টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সফল পাঁচ অধিনায়ক : তাইফ রহমান রাফি

আগের সংবাদ

সড়কে নেই ‘ডিজিটাল’ ছোঁয়া

পরের সংবাদ

২০ বছরেও এমপিওভুক্ত হয়নি নাটোরের ১৫ কলেজ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, নাটোর : নাটোরের ১৫টি কলেজ প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়নি। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই শিক্ষকতা ছেড়ে পেটের দায়ে বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। কেউ দিয়েছেন মুদি দোকান। কেউ করছেন দোকানে মালামাল সরবরাহ। কেউ অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করছেন। নতুন নীতিমালার বেড়াজালে আটকে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অবকাঠামো- সব আছে। নেই শুধু শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। বিনা বেতনে চাকরি করে ইতোমধ্যে কলেজ ছেড়ে গেছেন আট শিক্ষক। একই অবস্থা বড়াইগ্রাম উপজেলার বড়াইগ্রাম মহিলা কলেজ ও জোনাইল মহিলা কলেজ, নলডাঙ্গা উপজেলার মোমিনপুর মহাবিদ্যালয় ও মির্জাপুরদিঘা আইডিয়াল মহাবিদ্যালয়, সদরের এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মহাবিদ্যালয়, পীরগঞ্জ আদর্শ মহাবিদ্যালয়, ইয়াছিনপুর মহাবিদ্যালয়, বাগাতিপাড়া উপজেলার চাঁদপুর টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের সাধারণ শাখা, তমালতলা মহিলা কলেজ, তমালতলা টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট, তমালতলা পৌর টেকনিক্যাল মহিলা কলেজ, চিথলিয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ ও লালপুর উপজেলার কলসনগর কলেজের।
১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বেশ আড়ম্বরপূর্ণভাবে এসব কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। গড়ে তোলা হয় অবকাঠামো। শুরু থেকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সব বিষয়ে দেয়া হয় শিক্ষক নিয়োগ। এমপিও হবে, বেতন-ভাতা পাওয়া যাবে, আশায় দিন গুনতে থাকেন কর্মরতরা। কিন্তু কিছুই হয়নি। উল্টো দিন দিন কমেছে শিক্ষার্থী সংখ্যা।
সরজমিন অনুসন্ধানে গেলে বড়াইগ্রাম মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুব-উল-হক বাচ্চু বলেন, ১৯৯৮ সালে চারটি বিভাগ ও ২০টি বিষয় নিয়ে সুবিশাল সেমিপাকা ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় তার কলেজ। শুরু থেকে পর্যাপ্ত ছাত্রী ভর্তি হয়। ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত ছাত্রী পাসও করেছে। ২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ছিল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র। কিন্তু ২৩ বছরে এমপিওভুক্ত না হওয়ায় পেটের দায়ে এখন কলেজের ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক শফিকুল ইসলাম দিয়েছেন মুদি দোকান। আর ইসলামের ইতিহাসের প্রভাষক অসীম কুমার দেব দিয়েছেন ভুসিমালের দোকান। এনজিওসহ নানা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে শিক্ষকরা জীবনধারণের চেষ্টা করছেন। একজন কর্মচারী ইতোমধ্যে মারা গেছেন। জীবিত ২৮ জনের প্রত্যেকের ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে অবসরে যাওয়ার বয়স হবে। অথচ এখনো বেতনই হয়নি। বাগাতিপাড়ার দয়ারামপুর কলেজ অধ্যক্ষ গোলাম মুর্শেদ মিন্টু বলেন, তার কলেজে শিক্ষার্থী সংকট নেই। প্রতি বছরই গড়ে ৯০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। সর্বশেষ এমপিওভুক্তির সময় পাসের হার এক শতাংশ কম থাকায় তার কলেজ বাদ পড়েছে।
সদরের এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ কাজী রিয়াজুল হক মোমিন জানান, কলেজের হিসাববিজ্ঞানের প্রভাষক বেলাল হোসেন ১৯ বছর টিউশনি করে তিন ছেলেমেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। করোনায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও কোনো চাকরি জোটেনি। বাধ্য হয়ে একটি কোম্পানির সেলসম্যানের কাজ নিয়েছেন।
সদরের খালেদা জিয়া মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ইব্রাহিম হোসেন বলেন, তাদের কলেজের দ্বিতল ভবন। ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী সবই ছিল। দীর্ঘদিন ধরে এমপিও না হওয়ায় প্রথমে বিজ্ঞানের শিক্ষকরা চলে যান। কেউ কেউ পেশা না ছাড়লেও বিকল্প আয়ের পথ খুঁজতে গিয়ে শিক্ষাদানে অমনোযোগী হয়ে পড়েছেন। কমেছে শিক্ষার্থীও।
বাংলাদেশ নন এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন নবী বলেন, সরকারের নীতিমালা মেনেই এসব প্রতিষ্ঠান তৈরি ও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যে কোনো নীতিমালা হয় ভবিষ্যতের জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন নীতিমালার দোহাই দিয়ে ২৩ বছর আগের প্রতিষ্ঠানকেও এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ফজলুর রহমান জানান, সরকারের নীতিমালার বাইরে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। নতুন নীতিমালা প্রণয়নের দিন থেকে আর আগের নিয়ম কার্যকর নয়। সর্বশেষ নীতিমালা অনুসারেই গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়