প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ২২, ২০২২ , ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ
মরিয়ম সেজুঁতি : সরকার ঘোষিত ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণ সুবিধা দিতে ২ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিলের আওতায় জামানত ছাড়াই প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করেছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, সিএমএসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা জামানতবিহীন ঋণের ঝুঁকি বহনের জন্য ২০২০ সালের ২৭ জুলাই ২ হাজার কোটি টাকার একটি স্কিম গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিলের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা হলেও এর বিপরীতে ৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ঋণের গ্যারান্টি দেয়া যাবে। এই স্কিমের আওতায় বিতরণ করা কোনো ঋণ খেলাপি হলে তার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। এই স্কিমে সহায়তা দিতে বিদেশি সহযোগী সংস্থাগুলোও যুক্ত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
৪ শতাংশ সুদে এই ঋণের সুযোগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এই পর্যন্ত ৩৭টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চুক্তিবদ্ধ হলেও এই সুবিধা দিয়েছে মাত্র ১১টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গত দুই বছরে ৫৮৪টি ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে ৬২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ঋণ সুবিধা দিয়েছে তারা। এর মধ্যে গত ২০২১ সালে ৩১০টি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানকে ৩৩ কোটি টাকা এবং ২০২০ সালে ২৭৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৯০০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যদিও উপযুক্ত জামানত না থাকায় এতোদিন অধিকাংশ কুটির, অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, যাদের জামানত নেই তারা যাতে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় ঋণ পেয়ে ভালো ব্যবসা করতে পারে সে জন্য এই তহবিল করা হয়েছে। ঋণের পরিমাণ কম হলেও এক বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। এটা যাতে আরো বাড়ে সেজন্য চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে আরো তৎপর হতে হবে। কারণ ভালো উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনা মহামারিতে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তারা আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এ অবস্থায় তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে প্রয়োজনীয় জামানত দিতে পারেন না। ফলে ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকলেও জামানত না থাকায় তারা ঋণ পাচ্ছে না। এসব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করে। এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টে ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (সিজিএস) ইউনিটও গঠন করা হয়েছে। ঋণ বিতরণের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম ম্যানুয়াল-২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই আলোকে ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে এ স্কিমের আওতায় ঋণ বা বিনিয়োগ গ্যারান্টির পরিমাণ সর্বনি¤œ ২ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্যারান্টির মেয়াদ ধরা হয়েছে এক বছর।
পরবর্তীতে সিএমএসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের চাহিদা বিবেচনা করে আরো বেশি গ্রাহককে সুবিধা দিতে ২৫ হাজার টাকার ঋণকেও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আর একজন গ্রাহকের সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকার ঋণ এই স্কিমের সুবিধা পাবে। এর আগে এই স্কিমের আওতায় সর্বনি¤œ ২ লাখ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার ঋণে গ্যারান্টি সুবিধা ছিল। আরো বেশি গ্রাহককে গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিজিএস ইউনিটের মহাব্যবস্থাপক এস এম মোহসীন হোসেন স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই সিদ্ধান্ত খুব শিগগিরই কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া ১০, ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী প্রান্তিক, ভূমিহীন কৃষক, নি¤œ আয়ের পেশাজীবী, স্কুল ব্যাংকিং হিসাবধারী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য গঠিত পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের উদ্যোক্তাদেরও ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় আনা হয়েছে। স¤প্রতি এ সংক্রান্ত আরো একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে এই খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবারো ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন হয়েছে ৪ হাজার ৭১০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ঋণ পেয়েছেন ২ হাজার ৪৩৭ জন নারী উদ্যোক্তা। এসব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ, তবে এর মধ্যে সরকার ৫ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।