কিশোরের মৃত্যু : আজমেরী গেøারির দুই চালক কারাগারে

আগের সংবাদ

সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত : আদালতে রায় ঘোষণা

পরের সংবাদ

টিউলিপ ফুল চাষে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৩১, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জাবেদুর রহমান জাবেদ, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি : তেঁতুলিয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়েছে বিদেশি টিউলিপ ফুল। দেশের সর্ব উত্তরের হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলাকে এই ফুল চাষাবাদের উপযোগী হিসেবে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় দেশের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইএসডিও) টিউলিপ ফুল চাষ সম্প্রসারণের ভ্যালুচেইন পাইলটিং প্রকল্পের উদ্যোগ নিয়েছে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এই প্রকল্পের আওতায় তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের শারিয়ালজোত ও দর্জিপাড়া গ্রামের ৮ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি ৪০ শতক জমিতে ৩টি প্লটে ৪০ হাজার বাল্ব বা চারা রোপণ করা হয়। জানা যায়, টিউলিপ ফুল সাধারণত শীতপ্রধান দেশ- নেদারল্যান্ডস, কাশ্মির, সুইজারল্যান্ড, তুরস্কে চাষাবাদ হয়। চাষের ক্ষেত্রে দিনে ১৫ ডিগ্রি এবং রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফুল সহনশীল।
এই প্রকল্পের আওতায় চাষিরা ৬টি প্রজাতির ১২ রংয়ের টিউলিপ চাষাবাদ শুরু করছে। এই ফুলের বাল্ব বা বীজ রোপণের দিন হতে ১৬-২০ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ২০-২১ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। ২৫- ৬০ দিন পর্যন্ত এই ফুল স্থায়ী থাকে। ডাটায় কিছু পাতা থাকে। সরজমিন দেখা গেছে, টিউলিপ প্রজাতির মধ্যে অ্যান্ট্রাকটিকা (হোয়াইট), ডাচ সানরাইস (ইয়েলো), পারপেল প্রিন্স (পারপেল), টাইমলেস (রেড হোয়াইট শেডি), মিল্কসেক (লাইট পিঙ্ক), বারসেলোনা (ডার্ক পিঙ্ক) ইত্যাদি নামে ফুলে ভরে উঠেছে বাগান। এছাড়া অ্যাড রেম (অরেঞ্জ), লালিবেলা (রেড), দি ফ্রান্স (রেড), রিপ্লে (অরেঞ্জ), ডেনমার্ক (অরেঞ্জ), স্ট্রং গোল্ডসহ (ইয়েলো) বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ কলিতে ভরে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ফুল ফুটছে বাগানে। ইএসডিও নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের প্রতিটি বাল্ব বা বীজ ৬১ টাকা ৮০ পয়সা দরে কিনে চাষিদের মাঝে বিতরণ করেছে। পাশাপাশি বিনামুল্যে রাসায়নিক সার, জৈবসার, খৈল, শেডনেট নির্মাণ এবং ফেন্সিংনেট (বেড়ার জাল) দেয়া হয়েছে। এছাড়া হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রকল্পের সিনিয়র অ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর (এপিসি) আইনুল হক বলেন, টিউলিপ চাষাবাদে বাল্ব বা চারার দাম, শেডনেট, ফেন্সিংনেট, রাসায়নিক সার, জৈবসার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য বাবদ মোট খরচ প্রায় ৩০-৩২ লাখ টাকা। ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল ১০০ টাকা হারে বিক্রি করতে পারলে ৪০ শতক জমি থেকে মাত্র ২ মাসে ৮ লাখ টাকা আয় করবেন চাষিরা। পরবর্তী সময়ে বছরের অন্য সময়টাতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফুল চাষাবাদও করতে পারবেন। চাষিরা তাদের ৪০ শতাংশ জমিতে এবারই প্রথম রাজসিক সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ উৎপাদন করে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করেছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলার নারী চাষিরা এ বছর পরীক্ষামূলক টিউলিপ ফুল উৎপাদন করে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছেন।
বর্তমানে উৎপাদিত প্রতিটি ফুল বাগান থেকে ১০০ টাকা দরে স্থানীয়ভাবে বিক্রি শুরু করেছেন তারা। ফুল বাগানে ক্ষুদ্র পরিসরে বিনোদন পার্ক তৈরি করে পর্যটক ও ফুলপ্রেমীদের জন্য প্রবেশ মূল্য চালু করেছেন। এতে ফুল বিক্রি বাদেও তারা অতিরিক্ত টাকা আয় করতে পারবেন।
চাষিদের পরিবারে আয় বাড়ানো ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা, বিদেশ থেকে টিউলিপ ফুল আমদানি নির্ভরতা কমানো, পঞ্চগড় জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নতমানের টিউলিপ ফুল উৎপাদনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করাই ইএসডিওর এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
উৎপাদিত ফুল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ এবং গ্রিন হাউসের ব্যবস্থা করে চাষিদের সহযোগিতা করা, ঢাকাসহ সারাদেশে ফুল সরবরাহে কুলিংভ্যান চালুর ব্যবস্থা, ফুল বিক্রিতে ঢাকার ফুল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চাষিদের সমন্বয় করাসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করছে ইএসডিও। পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় ভবিষ্যতে এক হাজার চাষিকে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ ফুল চাষাবাদ সম্প্রসারণের প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা পাবে। এর ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি খাতে যুক্ত হতে পারে টিউলিপ।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম ভোরের কাগজকে বলেন, উত্তরের শান্ত নিরিবিলি সবুজ শ্যামলিমা পর্যটন এলাকা পঞ্চগড় জেলায় টিউলিপ ফুলের বাগান সৃষ্টি হওয়ায় পর্যটনের আকর্ষণও বেড়েছে। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তের লোকজন নানান প্রজাতি ও নানা রংয়ের বাহারি টিউলিপ ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন, কেউ ফুল কিনছেন। দেশে এই ফুলের চাহিদা থাকায় বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। উচ্চমূল্যে আমদানির মাধ্যমে এ ফুলের চাহিদা পূরণ করা হয়। নিয়মিত পরিচর্যা, প্রযুক্তি ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে চাষিরা প্রথমবারেই সফলতা পেয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়