রিকশাচালকের সাক্ষ্য : পরিচত মানুষই হত্যা করেন সগিরাকে

আগের সংবাদ

দক্ষিণ আফ্রিকায় অবিস্মরণীয় সিরিজ জয় : ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

পরের সংবাদ

স্বাধীনতার সুখ

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পুচকে ইঁদুরটার সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়েছে অন্তুর। আগে তো একেবারেই বনিবনা হতো না। পুচকেটা অন্তুর বই খাতা জামা জুতো কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলতো।
কিন্তু শুক্রবারের পর থেকে দুজনার গলায় গলায় ভাব। কীভাবে হলো? শুনবে? বলছি শোনো-
শুক্রবার তো ইশকুল বন্ধের দিন। অন্তু বাড়িতেই ছিল। আর ওই দিনই ছিল অন্তুর বার্থ ডে। বাড়িতে অনেক রকম খাবারের আয়োজন ছিল। জন্মদিনের সব অনুষ্ঠান শেষে প্লেটে প্লেটে নষ্টও হয়েছিল প্রচুর খাবার। পুচকে ইঁদুরটা যতবারই খাবার খেতে চেষ্টা করে পুষি বিড়াল টুশিটা ততবারই ধেয়ে আসে। তার কড়া পাহারায় অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ক্ষুধার্ত পুচকে ইঁদুর।
বিষয়টা চোখে পড়ে অন্তুর। টুশিকে বকুনি দিয়ে কুটকুট করে খাবার জন্য পুচকে ইঁদুরকে অনেক খাবার এনে দেয় অন্তু। ব্যাস। ভাব হয়ে যায়। বন্ধুত্ব হয়ে যায়। অন্তু আদর করে ইঁদুরটার নাম রেখেছে কুটকুট। সুন্দর না? চিঁ চিঁ চিঁউ চিঁউ শব্দ করে কুটকুট কী বলে তার সবটা যেন বুঝতে পারে অন্তু। আর অন্তুর কথাও যেন বুঝে যায় কুটকুট।
সেই থেকে রোজ দুজনার কথা হয়। ইশকুল থেকে বাড়ি ফিরে কুটকুটের জন্য চালভাজা, মুড়িসহ আরো কত কি দিয়ে প্লেট সাজিয়ে খাটের নিচে রেখে দেয় অন্তু। আর কুটকুট এসে তা মহানন্দে খেতে থাকে। এ নিয়ে বুয়ার সঙ্গে ওর কথা কাটাকাটি হয়েছে। মামনিও বকা দিয়েছে একবার। তারপর আর কেউ কিছু বলেনি।
বিষয়টা সবাই মেনে নিলেও মানতে পারে না পুষি বিড়াল টুশি। তার আদরে ভাগ বসাচ্ছে কুটকুট। তাই টুশিটা ফন্দি আঁটে- সুযোগ পেলেই গিলে খেয়ে নেবে ইঁদুরটাকে। টুশির ভয়ে সবসময় বের হতে পারে না কুটকুট। সারাক্ষণ রিড়ালটার নজরদারি, এই অভিমানে আজ সারাদিন গর্তে কাটিয়েছে সে। অন্তুর জন্য খুব মন খারাপ হয়েছে, তবু বের হয়নি। অন্তুর রেখে যাওয়া খাবার তেমনি পড়ে আছে। তার কিছুটা চেটে চেটে খেয়ে গেছে টুশি। ইশকুল থেকে ফিরে কুটকুটকে না পেয়ে অন্তুর খুব মন খারাপ হয়ে যায়। খাটের নিচে উঁকি দিয়ে দেখে খাবার তেমনি পড়ে আছে। তাতে একটুখানি মুখ দিয়েছে কেউ। তবে সে যেই হোক কুটকুট নয়। বন্ধু তো খাবার নষ্ট করে না!
সব ঘটনা বাবাকে বলতে ছুটে যায় সে। বাবা তখন দাদা ভাইয়ের ছবির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন দাদা ভাই। আগামীকাল তার মৃত্যুবার্ষিকী।
ব্যাপারটা অনুমান করে ছাদে এসে একলা দাঁড়িয়ে থাকে অন্তু। বুয়া এসে খবর দেয় ছোট ফুপু এসেছে। টুশিকে নিয়ে যেতে চায় ফুপু। এখন শুধু অন্তুর অনুমতি দরকার। অন্তু সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যায়। টুশি ফুপুর সঙ্গে চলে যায় ধানমন্ডি।
আনন্দে গর্ত থেকে এক ছুটে বের হয়ে আসে কুটকুট। তার কী যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।
অন্তুরও যেন আর আনন্দ ধরে না। কুটকুটকে নিয়ে সোজা বাবার কাছে চলে যায়। বলে- বাবা, বাবা, টুশিকে ফুপু নিয়ে গেছে। কুটকুটের এখন আর কোন ভয় নেই। ও মুক্ত, স্বাধীন। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে! স্বাধীনতার আনন্দটাই অন্যরকম তাই না বাবা?
বাবা দাদাভাইয়ের ছবির দিকে দৃষ্টি রেখেই উত্তর দেন- হ্যাঁ, অন্তু। স্বাধীনতার আনন্দটা সব আনন্দের থেকে আলাদা। একেবারেই অন্যরকম।
এটুকু বলেই চোখ মোছেন বাবা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়