পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

ভয়হীন রাফিন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

দুপুর বেলা লাঞ্চ শেষ করেও ডাইনিং টেবিল ছাড়তে ইচ্ছে হয় না রাফিনের। ডাইনিং রুম থেকে বাড়ির পেছন দিকের বিশাল বাগানটি চোখে পড়ে। কেমন ছায়া ঘেরা। মায়াময়। ফলের বাগানের শেষদিকে শাল-সেগুনের গাছ। রাফিন সেদিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। তার হঠাৎ মনে পড়ে যায়, গতকাল স্কুল থেকে পিকনিকে গাজীপুরের এক রিসোর্টে যাওয়ার কথা। সেদিন রিসোর্টে দুটি ক্ষুধার্ত শিশু তাদের কাছে খাবারের জন্য হাত পেতেছিল। ওরা কেউই দেয়নি। ওখান থেকে চলে আসার পথে অবশ্য রাফিনের মন খারাপ হয়েছিল। আহারে ছোট শিশু দুটি কতই না ক্ষুধার্ত ছিল। ইস ওদের কলা আর পাউরুটিগুলো দিলেও হতো।
নাহ আর পড়ালেখা হবে না। কী হচ্ছে এসব? চকোলেট হাওয়া, কলা হাওয়া, মিষ্টি হাওয়া। রাফিনের পছন্দের সব খাবারই হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। উড়ে যাচ্ছে। কোনো ভূতের কাণ্ড এসব? রাফিন নিজেকে যাচাই করে দেখল, সে এখনো ঠিক আছে। মাথাটাও ঠিকমতো কাজ করছে। তাহলে এসব হচ্ছে কেন? রাফিন কি পাগল হয়ে যাচ্ছে? পাগল হলে নাকি মানুষ উল্টাপাল্টা দেখে।
আজ ভুনা খিচুড়ি রান্না হয়েছে। রাফিন আগে আগে খেতে বসে গেল। ওমা, কে নিয়ে যাচ্ছে ডিমটি? রাফিন দেখল কেউ একজন প্লেটের ডিমটি তুলে নিয়ে যাচ্ছে। দশ হাত লম্বা একটি হাত এসে ডিমটি নিয়ে ক্রমেই ছোট হতে হতে মিলিয়ে গেল। রাফিন অজ্ঞান হয়ে গেল।
রাফিন, টেবিলে ঘুমিয়ে গেলি নাকি? মায়ের ডাকে জ্ঞান ফেরে রাফিনের।
রাফিন বলল- ভূত এসে আমার প্লেটের ডিমটি নিয়ে গেছে মা!
– ভূত কই? এই যে ডিম। ডিম তো তোর প্লেটেই আছে! মায়ের জবাব।
রাফিন ভয়ে-লজ্জায় চুপ করে গেল।
দিন দিন এ রকম হয়ে যাচ্ছিস কেন, রাফিন? মা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে তাকে। রাফিন ঘটনার আকস্মিকতায় নিশ্চুপ।
রাফিনের খুব কষ্ট হচ্ছে। রাফিনকে বোধ হয় কেউ বুঝতে পারছে না। রাফিনও সব কথা খুলে বলতে পারছে না। বাইরের দিকে উদাস দৃষ্টি রাফিনের। হঠাৎ রাফিন দেখতে পেল, বড় নানাভাই বাসায় ঢুকছে।
খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নানাভাই রাফিনকে নিয়ে একান্তে বসলেন। অনেক কথা হলো। সব কথা শুনে নানাভাই বললেন- তোমাদের উচিত ছিল রিসোর্টের ক্ষুধার্ত শিশু দুটিকে কিছু খাবার দেয়া। ক্ষুধার্ত মানুষ বা অসহায়ের পাশে সবসময় থাকতে হয় নানাভাই। ভবিষ্যতে কখনোই এ রকম কাউকেই ফিরিয়ে দিও না।
রাফিন বলল- আর কখনো না, নানাভাই।
নানাভাই রাফিনের জন্য দোয়া করলেন। শেষে বললেন- আর কখনো অশুভ কিছু দেখবে না নানাভাই। এখন তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ। এখন থেকে মন দিয়ে পড়ালেখা করো। মানুষের মতো মানুষ হও।
রাফিন সুবোধ বালকের মতো মাথা নাড়ে। আর মনে মনে শপথ করে, এখন থেকে মানুষকে ভালোবাসবো, মানুষের মতো মানুষ হবো।
এরপর থেকে ভয়হীন রাফিন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়