রিকশাচালকের সাক্ষ্য : পরিচত মানুষই হত্যা করেন সগিরাকে

আগের সংবাদ

দক্ষিণ আফ্রিকায় অবিস্মরণীয় সিরিজ জয় : ইতিহাস গড়ল টাইগাররা

পরের সংবাদ

দেশের গল্প

প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: মার্চ ২৩, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে নারিতা, নোরা, লিওন বলে- গল্প বলো ঠাম্মি।
ওদের বায়না রাখতেই প্রজাপতি, পরী, রূপকথা আর ভূতের গল্প শোনায় ঠাম্মি। আজকেও বলে- একটি মজার ভূতের গল্প শুনবে?
নারিতা ভূতের গল্প শুনতে রাজি নয়। নোরাও বলে, ভূতের গল্প তো কতই বলেছ ঠাম্মি, আর নয়। দুদিন পরপর ভূতের গল্প শুনতে ভালো লাগে না।
লিওন ঠাম্মির গলা জড়িয়ে ধরে বলে, আজ ভূতের নয়, অন্যকিছুর গল্প বলো।
ঠাম্মি ভাবে, কিসের গল্প বলা যায়! কথাটা মিথ্যে বলেনি কেউ। একই গল্প কতবার শোনা যায়। গলায় জোর দিয়ে বলে, দেশের গল্প শুনবে?
– দেশের গল্প আছে ঠাম্মি? নারিতা প্রশ্ন করে।
– কোন দেশের গল্প? লিওনের প্রশ্ন।
– আমাদের দেশেরও গল্প আছে ঠাম্মি? নোরা জানতে চায়।
তিনজনের জানার আগ্রহে ঠাম্মি দারুণ খুশি। বলে- সবাই মুখোমুখি বসো। আজ আমাদের দেশের গল্প বলবো। কী মজার দেশের গল্প।
– মজার কেন ঠাম্মি? লিওন আবারো প্রশ্ন করে।
– কারণ এটা স্বাধীনতার গল্প। আচ্ছা, আমাদের দেশের নাম কী বলো তো?
– বাংলাদেশ। নোরা উঁচু গলায় উত্তর দেয়। ঠাম্মি ভীষণ খুশি নোরার উত্তর শুনে।
– বলো তো বাংলাদেশের জাতির পিতা কে?
– বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নারিতা বলে।
– ঠিক বলেছো নারিতা। আজ তাহলে স্বাধীনতার গল্প শোনো। আমাদের দেশের নাম ছিলো পাকিস্তান। ওটা আবার দুটো দেশে ভাগ। একটার নাম পূর্ব পাকিস্তান, অন্যটার নাম পশ্চিম পাকিস্তান। দেশের প্রেসিডেন্ট ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের। ওরা আমাদের ভালো চোখে দেখতো না। পূর্ব পাকিস্তানের সকল আয়ের টাকা পশ্চিম পাকিস্তানে খরচ করতো। শুধু পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যস্ত ছিল। আর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষেরা অভাব অনটনে দিন কাটাতো। ভালো কোনো কিছুই পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না। এই করুণ অবস্থা দেখে শেখ মুজিবুর রহমান চুপ থাকতে পারেননি। আমাদের দেশে সবাই বাঙালি। বাংলা ভাষায় কথা বলি। বাংলা ভাষা আমার মায়ের মুখের ভাষা। কিন্তু আমরা সবাই লাঞ্ছিত, অবহেলিত। কথা বললেই পুলিশ মারধর করতো। জেলে বন্দি করে রাখতো। এসব শেখ মুজিবুর রহমানের সহ্য হতো না। তাই তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। সেই কারণে অনেকবার তাকে জেলে যেতে হয়। তারপর ১৯৭১ সালে তার ডাকে সবাই স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়। নাম হয় বাংলাদেশ। আমাদের দেশ এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। দেশে সেরা ইশকুল, কলেজ, কলকারখানা, রাস্তা, প্রতিষ্ঠান, গাড়ি-বাড়ি হয়েছে। আমরা এখন অনেক সুখে আছি। প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ গেছে। পথঘাট পাকা হয়েছে।
ঠাম্মির অপূর্ব দেশের গল্প শুনে সবাই আনন্দে পুলকিত হয়।
– আচ্ছা ঠাম্মি, আমাদের দেশটা কত সুন্দর। গ্রামের বাড়িতে যাবার সময় শুধু সবুজ ধানের মাঠ আর কত নদী দেখি। মন ভরে যায়। পুকুর, দীঘি, পাহাড়, সাগরও আছে।
– শুধু কি তাই, ঐ পুকুর, দীঘিতে খেলা করে কত মাছ। আর কক্সবাজারে সমুদ্রের ঢেউ দেখেছো? পতেঙ্গার বিচ দেখেছো? কী সুন্দর! কতশত মানুষ ওখানে যায়। ঘুরে বেড়ায়, দৌঁড়ায়, সাগর জলে স্নান করে। সাগরে কত রকমের ঝিনুক-শামুক নোনা জলে হাঁটে। ঐ সাগরের কোলে সূর্য ডোবে। কী সুন্দর লাল রঙে আকাশ ঝিলমিল করে।
– সত্যি ঠাম্মি, আমাদের বাংলাদেশের কত রূপ। নোরা ছোট গলায় বলে।
– হ্যাঁরে, তাইতো অনেকেই এ দেশটাকে সোনার বাংলা বলে।
লিওন অনেকক্ষণ ধরেই চুপচাপ। তাকে উদ্দেশ্য করে ঠাম্মি বলে, আজকের গল্পটা কেমন হলো দাদুভাই?
– আজকের স্বাধীনতার গল্পটা সেরা গল্প ঠাম্মি। কি সুন্দর নাম, স্বাধীনতার গল্প।
আনন্দে নারিতা, নোরা, লিওন ঠাম্মিকে জড়িয়ে আদর করে। ঠাম্মি না করে না। ওদের খুশিতে ঠাম্মির আনন্দের বাঁধ ভেঙে যায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়