ডিএমপি কমিশনার : স্মার্টকার্ড লাইসেন্সের প্রাপ্তি স্বীকার রসিদ থাকলে মামলা নয়

আগের সংবাদ

ইইউ-চীন-যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের অঙ্গীকার > ৫০ বছরেই ‘কার্বন নিরপেক্ষ’ : এক হাজার কোটি ডলার তহবিলের নিশ্চয়তা, উষ্ণতা বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখা

পরের সংবাদ

টাকা দিয়েও মেলেনি সোলার অন্ধকারে চরের বাসিন্দারা

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: নভেম্বর ৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আলী ইব্রাহিম : প্রধানমন্ত্রীর সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যেসব দুর্গম এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি সেসব জায়গায় সোলার স্থাপনের মাধ্যমে আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত এলাকা এবং চর এলাকায় সৌরশক্তির উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে চরাঞ্চলে ৬ হাজার ৩৩৫টি পরিবারে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করার কথা। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই কাজ অসমাপ্ত রেখেই কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থা পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (পিডিবিএফ)। ফলে এক বছর আগে সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিয়েও সোলার পাচ্ছেন না তিস্তা পাড়ের শ্রমজীবী মানুষ। এতে মহাবিপাকে পড়েছেন চরাঞ্চলের বাসিন্দারা। আর পিডিবিএফের এই প্রকল্পের কাজ করা প্রতিষ্ঠানও সরবরাহ করা সোলার প্যানেল নিয়ে পড়েছে বিপাকে।
সরজমিন রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা পাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরে ধার-দেনা করে আলোর আশায় পিডিবিএফের এই প্রকল্পের আওতায় সোনালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৯৩০ টাকা করে সোনালী ব্যাংকে জমা দেন গ্রাহকরা। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় তিন মাসের মধ্যে সোলার স্থাপনের কথা থাকলে বছর শেষেও মিলছে না সোলার। রংপুর সদরের হালিয়াখালি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে শত শত গ্রাহক টাকা দিয়েও সৌর বিদ্যুৎ পাননি। টাকা জমা দেয়ার পরও সোলার না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ তারা।
হলখালি বাজারে এমন শতাধিক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এখনো জানেন না মাঝপথে প্রকল্প গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। তিস্তা পাড়ের প্রত্যন্ত চরের এসব বাসিন্দা এখনো মনে করেন তাদের ঘরে জ্বলে উঠবে সৌর বিদ্যুতের আলো। রংপুরের চর অধ্যুষিত উপজেলা গঙ্গাচড়ার গঙ্গাচড়া, কোলকোন্দ, বড় বিল, ঘজঘণ্টা, বেতগাড়ী, ল²ীটারি, নোহালি, মর্ণেয়া, আলমবিদিতা ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার গ্রাহক টাকা দিয়েও সোলার পাচ্ছে না।
নোহালি ইউনিয়নের বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম জানান, চরাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় খুব সমস্যা হচ্ছে। এই জন্য ধার-দেনা করে সৌর বিদ্যুতের সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রায় ৫ হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে পিডিবিএফের হিসাবে জমা দিয়েছি। তিন মাসের মধ্যে সোলার স্থাপনের কথা থাকলেও বছর শেষ হয়ে গেছে। আদৌ সোলার পাব কিনা জানি না। এই গ্রাহক আরো বলেন, সৌর বিদ্যুৎ থাকলে অন্তত অন্ধকারটা একটু ঘুচানো যেত। বাচ্চারাও ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারত। একই কথা জানান নোহালি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফজলু নন, এমন শত শত গ্রাহক। তাদের দাবি- আমরা টাকা চাই না, সোলার চাই।
এ ব্যাপারে গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু ভোরের কাগজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান চরাঞ্চলের মানুষ আলোকিত হন। অর্থ জমা নিয়ে যারা এতদিন ধরে সোলার দিচ্ছে না, তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। যত শিগগির সম্ভব এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা উচিত বলেও মনে করেন ইউনিয়ন পরিষদের এই চেয়ারম্যান।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিডিবিএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহম্মদ মউদুদউর রশীদ সফদার ভোরের কাগজকে বলেন, এই প্রকল্প নিয়ে অনেক সমস্যা তৈরি হয়েছে। যারা টাকা জমা দিয়েছিল তাদের অধিকাংশকে সোলার দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। আর যেসব গ্রাহক এখনো টাকা দিয়ে পাননি, তাদের বিষয়টি আমরা আগামী বোর্ড মিটিংয়ে তুলব। এছাড়া যেসব টিকাদার এই প্রকল্পের কাজ করেছেন, তাদের বিষয়টিও আমরা বিবেচনায় নেব বলেও জানান এই এমডি।
পিডিবিএফ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎবিহীন প্রত্যন্ত এলাকা এবং চর এলাকায় সৌরশক্তির উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে চরাঞ্চলে ৬ হাজার ৩৩৫টি সোলার স্থাপনের কথা। এই প্রকল্পে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজ পায় ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। ডকইয়ার্ড থেকে কাজ পায় সোলারে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ইলেক্টো বাংলাদেশ লিমিডেট (এসইবিএল)। এসইবিএল সৌর বিদ্যুতের প্যানেলসহ অনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি আমদানি করে কাজও করে আসছিল। হঠাৎ করে গত মার্চে অর্থাৎ গত বছরের মার্চে কোনো ধরনের নোটিশ ছাড়াই অলিখিতভাবে প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (পিডিবিএফ)। বারবার এসইবিএলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এমনকি পিডিবিএফের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধের কোনো কারণও বলা হয়নি। প্রকল্প এলাকায় পড়ে থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ব্যাপারে সোলার ইলেকট্রো বাংলাদেশ লিমিটেডের (এসইবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডি এম মজিবর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই কোনো ধরনের নোটিস ছাড়াই কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বারবার পিডিবিএফের দ্বারস্থ হলেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। আমাদের সরবরাহ করা সোলার প্যানেলসহ যন্ত্রপাতি প্রকল্প এলাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলছে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়