বহুবিবাহের আইনি নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল

আগের সংবাদ

অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র : উন্নয়ন সহযোগীদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে, ২০২২ সাল হবে অবকাঠামো উন্নয়নের এক মাইলফলক > জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

পরের সংবাদ

শোষিত মানুষের সুহৃদ সত্যেন সেন ও সাহিত্যকর্ম

প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জানুয়ারি ৭, ২০২২ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

বিভাগ-পূর্ব এই উপমহাদেশের ব্রিটিশবিরোধী ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, মানবমুক্তির একাগ্র সন্ধানী, প্রগতিশীল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শিল্পী-সংগ্রামী সত্যেন সেনের জন্ম ১৯০৭ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশের ছায়াঘেরা পাখিডাকা এক গ্রামে।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যের অধিকারী বিক্রমপুরের জনপদ। বর্তমান ঢাকা বিভাগের মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রাচীন বিক্রমপুরের অংশ। এই মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে ‘শান্তি কুটির’ নামের বাড়িতে সত্যেন সেনের জন্ম। তার বাবা ধরনী মোহন সেন, মা মৃণালিনী সেন। চার ভাইবোনের সর্বকনিষ্ঠ সত্যেন সেন। অন্যরা হলেন- বয়ঃক্রমে ইন্দুবালা সেন, প্রতিভা সেন ও জিতেন্দ্র মোহন সেন। সোনারং গ্রামটি যেমন ঐতিহ্যবাহী তেমনি সেন পরিবারও এক বিখ্যাত পরিবার। উপমহাদেশের অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তি এ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। প্রখ্যাত শিশু-সাহিত্যিক ‘খোকার দপ্তর’ এবং ‘মোহনভোগের’ লেখক মনোমহন সেন হচ্ছেন সত্যেন সেনের বড় ঠাকুরদার পুত্র। বিশ্বভারতীর এক সময়ের আচার্য ক্ষিতিমোহন সেন ছিলেন তার কাকা। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তার ভাগনে। এ ছাড়াও শিক্ষা-সংস্কৃতি চর্চা ও প্রসারের ক্ষেত্রে এ পরিবারের অনেক কৃতী সন্তান বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। সোনারং গ্রামের স্কুলটি এ পরিবারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এমন একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করা সত্যেন সেনের জীবনকালে স্বদেশে ও বিশ্বে ঘটে গেছে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ঘটনা। সে সব ঘটনার সাযুজ্য যেমন সত্যেন সেনের জীবন গড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে তেমনি মানব মুক্তির আন্দোলনে শরিক হওয়ার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী মুক্তি সংগ্রামের দিকটা যদি আমরা দেখি তবে আমরা দেখব ১৯০৭-০৮ সাল থেকে শুরু করে ১৯৩৪-৩৫ সাল- ক্ষুদিরামের ফাঁসি থেকে মাস্টারদা সূর্য সেনের ফাঁসি পর্যন্ত বাংলার তরুণ সমাজ সশস্ত্র সংগ্রামের (তখন এ আন্দোলনকে সন্ত্রাসবাদী অভ্যুদয় নামে পরিচয় দেয়া হয়েছে) মাধ্যমে দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। প্রায় সমসাময়িক সময়ে ১৯১৬, ১৯২০ এবং ১৯২২ সালে এ পৃথিবীর আর এক প্রান্তে, আয়ারল্যান্ডে একই ইংরেজ শাসকশক্তির বিরুদ্ধে আইরিশ অভ্যুদয়ের রক্তক্ষয়ী ঘটনাবলি ঘটে। আবারো প্রমাণিত হয় যে, অত্যাচারীর খড়গ সাদা-কালো-বাদামি সব রঙের মানুষের লাল রক্তে কলুষিত হয়েছে বারবার। এমনকি