমুগ্ধ শিক্ষার্থীর মুগ্ধতা দেখে অবাক হই। সম্ভবত তারা তাদের শিক্ষকের দ্বারা অনুপ্রাণিত। হয়তো পড়ানোর ভেতর দিয়ে বাবা তাদের জীবনের গভীর জগৎকে আলোকিত করে দিতে পেরেছিলেন। বাবা বলেন, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত চিত্তে এসব আলোকবর্তিকাই তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। সহজ-সরল, মায়াময় মানুষটা কী এক অনিন্দ্য আলোয় উদ্ভাসিত। শিক্ষকতা পেশায় বাবার এই উজ্জ্বলতা, তার সততা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ইস্পাতদৃঢ় ব্যক্তিত্ব- আমার হৃদয়কে আলোড়িত করে জীবনের ভেতর মহল পর্যন্ত অনুপ্রেরিত করে। এগুলোই বাবার কাছে থেকে আমার উত্তরাধিকার। আর এসব উজ্জ্বল বর্তিকাই শিক্ষকতার আদর্শকে উত্তরাধিকার সূত্রে বহন করার অনুপ্রেরণা দেয়।
মধ্যবিত্ত পরিবারে ঈদ মানেই প্রিয় মানুষের চাওয়া, আকাক্সক্ষা জলাঞ্জলি দিয়ে বরং তার সবচেয়ে প্রিয় মানুষদের ইচ্ছেগুলো হাসিমুখে পূরণ করা। শুধু ঈদ না, সব সময়ই এরকম নিজেকে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে বাবা তার সন্তানের শখ মেটান। সন্তানের মুখের হাসি যে তার কাছে অমূল্য। সন্তানের সব শখ মিটুক কিন্তু তিনি কিছুতেই কিছু নেবেন না। হাসিমুখে শুধু আমাদের শখগুলোই পূরণ করে যান। গাছ যেমন স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল; আলো দিয়ে, ছায়া দিয়ে, ফল দিয়ে সব সময় নিঃস্বার্থভাবে বিদ্যমান, বাবাও তেমনি মহিরুহ। মাথার উপর বটবৃক্ষের প্রশান্তির ছায়া। নিরলসভাবে আর নিঃস্বার্থভাবে কিছু করার অনুপ্রেরণা বাবাকে দেখেই পাই।
শিক্ষক বাবার মেয়ে হয়েও পড়ালেখার হাতেখড়ি মায়ের কাছেই হয়েছে। কারণ টানা ২২ বছর আমাদের থেকে দূরে আরেক জেলাতে শিক্ষকতা করেছেন আব্বু। শুধু ছুটিতেই কাছে পাওয়া যেত তাকে। ছুটিতে আব্বুর বাড়িতে থাকার দিনগুলো হতো বেশ আনন্দের। কত রকমের গল্প, গ্রামের গল্প, মুক্তিযুদ্ধের গল্প। মুক্তিযুদ্ধের সময় এক কিশোরের বাড়িতে রান্না করা খাবার মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবেশন করা, অস্ত্র মুছে দেয়ার এসব গল্প যে কতবার শুনেছি তার শেষ নেই। সেই কিশোরটিই আমার আব্বু। গল্প বলার কী আশ্চর্য ক্ষমতা! গল্প শুনলে মনে হয় ’৭১ এ সেইসব দৃশ্য যেন চোখের সামনে ভাসে। যুদ্ধ আর বাবার কৈশোরবেলা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তখনকার সেই কিশোরটির কণ্ঠে দেশ প্রেমের উচ্ছ¡াস ভেসে আসে।
স্বভাবসুলভ গাম্ভীর্য থাকলেও কখনো বকা দেননি। অবশ্য আমাদের দুই বোনের কাছে গাম্ভীর্যের এই রূপ একদম আলাদা, মায়াময়। প্রায় কখনো কড়া কথা না বলে, বকা না দিয়ে আর কখনোই গায়ে হাত না তুলেও কী করে সন্তানকে শাসনে রাখা যায়, আমার বাবা তার এক অদ্ভুত উদাহরণ। বকা দেবেন না এটা জানি, কিন্তু তাই বলে যা খুশি তাই করব এমনটা নয়। এমন আদর্শে বড় করেছেন যে, কোনটা করা ঠিক হবে না এটা ঠিক জানি। বাবা সব সময়ই জীবনে এমন অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে থাকুক।
বলি বলি করেও মধ্যবিত্তীয় সংকোচের বৈতরণী পার করে বলা হয়ে ওঠে না, অস্ফুটে উচ্চারিত কথা, ‘আব্বু, তোমাকে ভালোবাসি!’ বাবা দিবসে সকল বাবাকে শ্রদ্ধা।
– সদর, রাজবাড়ী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়