প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
প্রতি বছর শীতকাল এলেই আমাদের দেশের বিল, হাওর, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয় নানান ধরনের পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। আমরা ওদেরকে বলি অতিথি পাখি। কেউ কেউ আবার বলে পরিযায়ী পাখি। পরিযায়ী মানে হলো যাযাবর বা অন্য দেশে গমনকারী। নামে অতিথি হলেও এরা আসলে আমাদের দেশে বেড়াতে আসে না, নিজের জীবন বাঁচাতে এরা ঝাঁকে ঝাঁকে এসে হাজির হয়।
প্রাণিবিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। স্থান পরিবর্তন করতে গিয়ে কিছু কিছু পাখি ২২ হাজার মাইল পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়। উত্তর মেরু অঞ্চলের একজাতীয় শঙ্খচিল প্রতি বছর এমন দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে।
আমাদের দেশে আসা অনেক পাখিই অবশ্য অতটা পথ পাড়ি দিয়ে আসে না। হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশিরভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে এদেশে। এছাড়া ইউরোপ এবং সুদূর সাইবেরিয়া থেকেও কিছু পাখি আসে। শীত কমে গেলে এরা আবার ফিরে যায় নিজ দেশে।
বাংলাদেশের পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে আমাদের দেশে ৬২০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এর মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি এদেশে নিয়মিত দেখা যায়। বাকি ১৪৩ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে কালেভদ্রে। ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি স্থায়ীভাবে এদেশে বাস করে। বাকি ১৭৬টি পরিযায়ী বা অতিথি পাখি। অতিথি পাখিদের মধ্যে আবার ১৬০টি শীতকালে, ১০টি বসন্তকালে এবং ৬টি গ্রীষ্মকালে এদেশে অবস্থান করে।
শীতের সময় আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা আসে দল বেঁধে। খেয়াল করলে দেখা যায়, ওড়ার সময় পাখিরা সবাই মিলে ইংরেজি ভি অক্ষরের আকৃতি নিয়ে এগিয়ে চলে। বিজ্ঞানীরা জানান, ভি বিন্যাসে ওড়ার সময় পাখির হৃদস্পন্দন একা একা ওড়ার সময়কার হৃদস্পন্দনের চেয়ে কম থাকে। ওড়ার জন্য ঝাঁকের একটি পাখি যখন ডানা ঝাপটায়, এর ঠিক পেছনের পাখিটির ওপর বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়। এছাড়া পেছনের পাখিটি সামনেরটির চেয়ে একটু ওপরে অবস্থান করে। ফলে স্বাভাবিকের চেয়ে কম শক্তি ব্যয় করেও ভেসে থাকতে পারে সে। একা একটি পাখি উড়ে যতটা পথ অতিক্রম করতে পারে, এভাবে ওড়ার ফলে সে একই শক্তি খরচ করে প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। দল বেঁধে ওড়ার সময় যদি কোনো পাখি বিন্যাসের বাইরে চলে যায়, সঙ্গে সঙ্গে সে বাতাসের অতিরিক্ত বাধা অনুভব করতে পারে। এটা বুঝতে পেরে দলছুট পাখিটি আবার বিন্যাসে চলে আসে। দলের একদম সামনের দলনেতা পাখিটি বাতাসের সবচেয়ে বেশি বাধা অনুভব করে। সে যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন পাখা ঝাপটানোর বেগ কমিয়ে দিয়ে একটু পেছনের দিকে সরে আসে। তখন পেছনের আরেকটি পাখি তার শূন্যস্থানটি পূরণ করে। তবে ভি-এর দুই ডানার সবচেয়ে পেছনের পাখি দুটি আবার মাঝের পাখিগুলোর চেয়ে বেশি বাধা অনুভব করে। ফলে ক্লান্তি লাঘবের জন্য এদেরও কিছুক্ষণ পর পর জায়গা পরিবর্তন করতে হয়। এভাবে চলতে চলতে কোনো পাখি ক্লান্ত হয়ে পড়লে অথবা শিকারির গুলিতে আহত হয়ে বিন্যাসের বাইরে চলে গেলে তার সঙ্গে আরো পাখি নেমে আসে তাকে সাহায্য করার জন্য বা সঙ্গ দেয়ার জন্য। অসহায় পাখিটি যতক্ষণ সুস্থ না হয় বা মারা না যায় ততক্ষণ অন্য পাখিরাও তার সঙ্গে থাকে। এরপর তারা উড়ে মূল দলের সঙ্গে যোগ দেয় অথবা নিজেরাই নতুন বিন্যাস সৃষ্টি করে চলার চেষ্টা করে।
শীত মৌসুমে এদেশে আসা অতিথি পাখিদের মধ্যে রয়েছে- জলপিপি, হরিয়াল, রাজশকুন, তিলেময়না, রামঘুঘু, হলদে খঞ্জনা, চখাচখি, বুনোহাঁস, ছোট সারসপাখি, বড় সারসপাখি, ডুবুরি পাখি, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, সরালি, পান্তামুখী ইত্যাদি।
শীতকালে এসব পাখি এলেও এরা আসলে শীত থেকে বাঁচতেই আমাদের দেশে আসে। কারণ যেসব দেশ থেকে এরা আসে, এ সময় সেখানে থাকে আরো বেশি শীত। এত শীত সহ্য করতে না পেরে এরা আসে তুলনামূলক কম শীতের এলাকায়। তাছাড়া এ সময়টাতে শীতপ্রধান এলাকায় খাবারেরও প্রচণ্ড অভাব দেখা যায়। কারণ শীতপ্রধান এলাকায় এ সময় তাপমাত্রা থাকে শূন্য ডিগ্রির নিচে। ফলে সবকিছু জমে বরফ হয়ে যায়। সঙ্গে থাকে তুষারপাত। তাই কোনো গাছপালা জন্মাতে পারে না। দেখা মেলে না কোনো কীটপতঙ্গেরও। শীত শেষে মানে মার্চ-এপ্রিলের দিকে শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করে, কিছু কিছু গাছপালা জন্মাতে শুরু করে। এ সময় অতিথি পাখিরা তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যায়।
শীত এলে অনেকেই অতিথি পাখি দেখার জন্য যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। প্রচুর গাছপালা ও জলাশয় থাকায় সেখানে প্রতি বছরই অনেক অনেক অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সেখানকার বিভিন্ন লেকে ২০-২৫ প্রজাতির পাখি আসে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ছাড়াও মিরপুর চিড়িয়াখানার লেক, বরিশালের দুর্গাসাগর, নীলফামারীর নীলসাগর, সিরাজগঞ্জের হুরাসাগর আর সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর এসব অতিথি পাখির প্রিয় অবকাশ কেন্দ্র।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।