কারাগারে আবদ্ধ বন্দিদের ওপর অত্যাচার ও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ এই ভারতবর্ষে ও আয়ারল্যান্ডে প্রায় একই রকম ছিল। এ প্রসঙ্গে চিন্তাবিদ রণেশ দাসগুপ্ত তার ‘আইরিশ, বাংলা, সীয়ান ওক্যাসি’ নিবন্ধে লিখেছেন, ‘(আইরিশ) স্বাধীনতা সংগ্রামের সৈনিক টেরেন্স ম্যাকসুইনি কারাগারে রাজনৈতিক মর্যাদা আর দেশের মুক্তির দাবিতে ৭৫ দিন অনশন করে প্রাণ দিয়েছিলেন। ইংরেজ রাজত্ব উচ্ছেদের প্রচেষ্টায় লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত বাংলার যতীন দাস একই ধরনের দাবিতে কারাগারে ৬৪ দিন অনশন করে যখন প্রাণ দিলেন, তখন বাংলার যৌবনের মর্মভূমিতে যতীন দাস-ম্যাকসুইনি যমজ ভাই-এর মতো আসীন হয়েছিলেন।’ এমনই এক পরিস্থিতি-পরিবেশে গত শতাব্দীর বিশ দশকের শেষের দিকে সত্যেন সেন ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী ‘যুগান্তর’ দলের প্রতি আকৃষ্ট হন।
আরো সব বড় ঘটনা যা তার উপলব্ধিতে নাড়া দিয়েছে, বিবেককে তীক্ষè করেছে, মর্মে পীড়া দিয়েছে, কর্মে উৎসাহিত করেছে, সৃষ্টিতে অনুপ্রাণিত করেছে, প্রতিবাদ করার ক্ষমতাকে জাগিয়ে তুলেছে তারও ব্যাপ্তি বিশাল।
১ম ও ২য় মহাযুদ্ধ, রুশ বিপ্লব, ফ্যাসিবাদের উত্থান ও বিশ্বজুড়ে প্রগতিশীল শিল্পী-সাহিত্যিক ও সচেতন মানুষের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন, স্বদেশে ইংরেজি ১৯৪৩ বাংলা ১৩৫০ সনে বাংলাদেশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ, পাকিস্তানি শাসকদের ২৩ বছরের অত্যাচার ও তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসবের মধ্য দিয়ে সত্যেন সেন আমাদের সবার সত্যেনদা নিজেকে খাঁটি সোনা হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন।
রাশিয়ায় স্বেচ্ছাচারী জারতন্ত্রকে উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি পর্বে ছিল রুশ তরুণ-তরুণীদের বোমা ও ডিনামাইট আক্রমণের একটি অধ্যায়। আয়ারল্যান্ডের মতো এ আন্দোলনও বাংলার যুব সম্প্রদায়কে আকৃষ্ট করেছিল। তবে ১৯১৭ সালের অক্টোবরের রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অধ্যায়ের শেষ হয়। একইভাবে বিশ দশকের সশস্ত্র অভ্যুদয়ে অনুপ্রাণিত ‘যুগান্তর’ দলের সত্যেন সেন সমাজতান্ত্রিক ভাবধারায় ও ‘কমিউনিস্ট’ আন্দোলনে বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন। ব্রিটিশবিরোধী মুক্তি সংগ্রাম ও প্রগতিশীল আন্দোলন করার জন্য তাকে নানা নিগ্রহ সহ্য করতে হয় এবং বারবার তিনি কারাবরণ করেন। প্রথমবার কারারুদ্ধ হন তিন মাসের জন্য ১৯৩১ সালে। দ্বিতীয়বার টানা পাঁচ বছর ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত। এই কারাবাসের সময় তিনি ‘কমিউনিজমে’ দীক্ষিত হন। কারামুক্তির পর তার কাকা ক্ষিতিমোহন সেন শান্তি নিকেতনে বিশ্ব ভারতীতে ভাষাতত্ত্বের ওপর গবেষণার জন্য একটি স্কলারশিপ গ্রহণের প্রস্তাব দেন। সত্যেন সেন তখন কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের সংগঠনের স্বপ্নে বিভোর। তিনি ওই স্কলারশিপ গ্রহণ না করে নিজ গ্রামে কৃষক আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
