ওয়ারী থেকে উদ্ধার : মারা গেল সেই নবজাতকটি

আগের সংবাদ

বিদ্রোহের ভারেই নৌকাডুবি

পরের সংবাদ

আমার বন্ধু রাপেক ও কালা চাদর

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আমার বন্ধু রাপেক রাজশাহীর ছেলে। আলসেমিতে সে সকলের চেয়ে এক কাঠি সরেশ। আপাতত বসত সবুজ রঙের হোয়াইট হাউসে। তাকে সেখান থেকে টেনে বের করা মুশকিল। যেহেতু সবুজ রঙের হোয়াইট হাউসে হুটহাট মেয়েদের প্রবেশ নিষেধ এবং রাপেক দ্য সাইলেন্ট বয়ের হতভাগ্য মোবাইল ফোনটিতে অবিরত কল দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। অতএব সর্বশেষ উপায় সবুজ রঙের হোয়াইট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করা। তাতে কোনো হাফপ্যান্ট পরা সহৃদয় ভাই রাপেককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। তা দিক, রাপেককে যে ওখানে থাকতে দিচ্ছে এই-ই ঢের। এ নিয়ে রাপেকের অবশ্য কোনো অপমানবোধ নেই।
আলসেমিতে রাপেক সকলের চেয়ে এক কাঠি সরেশ হলেও কাপড় ধোয়ায় তার আলসেমি নেই মোটেও। শীত কিম্বা গ্রীষ্ম, একটু ফাঁক-ফোকড় পেলেই রাপেক মহা উৎসাহে কাপড় কাচতে লেগে যায়। দুপুরের ক্লাসটা ক্যান্সেল হলে সকলে যখন এদিক সেদিক বসে আয়েশ করে আড্ডা দেয়, রাপেক তখন ঊর্ধ্বশ্বাসে মেসের দিকে দৌড়ায়, তার তখন মেসে গিয়ে কাপড় কাচার তাড়া। একবার তো তাকে ঠেলেঠুলে বাসে তুলে চট করে ঢাকায় নিয়ে গেলাম। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে রাপেকের মন টিকছে না, তার মন পড়ে আছে সবুজ রঙের হোয়াইট হাউসে। সেখানে তার কাচার মতো বিস্তর কাপড় পড়ে আছে।
তার বিরল প্রতিভা কেবল এই কাচাকাচিতেই সীমাবদ্ধ না, গবেষণা করে সে এটাও আবিষ্কার করেছে যে ত্রিশালের পানি অপেক্ষা রাজশাহীর পানিতে কাপড় কাচা তুলনামূলক সহজ। তাই সে প্রায়ই আফসোস করে যে কাপড় কাচার জন্য রাজশাহী যেতে পারছে না। অথচ ক্যাম্পাস তো চাইলেই মাঝেমধ্যে দু-চারদিনের ছুটি দিতে পারে, ব্যাগভর্তি কাপড় নিয়ে সে রাজশাহী থেকে কেচে আনতে পারে। কাপড় কাচার জন্য সে হনুলুলু যেতে পারে, রাজশাহী তো মামুলি ব্যাপার।
কাপড় কাচা নিয়ে রাপেক বেশ আশাবাদীও বটে। মাঝেমধ্যেই সে সংসারের মোহ মায়া ত্যাগ করে বিবাগী হয়ে যেতে চায় এবং কাপড় কেচেই বাকি জীবনটা দিব্যি কাটিয়ে দিবে বলে উদাস হয়ে যায়। হাতে কিছু টাকা পয়সা পেলেই ছোটখাটো একটা লন্ড্র্রী সে দিয়ে বসতো।
