কাগজ প্রতিবেদক : সবচেয়ে স্থলবন্দর বেনাপোলে চলছে স্মরণকালের দীর্ঘতম যানজট। ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, পথচারীসহ ভারত গমনেচ্ছুক ব্যক্তিরা। সীমান্তের দুই প্রান্তে ট্রাক টার্মিনাল না থাকায় বেনাপোল বন্দরে আসা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে সড়কের উপর রাখেন চালকরা। এতে ছয় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে যানজট। এক মাস ধরে বেনাপোল বন্দরের রপ্তানির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে প্রায় ২ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক। দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকা এসব গাড়ি থেকে তেল, ব্যাটারি, প্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরির অভিযোগও আসছে।
এ ব্যাপারে বন্দর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারত রপ্তানি পণ্যের ট্রাক গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দেয়ায় এ যানজট শুরু হয়েছে। এছাড়া হঠাৎ করে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ায় ও পণ্যবাহী ট্রাক বেশি আসায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ সংকট কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ভারত প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ৩৫০-৪০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি করলেও বাংলাদেশি পণ্য নেয়ার ক্ষেত্রে তারা বরাবরই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। ভারত আগে ১৫০-২০০ ট্রাক রপ্তানি পণ্য গ্রহণ করলেও বর্তমানে ১০০-১২০ ট্রাক পর্যন্ত পণ্য গ্রহণ করছে। দফায় দফায় আলোচনা করেও এর কোনো সুরাহ করা যায়নি।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাইয়ে বেনাপোল দিয়ে ভারতে ২৭৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা মূল্যের ২৬ হাজার ৩৫ টন পণ্য রপ্তানি করা হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮৪ কোটি ৩ লাখ টাকা মূল্যের ২৪ হাজার ৭১০ টন পণ্য।
২০২০-২১ অর্থবছরের আগস্টে ২৫৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা মূল্যের ২৩ হাজার ১১৫ টন পণ্য রপ্তানি করা হয়। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৪০ কোটি ৯২ লাখ টাকা মূল্যের ৩০ হাজার ৩৯৩ টন পণ্যে। ২০২০-২১ সেপ্টেম্বরে রপ্তানি হয় ৬০০ কোটি ৮১ লাখ টাকা মূল্যের ৩৯ হাজার ৩৮৩ টন পণ্য। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৩৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা মূল্যের ৭৭ হাজার ৩৫০ টন পণ্যে। গত বছর থেকে এ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রপ্তানি বেড়েছে ৪৩ হাজার ৫৭০ টন পণ্য।
এ ব্যাপারে আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৫০ ট্রাক তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে যানজটের কারণে তা কঠিন রূপ নিয়েছে।
এছাড়া ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি পণ্য গ্রহণে ‘ধীরগতি নীতি’ অনুসরণ করায় রপ্তানি বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে আমদানি করা পণ্য আসতেও অনেক দেরি হচ্ছে।
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্স সাব কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হতো। বর্তমানে এ আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়নি সেভাবে। রপ্তানি পণ্যের ট্রাক রাখার কোনো টার্মিনাল না থাকায় প্রধান সড়কসহ আশপাশের সড়কে ট্রাক রাখতে হচ্ছে। ফলে বেনাপোল বন্দর এখন কার্যত অচল।