বিশ্বপটে তখন ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থান ঘটছে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই এই শক্তির প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হয়। ১৯৩৫ সাল। হিটলার জার্মানিতে হত্যা-বই পোড়ানোর মতো প্রতিক্রিয়াশীল কার্যকলাপ শুরু করে দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট মুসোলিনি ইতালিতে প্রগতিকামী গণতান্ত্রিক শক্তির কণ্ঠরোধ করে আবিসিনিয়া আক্রমণ করার উদ্যোগী হয়েছে। জাপানও ভয়াবহ আক্রমণাত্মক যুদ্ধ প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে ১৯৩৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে স্পেন প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জেনারেল ফ্রাঙ্কো বিদ্রোহ ঘোষণা করে। বিশ্ববাসী আর এক ফ্যাসিস্ট আক্রমণের নগ্নরূপ দেখতে পায়। মানবজাতিকে হিটলার-মুসোলিনির ঘৃণ্য থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য পৃথিবীর অগ্রগণ্য শিল্পী-সাতিহ্যিকরা ১৯৩৫ সালে প্যারিস শহরে অনুষ্ঠিত এক মহাসম্মেলনে ‘ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব রাইটার্স ফর দ্য ডিফেন্স অব কালচার এগেনস্ট ফ্যাসিজম’ গঠন করা হয়। অন্যদিকে স্পেনে গড়ে ওঠে ফ্যাসিস্ট বিরোধী ‘পপুলার ফ্রন্ট’। বিশ্বজুড়ে এই ফ্যাসিবিরোধী আন্দোলনের ঢেউ ভারতবর্ষেও লাগে। গঠিত হয় সর্বভারতীয় এবং বিভিন্ন অঞ্চল পর্যায়ে ‘প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ’। ঢাকাতেও ‘ঢাকা জেলা প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘ’ গঠিত হয়। এই সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক ও সম্পাদক সোমেন চন্দ ঢাকার সূত্রাপুরে আয়োজিত ফ্যাসিবিরোধী সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে একটি মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় ল²ীবাজারের কাছে উগ্র জাতীয়তাবাদী ফ্যাসিস্টদের আক্রমণে নিহত হন ১৯৪২ সালে। সোমেন চন্দের মৃত্যুর পর ঢাকা জেলা প্রগতি লেখক ও শিল্পী সংঘের সংগঠক হিসেবে যাদের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয় তাদের পুরোধাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সত্যেন সেন।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালে ইংরেজ রাজত্বে বাংলাদেশে মনুষ্যসৃষ্ট এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়। পঞ্চাশের সেই (বাংলা ১৩৫০ সন) মন্বন্তরে খাদ্যাভাব ও অসুখ বিসুখে বহু লোক মারা যান। দুর্গত মানুষের সেবায় সত্যেনদা ত্রাণ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। গান লিখে, গান গেয়ে সচ্ছল পরিবারের মানুষদের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করেন। তার লেখা গান জেলায় জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে তার কর্মজীবনের এক পর্যায়ে সত্যেনদা গড়ে তুলেছিলেন একটি গানের দল। ১৯৫৮ থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিভিন্ন কৃষক সমাবেশে, শ্রমিক জমায়েতে এই দলটি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করত। আরো পরে ১৯৬৮ সালে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে সত্যেন সেন প্রতিষ্ঠা করেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। দেশে-বিদেশে নানা শাখা বিস্তৃত সত্যেনদার চেনতায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল চিন্তাধারায় সম্পৃক্ত- এই সংগঠনটি বাংলাদেশের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক চর্চা ও প্রসারের কেন্দ্র। চল্লিশ দশকে সত্যেনদা প্রচুর গান রচনা করেন। সে সময়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সেগুলো প্রকাশিত হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে সত্যেন সেন অনেক জনপ্রিয় গণসঙ্গীত রচনা করেন। সত্যেন সেনের গানগুলো সঠিকভাবে আজো সংগৃহীত হয়নি। তার লেখা স্বল্পসংখ্যক গান কেবল আমরা শুনতে পারি। এটা বড়ই দুঃখের বিষয়।
