মাদকবিরোধী অভিযানে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ৪৪

আগের সংবাদ

উদ্ধারের অপেক্ষা আর ত্রাণের আকুতি : পানিবন্দি লাখ লাখ মানুষ > ভেসে উঠছে বানভাসি মানুষের লাশ > এখনই সচল হচ্ছে না ওসমানী বিমানবন্দর

পরের সংবাদ

পদ্মা সেতু ঘিরে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন বুনছেন মাদারীপুরবাসী

প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ২০, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাহাঙ্গীর আলম, মাদারীপুর থেকে : শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর কয়েকদিন পরেই উন্মোচিত হবে পদ্মা সেতুর দ্বার, ছুটবে যানবাহন। এই স্থাপনা এখন জানান দিচ্ছে অপার সম্ভাবনার। সেতুকে কেন্দ্র করে দক্ষিণের দ্বারখ্যাত মাদারীপুরে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে অবহেলিত এ জনপদে নেয়া হবে আধুনিক সব বাণিজ্যিক উদ্যোগ। প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের, সুযোগ তৈরি হবে আত্মকর্মসংস্থানের। ফলে অনগ্রসর দক্ষিণ জনপদের এ জেলার নতুন প্রাণসঞ্চার এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র।
অর্থনৈতিক মুক্তির পদ্মা সেতুকে ঘিরে নতুন স্বপ্নে বিভোর মাদারীপুরবাসী। সেতুকে ঘিরেই স্বপ্ন বুনছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। স্বপ্নের সেতু চালু হলে খুলে যাবে অমিত সম্ভাবনার দ্বার। চলাচলে আসবে গতি, বাড়বে প্রবৃদ্ধি- এমনটাই আশাবাদ মাদারীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের।
জেলার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদারীপুরকে ঢাকার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে খর¯্রােতা পদ্মা নদী। এই জেলা ছাড়াও দক্ষিণ জনপদের মানুষের পদ্মা পাড়ি দিতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ বাড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এ জনপদের মানুষের। যে কারণে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার তেমন ঘটেনি।
৭৫ সাল পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার মাদারীপুরের উন্নয়নে তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মাদারীপুর জেলা রয়ে যায় অনেকটা পশ্চাপদ ও অনগ্রসর জেলা হিসেবে। বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতায় গোটা মাদারীপুরসহ সারাদেশের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে গোটা জাতির স্বপ্নের সেতু আগামী ২৫ জুন খুলে দেয়া হবে। এতে কৃষিতে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প কলকারখানা। সুযোগ হবে কর্মসংস্থানের, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। পদ্মা সেতুকে ঘিরে পাল্টে যাবে জীবনমান। আর এতেই খুশিতে আত্মহারা মাদারীপুরসহ দক্ষিণ জনপদের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।
পদ্মা পাড়ের কৃষক আব্দুর রহমানের বয়স পঁচাত্তর বছর ছুঁয়েছে। তিনি জানান, ‘বাবা মোরা দেখছি পদ্মার ঢেউ। ওপারে ধান আনতে গিয়ে কুবার যে স্্েরাতের মধ্যে পড়ছি তার হিসাব নাই। মোগো ফসল নিয়া বড় বিপদে পড়ছিলাম। এখন হাসিনায় সেতু বান্যাইয়া দিছে। মোগো কষ্টেরও দিন শ্যাষ’। আরব আলী নামে অপর এক কৃষক জানান, মুই ৫ বিঘা জমিতে সবজি ফলাই। ফড়িয়ারা জমি থেকে নামে মাত্র কিনে নেয়। এতে আমাদের ক্ষতি হয়। এখন ব্রিজ দিয়ে সরাসরি ঢাকায় সবজি পাঠামু, অনেক লাভবান হতে পারমু। সেতু চালু হলে প্রান্তিক কৃষকদের ভোগান্তির শেষ হবে বলে জানান আরো অনেক কৃষক।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে আশা দেখছেন এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এতদিন এ জনপদে গড়ে ওঠেনি শিল্প কলকারখানা। এখন এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের দুয়ার উন্মোচিত হবে, যা ভূমিকা রাখবে এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে। জেলার একাধিক আইনজীবী জানান, পদ্মা সেতুকে ঘিরে দেশি-বিদেশি অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। যারা বিরোধিতা করেছে, ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে বিচার হওয়া দরকার জানিয়ে মাদারীপুর জেলা বারের সদস্যরা জানান, পদ্মা সেতুর বিরোধীদের জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মাদারীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া হাওলাদার বলেন, ষড়যন্ত্র না হলে আরো আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উপহার পেতাম।
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর গোলাম ফারুক জানান, সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রী নিজ দক্ষতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এ অঞ্চলের মানুষ চিরকাল শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।
কালকিনি পৌরসভার মেয়র এস এম হানিফ প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কোনো ষড়যন্ত্রই দাবিয়ে রাখতে পারেনি। পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। আর এ সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরে শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে। এতে কাজ পাবে এলাকার হাজার হাজার মানুষ। উন্নত হবে তাদের জীবনযাত্রার মান।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ মোল্লা বলেন, সব চক্রান্ত ভেদ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা ও সাহসিকতায় এই পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। স্বপ্নের এ সেতু ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক সব সুযোগ ভোগ করবে। মাদারীপুরসহ দক্ষিণ জনপদের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির পথ সুগম হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরে অনেকগুলো উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা করা হয়েছে। অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। কিছু পরিকল্পনাধীন আছে। স্বপ্নের সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরের ঘরে ঘরে চাকরি পাবে। কেউ বেকার থাকবে না। প্রত্যেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন জানান জেলার এ শীর্ষ কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান ভোরের কাগজকে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে মাদারীপুরসহ দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে এক বিরাট পরিবর্তন আসবে। জাতীয় অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে, মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। শাজাহান খান বলেন, স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের পর এ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি নিরসন হবে। ইতোমধ্যে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এতে মাদারীপুরসহ সারাদেশের অর্থনীতির এক আমূল পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেন, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক স্মৃতি-বিজড়িত মাদারীপুর জেলায় অন্য সরকার কোনো উন্নয়ন করেনি। অনগ্রসর ও পশ্চাদপদ জেলায় এতদিন কোনো শিল্প-কারখানা হয়নি। এবার সে দুয়ার খুলে গেল। গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান, প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের, যা অবদান রাখবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে। প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় মাদারীপুরের কৃষক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ নতুন করে আশায় বুক বাঁধছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়