সোহেল চৌধুরী হত্যা : শেষ দিনেও দাখিল হয়নি কেস ডকেট

আগের সংবাদ

ভয়াবহ বন্যায় দিশাহারা মানুষ

পরের সংবাদ

কালো টাকার আশ্বাসে পুঁজিবাজারে উত্থান

প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ১৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত আয় বা কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেয়ার পর উত্থান হয়েছে পুঁজিবাজারে। গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ পয়েন্ট বাড়ার পাশাপাশি ২৩ কর্মদিবস পর লেনদেন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছ। এ নিয়ে পর পর দুই দিন বাড়ল সূচক। লেনদেন পর পর চার দিন বাড়ল।
চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোর করপোরেট করের হার আড়াই শতাংশ কমানোর কথা বলেছেন অর্থমন্ত্রী। এটিকে স্বাগত জানিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা ছিল কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। পুজিবাজারে লভ্যাংশের ওপর থেকে দ্বৈত করও প্রত্যাহার হয়নি। পাশাপাশি ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার আগের মতোই ৩৭.৫ শতাংশ রাখা হয়েছে। বাজেট প্রতিক্রিয়া গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব রেখেছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম দুটি মন্তব্য করেন। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ তারা দিয়েছেন, সেই টাকার একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে বলেই তাদের বিশ্বাস।
বাজেটে আরো যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলোও বাজারকে চাঙা করবে বলে আত্মবিশ্বাসের কথা বলেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন শুরু হলে পুঁজিবাজারে তার প্রভাব পড়বে এবং বাজারে চাঙাভাব বিরাজ করবে। সারা বিশ্বের তুলনায় আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হার শক্তিশালী, কাজেই পুঁজিবাজার ভালোভাবে চলবে- এটা আমাদের প্রত্যাশা।
অন্যদিকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন, বাজেট পাসের সময় কালোটাকা বিনিয়োগের সুবিধা রাখা হতে পারে। বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম-সিএমজেএফের এক আয়োজনে তিনি পুঁজিবাজারে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগের পক্ষে অবস্থান জানিয়ে বলেন, এই সুযোগ দেয়া হলে একদিকে কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় যুক্ত হব, অন্যদিকে তা পুঁজিবাজারকে গতিশীল হতে সাহায্য করবে। কালো টাকা অর্থনীতির মূল ধারার বাইরে থাকলে তা নানা অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা থেকে যায়।
মন্ত্রিসভার দুই সদস্যের এই বক্তব্যের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে লেনদেন শুরুই হয় সূচক বেড়ে। সময় যত গড়িয়েছে, সূচক বেড়েছে তত বেশি। শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৫১ পয়েন্ট বেড়ে সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্ট। এ নিয়ে বাজেট পেশের পর তিন দিনে হারিয়ে ফেলা ১১৮ পয়েন্টের মধ্যে দুই দিনে উদ্ধার হলো ৬৪ পয়েন্ট। বেড়েছে ১৯৮টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৩৫টির আর অপরিবর্তিত থাকে ৪৮টির দর। লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। এর আগে হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল ২৩ কর্মদিবস আগে গত ১৬ মে। সেদিন হাতবদল হয় ১ হাজার ৩৪ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকার শেয়ার।
গতকাল যে দুটি কোম্পানির দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে তার দুটিই বেক্সিমকো গ্রুপের। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। এদিন কোম্পানিটির দর বেড়েছে ৪.৩২ শতাংশ, যার কারণে সূচক বেড়েছে ৫.৪৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে বেক্সিমকো লিমিটেড দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫.১৮ পয়েন্ট যোগ করেছে। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ২.৫১ শতাংশ। এরপরেই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো সূচক বাড়িয়েছে ৩.৮৭ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানিটির দর ০.৭৩ শতাংশ বাড়ার কারণে ওই পরিমাণ সূচক বেড়েছে। স্কয়ার ফার্মার দর ১.১৩ শতাংশ বাড়ার কারণে সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে ৩.৮১ পয়েন্ট। আর সাইফ পাওয়ারের ৯.১৫ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচক বেড়েছে ১.৯৭ পয়েন্ট। এছাড়া রেনাটা ১.৫৭ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ ১.৪৬ পয়েন্ট, গ্রামীণফোন ১.৪৫ পয়েন্ট, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ১.২৬ পয়েন্ট এবং রেকিট বেনকিসার ১.২৪ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। বিপরীতে সূচক সবচেয়ে বেশি কমেছে ব্র্যাক ব্যাংকের দর পতনে। প্রতিষ্ঠানটির দর কমেছে ১.৯২ শতাংশ। এতে করে সূচক হ্রাস পেয়েছে ২.১৪ পয়েন্ট।
দর বাড়ার শীর্ষে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স : সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৯৮টির বা ৫১.৯৬ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, আগের কার্যদিবস মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের ক্লোজিং দর ছিল ১৭.৬০ টাকায়। গতকাল লেনদেন শেষে এর শেয়ারের ক্লোজিং দর দাঁড়ায় ১৯.৩০ টাকায়। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেয়ার দর ১.৭০ টাকা বা ৯.৬৫ শতাংশ বেড়েছে। এর মাধ্যমে মেঘনা ইন্স্যুরেন্স ডিএসইর টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে উঠে আসে। এদিন ডিএসইতে টপটেন গেইনার তালিকায় উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মুন্নু ফেব্রিক্সের ৯.৩৬ শতাংশ, সাইফ পাওয়ারটেকের ৯.১৪, এক্সপ্রেস ইন্সুরেন্সের ৭.৩৫, ডমিনেজ স্টিলের ৫.৬২, ইউনাইটেড ইন্সুরেন্সের ৪.৭৩, বেক্সিমকো ফার্মার ৪.৩৪, একমি পেস্টিসাইডের ৪.২৬, ইফাদ অটোসের ৪.০৪ এবং খান ব্রাদার্সের শেয়ার দর ৩.৯৩ শতাংশ বেড়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়