’৪৭-এ দেশ বিভাগের পর বামপন্থি শিল্পী-সাংস্কৃতিক কর্মী বিশেষ করে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত নেতাকর্মীদের ওপর শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার-নিপীড়ন বেড়ে যায়। সত্যেন সেনকে বারবার কারারুদ্ধ করা হয়। কখনো বা তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়। ’৪৯-এ পাকিস্তান পর্যায়ে সত্যেন সেনের কারাবন্দি জীবন শুরু। মুক্ত হন ’৫৩ সালে। পরের বছর আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এভাবে পাকিস্তানের ২৩ বছর শাসন আমলে তিনি ১৩ বছরেরও বেশি সময় কারাভোগ করেন।
ছেলেবেলা থেকে সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চায় সত্যেন সেন নিয়োজিত ছিলেন। তার সাহিত্য সম্ভারের এক বিপুল অংশই তিনি কারাগারে অবস্থানকালে সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৩৪ সালে কারাবাসকালে প্রথম উপন্যাস ‘ভোরের বিহঙ্গী’ লেখেন। তবে তার প্রথম প্রকাশিত বই ‘মহাবিদ্রোহের কাহিনী’। প্রকাশিত হয় ১৯৫৮ সালে। ‘ভোরের বিহঙ্গী’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৯ সালে। সত্যেন সেনের এ পর্যন্ত প্রকাশিত ৪১টি গ্রন্থের মধ্যে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশিত হয় ’৬৮, ’৬৯, ’৭০ সালের দিকে। গভীর মননশীল, মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা দিয়ে জীবনমুখী সাহিত্য রচনা করে গেছেন তিনি। সাহিত্যকর্মে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৬৯-এ আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০-এ বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে একুশে পদক (মরণোত্তর) পান।
সত্যেন সেনের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ ও কর্মবহুল। স্বল্প পরিসরে তার খুব সামান্য অংশ উল্লেখ করা সম্ভব। উপলব্ধির মধ্যে ধারণ করাই মানুষটাকে জানা-চেনার অন্যতম উপায়। সদা ব্যস্ত সত্যেনদা কোনো নির্দিষ্ট পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেননি। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা তার প্রিয় ক্ষেত্র ছিল। দৈনিক ‘সংবাদ’-এ তিনি সাংবাদিকতা করেছেন। তবে তা বিরতিহীন নয়। কয়েক পর্যায়ে। অকৃতদার সত্যেনদা অবশ্য নিজের পেশা সম্বন্ধে লিখেছেন, ‘লেখা আমার পেশা, আমার জীবিকা অর্জনের একমাত্র উপায়।’ তিনি তার এ পেশায় আমৃত্যু নিয়োজিত ছিলেন। কারাবাসকালে সত্যেন সেনের চোখের পীড়া দেখা দেয়। ১৯৬৮ সালের মাঝামাঝি সময় জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে যেতে থাকেন। সবার অনুরোধে এবং তার মেজদিদি প্রতিভা সেনের আমন্ত্রণে ১৯৭৩ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গে যান। তবে দৃষ্টিহীন অবস্থায় শ্রæতলিখনের মাধ্যমে তিনি লেখার কাজ চালিয়ে যান। দীর্ঘদিন পরবাসে থাকাকালীন প্রতিভা সেনের আশ্রয়ে শান্তিনিকেতনের গুরু পল্লীতে ১৯৮১ সালের ৫ জানুয়ারি অকৃতদার সত্যেন সেন চির শান্তির নীড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। শিল্পী সংগ্রামী ত্যাগী এই মানুষটির কথা চিরকাল স্মরণ করবে বাংলার মানুষ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়