সম্প্রীতির জমিনে শকুনের চোখ

আগের সংবাদ

ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান এখন ‘মেটা’

পরের সংবাদ

অব্যবস্থাপনায় লোকসান গুনছেন সৈয়দপুরের শুঁটকি ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

জিকরুল হক, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে : উত্তরাঞ্চলের শুঁটকি মাছের সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে সৈয়দপুরে। পাইকারি ও খুচরা শুঁটকি বেচাকেনার এটি বৃহৎ মোকাম। পাবনা, নাটোর, নওগা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, ভারত ও মিয়ানমান থেকে শুঁটকি উৎপাদনকারীরা সৈয়দপুরে আসেন শুঁটকি বেচতে। পাশের দেশে ভারতে যে দেশি পুঁটি মাছ রপ্তানি হয় তা সৈয়দপুরের শুঁটকি পল্লী থেকেই। প্রতি বছর প্রায় ১০০ কোটি টাকা লেনদেন হয় এখানে। পাইকারি শুঁটকি কেনাবেচা হয় ১৩টি আড়তে। খুচরা ব্যবসার জন্য রয়েছে ৫০টিরও বেশি দোকান।
সারা বছর ধরে চলে শুঁটকির কেনাবেচা। উত্তরাঞ্চলের সব হাট-বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা শুঁটকি কিনতে আসেন এই বাজারে। তবে শুঁটকি সংরক্ষণে নেই আধুনিকতার ছোঁয়া। সেকেলে টাইপের শুঁটকি সংরক্ষণ করায় এতে পোকা ধরে নষ্ট করে ফেলে। পরে পোকা ধরা শুঁটকি পোল্ট্রি ফিড হিসেবে ব্যবসায়ীদের বেচতে হয় মাগনা দরে। এতে করে ব্যবসায়ীদের লাভের চেয়ে লোকসানের বোঝা বেড়ে যায়।
আগে ডিটিটি পাউডার দিয়ে শুঁটকি সংরক্ষণ করা হতো। এই ডিটিটি পাউডার স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় সরকারি নজরদারি বেড়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা শুঁটকিতে এমন ধরনের কীটনাশক আপাতত ব্যবহার করছে না। গোডাউনজাতকৃত শুঁটকি বেশিদিন ঘরে থাকলে পোকা ধরে। আর পোকা খাওয়া শুঁটকি খাওয়ার উপযোগী থাকে না। সে কারণে বছর শেষে পোকা ধরা শুঁটকি হয় না খাওয়ার উপযোগী। সে জন্য বছর শেষে পোকা ধরা শুঁটকি পানির দামে বেচতে হয় পোল্ট্রি খামারি ও মাছ চাষিদের কাছে। গেল বছর প্রায় আট কোটি টাকার ক্ষতির শিকার হয়েছেন শুঁটকি ব্যবসায়ীরা।
অনেক ব্যবসায়ীর পুঁজিও গায়েব হয়ে গেছে। করোনার ছোবল ও পরিবহন বন্ধ থাকায় করোনাকালে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা সাধারণ সময়ের চেয়ে তিনগুণ ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
কথা হয় খুচরা শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাছেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, শুঁটকির ব্যবসার সঙ্গে ব্যবসায়ীসহ প্রায় ৭০০ মানুষ জড়িত। ব্যবসায় মন্দাভাব সৃষ্টি হওয়ায় এ কাজের সঙ্গে জড়িত অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শুঁটকি বাছাইয়ের কাজে জড়িত শতাধিক মহিলা কাজ হারা হয়ে পড়েছেন। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। তাদের দিতে হয় কিস্তির টাকা। কিন্তু ব্যবসায় মন্দা শুরু হওয়ায় কিস্তির টাকা পরিশোধের ভয়ে অনেকে আত্মগোপন করে থাকছেন। এ জন্য শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ঘুরে দাঁড়াতে তিনি স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার দাবি জানান।
কথা হয় শুঁটকি মাছ আড়ত মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক শেখ দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। ভোরের কাগজকে তিনি বলেন, সিজনের সময় শুঁটকি কিনে গুদামজাত করা হয়। পরে তা ধীরে ধীরে করা হয় বিক্রি। কিন্তু দীর্ঘ সময় শুঁটকি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
শুঁটকিতে পোকা ধরলে তা খাওয়ায় উপযোগী থাকে না। এ কারণে পোকা ধরা শুঁটকি বলতে গেলে পানির দামে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী ও মাছের খামারিদের কাছে বিক্রি করতে হয়। এতে করে লোকসানের বোঝা বাড়তে থাকে।
প্রতিজন আড়তদার ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন। ব্যবসায়ীদের লোকসানের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ঋণ সুদে-আসলে বাড়ছে। এমনকি ব্যাংক পাওনা আদায়ে দিচ্ছে বারবার তাগাদা। তার মতে শিল্প মন্ত্রণালয় যদি শুঁটকি সংরক্ষের জন্য হিমাগার (কোল্ড স্টোরেজ) নির্মাণ করে দেয়, তাহলে আমরা ব্যবসায়ীরা হিমাগার ভাড়া নিয়ে সেখানে শুঁটকি সংরক্ষণ করতে পারব। এতে করে শুঁটকির যেমন ক্ষতি হবে না, ব্যবসায়ীরাও মুনাফা করতে পারবেন। বাড়বে সরকারের আয়। আর মানুষ পাবে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি। এ জন্য তিনি ব্যবসায়ীবান্ধব জনহিতৈষী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়