গুলিস্তানে বাস উল্টে ২ কাবাডি খেলোয়াড় আহত

আগের সংবাদ

মণ্ডপে হামলার নেপথ্যে কারা

পরের সংবাদ

রেণু পোনা উৎপাদনে এক নারী উদ্যোক্তার ‘বিল্পব’

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মমতাজ হাসান রিটু, উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) থেকে : মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহে অবদান রাখছে মাছ। চলমান করোনাকালেও মাছে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। মহামারি পরিস্থিতিতে এ অর্জন এক কথায় অসাধারণ। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের মৎস্য অধিদপ্তরের শক্তিশালী ভিত্তি থাকার কারণে। দেশের ১১ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় মৎস্য খাতে। প্রাণিজ আমিষের ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ। ফলে দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি, উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও আর্থিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অপরিসীম। সেখানে চাষকৃত মাছের অবদানটাই সবচেয়ে বেশি। স্বনির্ভর আত্মকর্মসংস্থান ও দেশের উন্নয়নে অংশীদারিত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে নিজ উদ্যোগে হ্যাচারি করার পরিকল্পনা নেন নারী উদ্যোক্তা রীবলী ইসলাম কবিতা।
সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ার চড়–ইমুড়ি গ্রামের মোফাজ্জল হোসেন বিলু মিয়ার স্ত্রী রীবলী ইসলাম কবিতা নিজ উদ্যোগে প্যারাডাইজ এগ্রো হ্যাচারি এন্ড ফিসারিজ লিমিটেড নামে ২০০৫ সালে নিজেদের প্রায় ১০ একর জমিতে হ্যাচারির কার্যক্রম শুরু করেন। যুব উন্নয়নের মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই নারী উদ্যোক্তা শুরুতেই রেণু পোনা উৎপাদন ও বিক্রিতে ব্যাপক সাড়া পান। এলাকায় রেণু পোনার প্রচুর চাহিদা থাকায় অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে আর্থিক সহযোগিতার জন্য ব্যাংকে আবেদন করলে বিশ্ব ব্যাংকের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প হতে ঋণও পান সর্বমোট বিনিয়োগের ৪৯ শতাংশ। যা প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
ব্রুড থেকে উন্নত জাতের রেণু পোনা উৎপাদন করায় এবং সুলভমূল্যে সরবরাহ করায় আশেপাশের উপজেলা ও জেলা হতে মাছ চাষিরা এখান থেকে ব্যাপকহারে রেণু পোনা সংগ্রহ করেন। দেশীয় কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, মৃগেল, থাইপুঁটি, নাইলোটিকা, পাবদাসহ গলসার রেণু পোনা বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাসের মধ্যেই ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার কেজি উৎপাদন ও বিক্রি হয়। পাশাপাশি নিজের ৭-৮টি পুকুরে মাছ চাষ করে বছরে ১০ থেকে ১২ টন মাছ বড় করে বাজারজাত করেন।
এ ব্যাপারে রীবলী ইসলাম কবিতা জানান, স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে প্রায় ৮০টি পরিবারের জীবন-জীবিকার জন্য ব্যবস্থা হয়েছে হ্যাচারি ও পুকুর ঘিরে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ব্যাংকের ঋণের টাকা পরিশোধ করে আরো ৩ একর জমি ও নগদ বিনিয়োগ বাড়িয়েছেন হ্যাচারিতে। এলাকায় রেণু পোনার ব্যাপক চাহিদা থাকায় আরো বড় পরিসরে হ্যাচারির কার্যক্রম বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে তার।
হ্যাচারি ও পুকুরগুলোর চারপাশে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি ও দর্শনীয় কিছু অবয়ব গড়ে তোলার কারণে অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও বিনোদনপ্রেমীরা হ্যাচারি দর্শনে আসেন। এই নারী উদ্যোক্তা একজন বৃক্ষপ্রেমিকও। তিনি হ্যাচারি ও পুকুরের চারপাশে ফুল, ফল, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন সবজি চাষও করছেন। দেশীয় গাছের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জলপাই, আমড়া, কলা, পেঁপে, দেশি ও বিদেশি জাতের বরই, এমনকি কাশ্মিরের ১২টি আপেল গাছের চারা (প্লান্ট) রোপণ করেছেন। যা থেকে বছরে প্রচুর আয় হয়। দেশীয় সবজির মধ্যে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কুমড়া, ঝিংগা, পোল্লা ও বিভিন্ন শাক প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়।
এই হ্যাচারিকে কেন্দ্র করে তিনি গড়ে তুলেছেন শিশুদের জন্য নান্দনিক দর্শনীয় কিছু অবয়ব, যেমন- জাতীয় সংসদ ভবনের অবয়ব, তাজমহলের অবয়ব, রেলগাড়ি-রেলপথ, নাগরদোলাসহ শিশুদের বিভিন্ন খেলাধুলার রাইডস ও বিনোদনপ্রেমীদের জন্য পিকনিক স্পট। নারী উদ্যোক্তা আরো বলেন, মাছ চাষে উদ্যোগী ও বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা হ্যাচারি পরিদর্শনে আসেন বলেই মূলত তাদের জন্য এই বিনোদনের ব্যবস্থা। এ জন্য হ্যাচারির পাশাপাশি এর নামও দিয়েছি আমার ২ মেয়ের নামে রিয়া-রুপন শিশুপার্ক। তিনি বলেন আমার জায়গা থেকে আমি শতভাগ সফল। কেউ সাহস, মনোবল, ইচ্ছা, চেষ্টা, মনন দিয়ে কাজ করলে সফল হবেই।
২০১৩ সালে রেণুপোনা উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও মৎস্য চাষে দেশের মধ্যে ব্যাপক সফলতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মৎস্য অধিদপ্তরের জাতীয় পুরুস্কার লাভ করেন তিনি। এ ব্যাপারে উল্লাপাড় উপজেলা সিনিয়র মৎস অফিসার বায়েজিদ আলম ভোরের কাগজকে বলেন, উল্লাপাড়ায় একটি সরকারী হ্যাচারি থাকলেও এখানে উৎপাদিত রেনু পোনায় এলাকার মৎস্য চাষিদের চাহিদা মেটে না। বেসরকারি পর্যায়ে প্যারাডাইজ এগ্রো হ্যাচারি এন্ড ফিশারিজ লিমিটেড রেণুু পোনা উৎপাদন করে উল্লাপাড়া তথা এই অঞ্চলের মৎস্য চাষিদের কিছুটা হলেও চাহিদা পূরণ করছে। আমরা কবিতার হ্যাচারির কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করছি ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, বঙ্গবন্ধুর স্ব-নির্ভর সোনার বাংলা গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বেসরকারি পর্যায়ে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে শিক্ষিত যুব সমাজ মাছ চাষে আরো এগিয়ে আসবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়