টার্গেট পূরণে সংশয়! : দুর্গাপূজায় ভারতে যাচ্ছে ২০০০ টন ইলিশ

আগের সংবাদ

এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেয়ার প্রক্রিয়া জানেই না ইসি

পরের সংবাদ

এক অদ্ভুত দৈত্যের গল্প

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কঠোর পরিশ্রমী কাঠুরে অবলাকান্ত। অত্যন্ত দরিদ্রও। কিন্তু সে কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করে না। কাউকে মিথ্যে আশ্বাস দেয় না। যেদিন যার গাছ কাটার কথা দেয়, সে সেদিনই সেই গাছ কাটে। অসুস্থ হলে ভিন্ন কথা। তার সততা ও কঠোর পরিশ্রমের জন্য গ্রামের সবাই তাকে খুব বিশ্বাস করে ও ভালোবাসে। যে কারো গাছ কাটার প্রয়োজন হলে অবলাকান্তকেই ডেকে পাঠায়। সে অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে গাছ কেটে দেয়।
একদিন এলাকার জমিদার বাবু পেয়াদাকে দিয়ে খবর পাঠালেন অবলাকান্তের বাড়িতে। সে জমিদার বাবুর বাড়িতে উপস্থিত হলো। জমিদার বাবু তাকে বললেন, ‘অবলাকান্ত, আমাদের বাগান বাড়িতে হাজার বছরের একটি পুরনো গাছ রয়েছে। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কখনো এই গাছের ছায়াও মাড়াতো না। কারণ গাছটি সুবিশাল ও বেশ মোটা। প্রায় কয়েক একর জায়গাজুড়ে এর অবস্থান। এই গাছের কারণে আমার বাগানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। তুমি যদি এই গাছটি কেটে দাও, তাহলে ঐ বাগানে আমি বিভিন্ন ফলের চারা রোপণ করব। তবে গাছটি কাটতে তোমার অনেক দিন লাগতে পারে। পারিশ্রমিক হিসেবে তোমাকে আমি প্রতিদিন দশটি করে রৌপ্যমুদ্রা দেবো।’
অবলাকান্তের কি সাধ্য আছে জমিদার বাবুর মুখের ওপর না বলার? কিন্তু সে জানে ঐ বৃক্ষে রয়েছে বিশাল এক গেছো দৈত্য। অনেককাল ধরে ঐ গেছো দৈত্যটা গাছের আশপাশে কাউকে যেতে দেয়নি। গেলেই সে তাকে মেরে ফেলে। তবে একটা কথা লোকমুখে শুনেছে সে- গেছো দৈত্য নাকি এমনি এমনি মারে না। অনেকগুলো প্রশ্ন করে, তারপর মারে।
অবলাকান্ত ভাবে- যাই হোক, বাঁচি আর মরি, জমিদার বাবুর হুকুম মানতেই হবে। তা না হলে আবার জেলখানায় পচে মরতে হবে।
পরের দিন অবলাকান্ত তার কুঠার নিয়ে সেই পুরনো গাছের দিকে এগিয়ে যায়। গাছের কাছে যাওয়ার আগেই মনে হচ্ছিলো কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে গেছে। অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অবলাকান্ত তার টর্চ জ্বালিয়ে গাছের দিকে এগিয়ে যেতেই হুঁ…হুঁ…হাঁ…হাঁ… করে বিকট শব্দে তার দিকে এগিয়ে আসে গেছো দৈত্য। অবলাকান্ত প্রথমে অনেকটা ভয় পেয়ে যায়। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে- কে তুমি ভাই? আগে তো কখনো দেখিনি। এত বিকট আওয়াজ করে আমাকে ভয় দেখাচ্ছো কেন?
গেছো দৈত্য বলে- ভাই! তুমি আমাকে ভাই ডাকলে? এখানে এর আগে যারা এসেছিলো, সবাই আমার শব্দ শুনেই কাঁপছিলো আর তাদের জামা ভিজিয়ে দিয়েছিলো। এই প্রথম কেউ আমাকে ভাই ডাকলো। তোমাকে আমি এত তাড়াতাড়ি মারব না। আগে বলো, কেন এখানে এসেছো?
– আজ্ঞে, জমিদার বাবু পাঠিয়েছেন। এই বিশাল বৃক্ষ কাটতে হবে। আমি জানতাম এখানে আসলে তুমি আমাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু কী আর করা? গরিব মানুষ। তার হুকুম তো মানতেই হবে।
– তোমার সাহস আছে বটে। মৃত্যুকে সামনে দেখেও ভয় পাচ্ছো না। শুনো, তোমাকে আমি দুটো ধাঁধা বলব, যদি উত্তর দিতে পারো তাহলে তুমি যা চাইবে তাই পেয়ে যাবে।
– মরার আগে শেষ চেষ্টা করে দেখতেই পারি। বলো তোমার ধাঁধা।
– বলো তো দেখি
অন্যকে সে দিতে আলো
নিজকে নিজে পোড়ায়
এমন মহান কে আছে এই
ক্ষণিকেরই ধরায়?
অনেক ভেবে চিন্তে অবলাকান্ত একটা উত্তর বের করেছে। কিন্তু যদি সেটা না হয়? যাক তবুও বলে ফেলি, এই ভেবে সে উত্তর দিলো।
– এটা মোমবাতি।
– আরে বাহ্! তুমি তো বেশ বুদ্ধিমান। এবার বলো
পরের তরে জীবন তাহার
পরের তরে বাঁচে,
পরের খুশি দেখলে সে যে
হাওয়ার তালে নাচে।
– এটা তো আরো সহজ। এর উত্তর হলো ‘গাছ’।
গেছো ভূত অবাক হয়। এই সামান্য কাঠুরে দুটি ধাঁধারই উত্তর দিয়ে দিলো! যাই হোক, পেরেছে যখন আমার দেয়া কথা তো রাখতেই হবে। এই ভেবে গেছো দৈত্য বলে- বলো কী চাও তুমি? সোনা, রুপা, হীরে, মানিক নাকি অন্যকিছু?
উত্তরে অবলাকান্ত বলে- আমি এসব কিছুই চাই না। আমার কেবল একটা চাওয়া, তুমি এক গাছ ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাও। আমি এই গাছ কেটে জমিদার বাবুর হুকুম পালন করব।
অবাক হয় গেছো দৈত্য। এমন মানুষ আছে! নির্লোভী আর সৎ। সে কাঠুরের কথামতো গাছ ছেড়ে চলে যায় এবং যাওয়ার সময় বলে যায়- তুমি ভালো থেকো ভাই। যখনই আমাকে ডাকবে আমি আসবো। দরকার হলে ডেকো।
অবলাকান্ত দীর্ঘ এক মাস পরিশ্রম করে গাছটি কাটতে সক্ষম হয়। জমিদার বাবু খুশি হয়ে তাকে পারিশ্রমিকের বাইরে আরো একশত স্বর্ণমুদ্রা দিল পুরস্কার হিসেবে। দেয়। এই গাছ কাটার পর অবলাকান্ত বেশ সুখেই দিন কাটাতে থাকে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়