জাবির ভর্তি পরীক্ষা : প্রক্সি দিতে গিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থী কারাগারে

আগের সংবাদ

এশিয়ান আর্চারিতে পদক খরা ঘোচাল বাংলাদেশ

পরের সংবাদ

নদীর মেয়ে কুলুকুলু

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নিতুদের বাড়ির উঠোন। তারপর শাকসবজির খেত। খেতের পাশ ঘেঁষে বয়ে গেছে ছোট নদী। নিতুদের ঘরের জানালা দিয়ে নদীটি দেখা যায়। কলকল কুলুকুলু গান শোনা যায়।
জানালার পাশেই নিতুর পড়ার টেবিল। পড়তে পড়তে যখন আর ভালো লাগে না, তখন নদীর দিকে তাকিয়ে থাকে নিতু। কী রূপসী নদী! আঁকাবাঁকা শরীর। কুলুকুলু গান গেয়ে জলের নাচন তুলে মায়ামাখা ছন্দ-সুরে ছুটেচলা নদী। সেই মিঠে সুর আর নরম জলহাওয়া নিতুকে ছুঁয়ে যায়। সাথে সাথে ফুরফুরে হয়ে যায় মনটা।
বিকেলে পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে নদীর পাড়ে খেলাধুলা করে নিতু। দু-পাড়ে সবুজ শস্যখেত। গাছগাছালি। কলমিলতার ঝোপ। পাখিদের ওড়াউড়ি। বালিহাঁসের পাখা ঝাপটানি। আর ডাকাডাকি। অপরূপ এই পরিবেশ উপহার দিয়েছে ছোট্ট নদীটি।
নিতুর মা এই নদীতেই বাড়ির সব ধুলো-ময়লা ফেলে। বাসি-পচা খাবার। ছেঁড়া পলিথিন। ভাঙা হাঁড়ি-পাতিল। কাচের টুকরো। রান্নাঘরে কুটনা-বাটনার ময়লা। উঠোনের খড়কুটো। আরো যত রকম উচ্ছিষ্ট দিনে-রাতে জমা হয়, সবই সকালবেলা ছুড়ে দেয় নদীর বুকে।
মায়ের কথামতো একদিন ময়লা ফেলতে গেল নিতু। একব্যাগ ময়লা ছুড়ে দিল নদীতে। টলটলে জল কেমন নোংরা হয়ে গেল। খুব খারাপ লাগল নিতুর। একটা আজব ব্যাপার হলো, জলে কোনোকিছু ফেললে ঝুপ করে শব্দ হয়, কিন্তু নদীটা ‘উহ্’ করে ককিয়ে উঠল। নিতুর কাছে সেরকমই মনে হলো। আমরা হঠাৎ আঘাত পেলে যেরকম শব্দ করি, ঠিক সেরকম। ভীষণ অবাক হলো নিতু। মনে মনে ভাবল, নদীর বুকে ময়লা ছুড়ে মেরেছি বলে ব্যথা পেয়েছে নদী। এমন ভুল আর করা যাবে না। মাকেও বলব কথাটা। নদীর ব্যথায় খুব কষ্ট পেল নিতু।
নিতু যখন বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করেছে, এমন সময় পেছন থেকে ডাক শুনতে পেল।
– এই যে নিতু, একটু দাঁড়াও। কথা আছে।
নদী যে ওকে ডাকছে, এটা বুঝে গেল নিতু। কারণ খুব কাছাকাছি কোনো মানুষ নেই। পেছন ফিরে তাকাতেই নদী ছলছল কলকল কণ্ঠে বলল- নদীর ভাষা ক’জনে বোঝে? কিন্তু তুমি আমার জলের ভাষা বুঝতে পেরেছ।
নিতু বলল- তাই নাকি নদী? কিন্তু তুমি আমার নাম জানলে কী করে?
নদী বলল- জানব না কেন? আমার পাড় ঘেঁষেই তোমাদের বাড়ি। তোমার মা-বাবা তোমাকে ডাকে, খেলার সাথীরা নাম ধরে ডাকাডাকি করে। প্রতিদিন অনেকবার তোমার নাম শুনতে পাই। শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে।
-এই দেখো, আমি কত্ত বোকা! তুমি আমার নাম জানো, অথচ তোমার নাম-পরিচয় কিচ্ছু জানি না আমি।
রুপালি ঠোঁটে হেসে হেসে নদী বলল- এই মেয়ে, এতে নিজেকে বোকা ভাববার কী আছে? এই তো জেনে যাচ্ছ এক্ষুনি। ওই যে বড়ো নদীটা, আমি ওই নদীর মেয়ে। আমার নাম কুলুকুলু। কেন এরকম নাম হলো, তাও বলি। আমি কুলুকুলু সুরে গান গেয়ে নেচে নেচে ছুটে চলি। তাই আমার নাম রাখা হয়েছে কুলুকুলু।
– বাহ, কী সুন্দর নাম! আমার খুব পছন্দ হয়েছে। এখন থেকে তোমাকে আমি কুলুকুলু বলেই ডাকব।
– তা যদি ডাকো, আমি ভীষণ খুশি হব। শোনো নিতু, তোমাকেও কিন্তু খুব ভালো লেগেছে আমার। নদীদের সুস্থ থাকতে হলে, সুন্দর থাকতে হলে তোমার মতো ভালো বন্ধু থাকা চাই। কেননা, তুমি নদীর ভাষা বোঝ। নদীর কষ্টে তুমি কষ্ট পাও। ময়লা ফেলে নদীর জল দূষিত করতে চাও না।
– কেন চাইব? তোমাকেও আমি বন্ধু বলেই জানি। বন্ধুর শরীরের ওপর বাসি-পচা ময়লা ফেলব কেমন করে?
হঠাৎ নিতুর মায়ের ডাক শোনা গেল। এই নিতু, ওখানে দাঁড়িয়ে কার সঙ্গে কথা বলছিস? আর কাউকে তো দেখছি না।
নিতু চেঁচানো গলায় মাকে জানাল- আরো একজন আছে, মা।
– কই? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। একা একা ভূতের সঙ্গে কথা বলছিস না তো?
নিতু হেসে হেসে জবাব দিল- হ মা, কুলুকুলু ভূতের সঙ্গে কথা বলছি!
নিতুর কথা শুনে নদীর মেয়ে কুলুকুলু না হেসে পারল না। রুপোর জলের ঠোঁটে হেসে হেসে, চপল জলের পায়ে নেচে নেচে বয়ে যেতে লাগল।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়