ডিএমপি কমিশনার : জীবনে সফলতার শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই

আগের সংবাদ

বিপজ্জনক জেনেও সংরক্ষণে ত্রæটি

পরের সংবাদ

অবাস্তব

প্রকাশিত: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুন ৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

লেখাপড়ার তাগিদে হোস্টেলে ওঠার পর মুন্না বেশ মিথ্যাবাদী হয়ে উঠেছে। রুমমেটদের কাছে তার পারিবারিক জীবনের মুখরোচক যত গল্প রোজ বলে, সবই মিথ্যা। এ ছাড়া আর উপায়ও বা কি! রুমমেটরা যে সব বড় ঘরের সন্তান। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে মুন্না রুমমেটদের তার নিজ জীবনের যতগুলো গল্প বলেছে, সবই কাল্পনিক আর অবাস্তব। তা না হলে রুমমেটদের কাছে যে তার ইজ্জত থাকবে না। পলাশের বাবা একজন আইনজীবী। শহরে তাদের তিন তলা বাড়ি। বিলাসের বাবা পুলিশ অফিসার। মাঝে মাঝে নাটকেও অভিনয় করেন। তিতাসের বাবা এলাকার চেয়ারম্যান। নিউমার্কেটে তাদের ১০টি দোকান। রুমমেট বাবাদের এসব গল্প শুনে মুন্না তাদেরকে বলেছে, তার বাবা একজন বিরাট ব্যবসায়ী। সুপার মার্কেটে তাদের বিশাল কাপড়ের দোকান। রোজ লাখ খানেকের মতো আয়।
কিন্তু মুন্নার বাবা মনসুর আলী একজন ভিক্ষুক। রোজ পথে পথে ভিক্ষা করেন। মনসুর আলী অশিক্ষিত মানুষ। লেখাপড়া করতে পারেননি। অধিক বয়সে বিয়ে করেছেন। ছেলে মুন্নার জন্মের সময় স্ত্রী মরিয়ম মারা যাওয়ার পর মুন্নাকে ঘিরেই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
ভিক্ষা করেই ছেলেকে লেখাপড়া করান মনসুর আলী। ছেলে একদিন মস্ত শিক্ষিত হবে, এই স্বপ্ন তার। পয়সার অভাবে তিনি লেখাপড়া করতে পারেননি বলে জীবনভর যে স্বপ্নগুলো অপূর্ণ ছিল, ছেলেকে শিক্ষিত করে সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে হাঁটছেন তিনি। তাইতো ভিক্ষায় পাওয়া পয়সা ছেলের লেখাপড়ার পেছনে ব্যয় করতে এক পায়ে খাড়া। মেধাবী হওয়ার সুবাদে কলেজজুড়ে মুন্নার সুনাম। ইংরেজিতে বড়ই পটু সে। ইতোমধ্যে মুন্না ভালো রেজাল্ট নিয়ে মাধ্যমিকও পাস করেছে।
লেখাপড়ার উন্নতির লক্ষ্যে হোস্টেলে উঠে মুন্না। এখানে তার সব নতুন বন্ধু। যারা খুবই বড় ঘর থেকে এসেছে। সবার বাবাই সমাজের গণ্যমান্য জন। অথচ তার বাবা একজন ভিক্ষুক। এই পরিচয় যে তার কাছে লজ্জাকর। সে লজ্জা থেকে মুক্তি পেতে মুন্না রুমমেটদের কাছে ভিক্ষুক বাবাকে সাজিয়েছে সুপার মার্কেটের বড় ব্যবসায়ী। রুমমেটরাও তাই জানে।
ছেলেকে হোস্টেলে পাঠিয়ে মনসুর আলী একা হয়ে গেলেন। সারাদিনের ভিক্ষাবৃত্তি সেরে এখন সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে ছেলেকে পড়ার টেবিলে দেখেন না। ছেলে যে তার দূরের হোস্টেলে। বাঁশের বেড়ায় স্ত্রীর ঝুলন্ত ছবিটার দিকে তাকিয়ে তিনি দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন। স্ত্রী বিয়োগের ব্যথা আর ছেলের অনুপস্থিতির হাহাকার ধৈর্য্যরে সঙ্গে মোকাবিলা করেন।
প্রতি সপ্তাহে ছেলের জন্য টাকা পাঠান মনসুর আলী। সৌদিয়া টেলিকম থেকে মুন্নার বিকাশ নম্বরে প্রতি শুক্রবার বিকাল বেলা টাকা বিকাশ করেন। প্রতিবার টাকাগুলো পেয়ে মুন্নার চোখ ছলছল করে। এ টাকা যে বাবার বহু কষ্টের। ভিক্ষার টাকা।

২.
রুমমেট পলাশের সঙ্গে বেশ ভাব মুন্নার। পলাশ স্টাডির পাশাপাশি সাংবাদিকতায় জড়িত বলে দিনের বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকে। সন্ধ্যায় হোস্টেলে ফিরলে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে পলাশের সঙ্গে রাজ্যের গল্পজুড়ে দেয়। পলাশের খুব ইচ্ছে একদিন মুন্নার বাবার কাপড়ের দোকান দেখবে। যতবার মুন্নার কাছে পলাশ এ আবদার তোলে, নানান অজুহাতে মুন্না প্রসঙ্গ পাল্টাবার ফন্দি খোঁজে।
সেদিন ছিল শুক্রবার। টাকার বড় দরকার মুন্নার। কিন্তু দুপুরের পর থেকেই বাবার নম্বরটা বন্ধ! এমন তো সাধারণত হয় না। দুপুর পেরিয়ে বিকেল। না, বাবার নাম্বার বন্ধ। কী হয়েছে!
সাংবাদিকতার কাজ শেষে সন্ধ্যায় হোস্টেলে ফিরল পলাশ। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে মুন্নাকে বলল- দুপুরে জেনারেল হসপিটালে গেলাম রিপোর্ট করতে। সেখানে এক করুণ দৃশ্য দেখে এলাম। মর্গে একটি লাশ পড়েছিল। লোকটার কোনো পরিচয় মিলছিল না। পেটের ওপর দিয়ে এমনভাবে ট্রাকের চাকাটা গেছে যে নাড়ির্ভুড়ি সব বেরিয়ে এসেছে। ছবি তুলে এনেছি। দেখ আমার মোবাইলে।
মলিন মুখে মুন্না পলাশের মোবাইলে তোলা অজ্ঞাত লাশটার ছবি দেখতেই চমকে উঠে। এ কাকে দেখছে মুন্না! পলাশ যে স্বয়ং তার বাবার লাশের ছবি তুলে এনেছে। মুন্না চিৎকার দেয়। রাজ্যের কৌতূহল নিয়ে পলাশ তাকায় মুন্নার দিকে। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরা আদুল গায়ের মুন্না পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে বেরিয়ে আসে হোস্টেল থেকে। পেছন থেকে পলাশ ডাকে- মুন্না, কী হয়েছে তোর?
জেনারেল হসপিটালে ছুটে যায় মুন্না। তার অগ্নিদৃষ্টির দুটি চোখ বাবাকে খুঁজছে। কিন্তু বাবা কই? একজন তরুণী নার্স জানালো, অজ্ঞাত লোকটির পরিচয় মিলছে না দেখে ঘণ্টাখানেক আগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আদেশে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এ কথা শুনেই অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে লুটিয়ে পড়ল মুন্না।

:: আমিশাপাড়া, নোয়াখালী

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়