মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ ২৬ সেপ্টেম্বর

আগের সংবাদ

রেলে বাড়েনি সেবার মান

পরের সংবাদ

দীর্ঘ ছুটির পর প্রথম স্কুল

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পাপ্পু বলল- স্যার, পল্টু আমাকে বিরক্ত করছে।
আতাউল স্যারের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। মেজাজ ফোরটি নাইনের কিছু কম। মেজাজ ফোরটি নাইন হলে দাঁতে দাঁত ঘষেণ আর তাতে কড়কড় শব্দ হয়। আতাউল স্যার বললেন- কীভাবে বিরক্ত করছে?
– কাগজের বল বানিয়ে ছুড়ে ছুড়ে আমার মাথায় মারছে।
আতাউল স্যার পল্টুর দিকে কয়েক পা এগোলেন। পল্টু ফ্যাচ করে একটা হাঁচি দিল। নকল হাঁচি। অমনি আতাউল স্যার ধপ করে থেমে গেলেন। বেশি আগানো যাবে না। তিন ফিট দূরত্ব ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। তারপর বললেন- ব্লাক উইল টেক নো আদার হিউ, বলতো এর অর্থ কী?
প্রশ্নটা পল্টুকেই করা হয়েছে। তারপরও পল্টু বলল- আমি বলবো স্যার?
– হু।
– মানুষ মরণশীল। হয়েছে স্যার?
– না। এর অর্থ, কয়লা ধুলে ময়লা যায় না।
– আমার উত্তরটা কাছাকাছি গিয়েছিল।
– কীভাবে কাছাকাছি গেল?
– দুটোই তো চিরন্তন সত্য।
– প্রায় দেড় বছর পর স্কুলে এলি, কিন্তু তোর আচরণ এতটুকু পাল্টায়নি।
– স্যার, দেড় বছর খুবই অল্প সময়। এতটুকু সময়ে মানুষের শরীর-মনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। মনে করেছিলাম অন্তত তিন/চার বছর স্কুল বন্ধ থাকবে। জীবনটাকে নিজের মতো গুছিয়ে নেব। বিজ্ঞানীরা সে আশার গুড়ে চকচকে বালি ঢেলে দিল। এত তাড়াতাড়ি ভ্যাকসিন বানানোর কোনো মানে হয়?
– শোন, আমিও তেমন কোনো চেইঞ্জ হইনি। আগের মতোই শাস্তি দেই। পাপ্পু, তুই উঠে গিয়ে পল্টুর কান ধরে দশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাক।
পাপ্পু কিছুটা চুপসে গেল। একটু আগে পল্টু একটা হাঁচি দিয়েছে। পল্টু বলল- স্যার, এ ধরনের শাস্তি আপাতত চলবে না। এখন তিন ফিট দূরত্ব একটা বিরাট ফ্যাক্টর।
– ঠিক আছে, তোর কান ধরবে না। তবে শাস্তি মাফ নাই। এ্যা সিনার নেভার গোজ আনপানিশড। তুই বারান্দায় গিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাক।
– কোন পায়ে দাঁড়াব স্যার?
– ডান পায়ে।
– সরি স্যার। আমি তো ন্যাটা। ডান পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারব না।
– ন্যাটা মানে?
– মানে ডেবরা।
– ডেবরা কী?
– স্যার, আমি ডান পা, ডান হাতে তেমন কিছু করতে পারি না। ক্রিকেট খেলার সময় বল করি বাম হাতে, ব্যাট করি বাম হাতে। ফুটবল খেলার সময় শুট নেই বাম পায়ে। স্যার, বলেন তো বাঁ পায়ে একটানা তিন দিন দাঁড়িয়ে থাকতে পারব। ডান পায়ে তিন সেকেন্ডও না।
