পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে আছেন অর্ধলাখ প্রবাসী

আগের সংবাদ

পোশাক খাতে ক্রয়াদেশ বাড়ছে

পরের সংবাদ

পাখির ছানা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

– আসতে পারি স্যার?
– হ্যাঁ এসো।
কনক প্রধান শিক্ষকের কক্ষে ঢুকে দাঁড়িয়ে থাকে। প্রধান শিক্ষক টেবিল কী সব জরুরি কাগজপত্র দেখছেন, আর সই করছেন। কক্ষে আরো দুজন সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষককে কাজে সহায়তা করছেন। কাজ শেষে প্রধান শিক্ষক কনককে জিজ্ঞেস করলেন- কী ব্যাপার কনক?
– স্যার কালকে আমার একটু ছুটি লাগবে।
– কেন?
কনক নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। আসল কারণটা বলবে কী না চিন্তা করছে। নাকি মিথ্যা বলবে? কনক ইতস্তত করছে, প্রধান শিক্ষকও তা বুঝতে পারছেন। তিনি বলেন- কী ব্যাপার তুমি এত ইতস্তত করছো কেন?
– না স্যার সত্য কথাটা বলবো?
– হ্যাঁ, সত্যটাই তো বলবে।
– স্যার আগামীকাল আমাদের বাড়িতে গাছ কাটতে কিছু লোক আসবে।
– আসবে তো কী হয়েছে?
– স্যার যে গাছটা কাটবে, সে গাছটার ওপরে একটা ডালে একটি পাখির বাসা আছে। ওই বাসায় আছে ছোট দুটো ছানা, খুব সুন্দর স্যার। ওদের মা-বাবাদের আমি রোজ খাবার দিই, ওরা এদের ছানাদের নিয়ে খাওয়ায়। আমার স্যার খুব ভালো লাগে।
– তুমি কি গাছ কাটা বন্ধ করতে পারবে? তোমার বাবা যখন গাছটি বিক্রিই করে ফেলেছে গাছ তো তারা কাটবেই।
– তা কাটবে স্যার, আমি থাকলে ওদের বলবো বাসাওয়ালা ডালটা আগে কেটে দিতে। তারপর আমি ডালটা এনে আমাদের বাড়ির সামনের গাছে বেঁধে দেবো। এতে ছানাগুলো বেঁচে যাবে। আমি না থাকলে কেউ এ কাজ করবে না স্যার।
প্রধান শিক্ষক একটু ভাবলেন, ব্যাপারটা হয়তো অন্যরকম বিধায় কে কী মনে করে কিংবা কোন হাসি তামাশার উদ্রেক করে কী না- এই কারণেই হয়তো কনক কথাটা বলতে ইতস্তত করছিলো।
তিনি কনককে বললেন- তুমি এবার প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দেবে, তোমার এসময়ে অনুপস্থিতি আমাদের কাম্য নয়। তবুও কাল তোমার ছুটি মঞ্জুর।
কনক হাসি মুখে বাড়ি ফেরে। পরের দিন সকালে কনকদের বাড়িতে গাছ কাটতে লোক আসে। সবার হাতে দা, কুড়াল। কনক ঘর থেকে বের হয়ে একজনকে বলে- শোন ভাই, গাছ কাটার আগে তোমাকে আগে গাছে উঠে ঐ যে ডালে পাখির বাসা দেখা যাচ্ছে, সেই ডালটা কেটে এনে দিতে হবে। সাবধানে যেন পাখির ছানাগুলো পড়ে না যায়।
গাছ কাটা লোকগুলো অবাক হয়ে কনকের কথা শোনে আর ভাবে- কতো জায়গায় তো গাছ কাটলাম কতো পাখির বাসা ভেঙে গেল কেউ তো এভাবে বলেনি!
কনকের বাবা এসে ওদের বলেন- ছেলে যখন বলছে, তোমাদের এ কাজটা করে দিতে হবে।
আর কনককে বাবা বলেন- এই জন্যই তাহলে বাবা তুমি আজকে ছুটি নিলে?
কনকের মুখে হাসি। একজন গাছে ওঠে, পাখির বাসাওয়ালা ডালটা অতি সযতনে কেটে আনে। দেখে বাসায় সদ্যজাত দুটো ছানা, ওদিকে উড়ে উড়ে পাখিগুলো বাচ্চাদের জন্য কী আকুতিই না জানিয়ে যাচ্ছে!
একটি সিঁড়ি এনে ডালটি কনক বাড়ির সামনে একটি গাছের ডালে শক্ত করে বেঁধে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে মা ও বাবা পাখি উড়ে আসে সেই গাছে। কী এক মমতায় ছানা দুটোকে আগলিয়ে রাখে। ওদিকে বাড়ির পিছনে গাছ কাটছে কাঠুরেরা। কনক নিচে মাটিতে খাবার দেয়। পাখিরা নিচে নামে। কী এক অনাবিল আনন্দে কনক চেয়ে চেয়ে দেখে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়