রাপেকের কাপড় কাচার বাতিক থাকলেও আমার আছে ভুলে যাওয়ার বাতিক। তার সাথে যোগ হয়েছে ত্রিশালের বেঢপ রকমের শীত। দিনের বেলা যার কড়কড়ে রোদ, সন্ধ্যা নামার পরেই তার চারদিক ছাপিয়ে কুয়াশা পড়তে শুরু করে। কুয়াশায় এক হাত দূরের জিনিসও ঠাওর করা যায় না। সাথে হাড় কাঁপানো শীত। কে বলবে এখানে দিনের বেলা অমন গনগনে সূর্য মাথার উপর চড়ে থাকে। কিন্তু থাকে, কেউ না বললেও থাকে। সেই গনগনে সূর্যের আশীর্বাদেই হোক কিম্বা আমার ভুলে যাওয়ার বাতিক আছে তাই, মোদ্দাকথাটা হলো আমার কখনোই শীতবস্ত্র নিয়ে বেরুনোর খেয়াল থাকে না। সন্ধ্যে নামার পর রি রি কাঁপতে থাকলেই মুশকিল আসান হিসেবে হাজির হয় আমার বন্ধু রাপেক তার কালা চাদর নিয়ে। রাপেকের কালা চাদরের আলাদা করে কোনো ইতিহাস নেই, মাহাত্ম্য নেই। এ কালা চাদর নিছকই এক কালা চাদর, এক রঙা মিশমিশে কালো। তবু এর একটা গল্প আছে। ক্রয় সূত্রে এর মালিক রাপেক হলেও কালেভদ্রেও তা কখনো রাপেকের গায়ে উঠে না। হালকা কিংবা ভারি শীত হোক, এই কালা চাদর কেবল আমার গায়েই শোভা পায়। তবে আমি গায়ে দিয়ে চরে বেড়ালেও ধোয়ার কাজটা অবশ্য রাপেকই করে। কাপড় কাচতে রাপেক কখনো পিছপা হয় না।
সেবার আমরা ফটোগ্রাফি কোর্সের ছবি তুলে ফিরছি
ময়মনসিংহ থেকে। ক্যাম্পাসের বাসটা তখনো ধুঁকতে ধুঁকতে এসে হাজির হয়নি। এদিকে টাউনহলে সন্ধ্যা নামার পর বেঢপ রকমের শীত পড়তে শুরু করে। বরাবরের মতোই শীতবস্ত্র নিয়ে বের হইনি কিন্তু নিয়ম বিরুদ্ধ করে রাপেকের গায়ে সেই কালা চাদর। এ হতে পারে না, কিছুতেই না। আমরা শীতার্ত হতে পারি কিন্তু আমাদের কালা চাদর আছে। এ কালা চাদর গায়ে দাঁড়িয়ে থাকার কোনো অধিকার রাপেকের নেই। ফারিনের সহায়তায় তাই কালা চাদর ওর গা থেকে টেনে খুলে নিসি। রাপেক আমাদের নিষ্ঠুর পাষাণী বলে রি রি করে কাঁপতে কাঁপতে বাসে উঠে এবং সবুজ রঙের হোয়াইট হাউসের সামনে
নেমে যায়।
কিন্তু নিষ্ঠুর পাষাণী হলেও আমি মানুষ এবং রাপেক আমার বন্ধু। ধোয়ার প্রয়োজনেই হোক কিংবা মানবতার খাতিরে, রাপেকের কালা চাদর আমি ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।
ভুলে যাওয়ার বাতিকের মুখে ছাই দিয়ে আগের রাতেই কালা চাদর আমার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখি। কিন্তু বিধিবাম, ব্রহ্মপুত্রের জল উজান বইতে পারে কিন্তু রাপেকের গায়ে কালা চাদর শোভা পায় না। প্রকৃতির এই নিয়ম বিরুদ্ধ ঘটনা থেকে বাঁচাতেই সেদিন সন্ধ্যায় ফারিন শীতবস্ত্র নিয়ে বেরোয়নি এবং রাপেকের কালা চাদর বগলদাবা করে নিয়ে যায়।
তারপর শীত আসে শীত যায়, রাপেক কালা চাদরের মোহ মায়া ত্যাগ করে দ্বিগুণ উদ্যমে কাপড় কাচাতে মনোযোগ দেয়। শুধু হাতে কিছু টাকা-পয়সা হলেই ছোটখাটো একটা লন্ড্রী…।
য় ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়