– যা, বারান্দায় গিয়ে বাঁ পায়ে ত্রিশ মিনিট দাঁড়িয়ে থাক।
পল্টু বের হয়ে যাচ্ছিল। ফার্স্ট বেঞ্চের কাছে এসে কিসের সঙ্গে যেন পা আটকে প্রায় পড়ে যাচ্ছিল। কেনোমতে মিথুনকে জাপটে ধরে রক্ষা পেল।
মিথুন ক্ষেপে উঠল- এই করোনার যুগে তুই আমাকে জাপটে ধরলি!
– নিরুপায় হয়ে। পড়ে গেলে নিশ্চিত পা ভাঙতো। তখন আমি কোন পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম?
পা-টা কিসে আটকালো তা দেখতে গিয়ে সবার চোখ চড়কগাছ। ফার্স্টবয় বকুল ওর বেঞ্চের নিচে বড় এক চটের বস্তা নামিয়ে রেখেছে। ও কখন ওটা ক্লাসে আনল? কী আছে ওটার ভেতর?
বকুল নিবিষ্ট চিত্তে বই পড়ছিল। এতক্ষণ ধরে এতকিছু হচ্ছে সে তার কিছুই জানে না।
আতাউল স্যার বললেন- বকুল, এই বস্তায় কী?
বকুল বইটা বন্ধ করে দাঁড়াল। শান্ত কণ্ঠে বলল- হোমওয়ার্ক স্যার।
– হোমওয়ার্ক!
সবাই এক যোগে বিস্ফোরিত চোখে বকুলের দিকে তাকালো। মেয়েরা মুখ টিপে হাসছে।
আতাউল স্যার বললেন- কিসের হোমওয়ার্ক?
– স্কুল ছুটির আগে যে হোমওয়ার্ক দেয়া হয়েছিল।
– ওফ! তখন তো তুমি ক্লাস সিক্সে পড়তে। এখন তুমি ক্লাস এইটে।
– স্যার, আমি প্রতিদিন প্রতিটা বইয়ের এক চ্যাপ্টার করে হোমওয়ার্ক করেছি। সেভেনেও তাই।
– গুড বয়। ভেরি ভেরি গুড বয়।
জানালার পাশে বসা নীরা বলল- স্যার, আরো দুই বছর স্কুল বন্ধ থাকলে বকুল হয়তো পাঁচ টনি ট্রাক ভরে হোমওয়ার্ক নিয়ে আসতো।
পুরো ক্লাস হাসিতে ফেটে পড়ল। পল্টু বলল- ওর মতো সন্তান ঘরে ঘরে থাকলে পাবজি আর ফ্রি ফায়ার গেম যারা তৈরি করেছে তারা না খেয়ে মরতো। তাদের ভিক্ষা করে চলতে হতো।
আবার হাসির রোল। কে যেন পেছন থেকে বলল- মদন, মদন কুমার।
ঠিক তখনই দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মানে হেড স্যার। হেড স্যারের পুরো নাম রওনক বশির তোফা। সবাই ডাকে, আরবিটি স্যার। আর ছাত্রছাত্রীরা ডাকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার স্যার। কারণ হেড স্যার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতোই হুঙ্কার ছাড়েন। হেড স্যার হুঙ্কার দিয়ে বললেন- এতদিন পর স্কুলে এসেছো তা এত হৈহৈ কেন?
বকুলের বস্তার কথা বলা হলো। রয়েল বেঙ্গল টাইগার স্যার দপ্তরি মোহাম্মদ আলীকে ডেকে বস্তাটা টিচার্স রুমে নিয়ে গেলেন। বললেন- ও যেহেতু কষ্ট করে হোমওয়ার্ক করেছে তো আমাদের চেক করে দিতে হবে।
সবাই খুব ভয় পেয়েছিল যে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার স্যার ওদের ওপর হামলে পড়বেন। কিন্তু না। তিনি শান্তভাবে চলে গেলেন। তার পেছনে আতাউল স্যারও বের হয়ে গেলেন। পল্টুর আর শাস্তি পাওয়া হলো না।
দুষ্টু মেয়ে দৃষ্টি বলল- সামটাইমস এ্যা সিনার গোজ আনপানিশড।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়