ওবায়দুল কাদের : ২১ আগস্ট মামলার আপিল শুনানি শুরু শিগগিরই

আগের সংবাদ

মহামারিতে মেগা প্রকল্পে স্থবিরতা

পরের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে বেরইল গ্রামের ‘চাঁই’ শিল্প

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কবির হোসেন, জয়পুরহাট থেকে : সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে প্রায় বিলুপ্তির পথে জয়পুরহাটের বেরইল গ্রামের চার শতাধিক পরিবারের শত বছরের পুরনো পেশা মাছ ধরার ফাঁদ বা চাঁই তৈরির শিল্প।
বাঁশ দিয়ে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করেই শত বছর ধরে বংশপরম্পরায় জীবিকা নির্বাহ করে আসছে জয়পুরহাটের বেরইল গ্রামের প্রায় ৪০০ পরিবার। বাঁশের চিকন শলাকা দিয়ে তৈরি হয় এই মাছ ধরার ফাঁদ, যা স্থানীয়ভাবে চাঁই বা খলসানী নামে পরিচিত।
বেরইল গ্রামের তৈরি এসব চাঁই জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমে তাদের ব্যবসা ভালো চললেও বছরের বাকি সময় অভাব-অনটনেই কাটে তাদের জীবন।
এরপরও বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন বেরইল গ্রামের মানুষ।
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে চাঁই বা খলসানির চাহিদা তুলনামূলক বেড়ে যায়। আর এ কারণেই বর্ষা মৌসুমে জেলার বেরইল গ্রামের পরিবারগুলোতে বেরে যায় ব্যস্ততা। এ গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশু সবাই বাঁশের তৈরি মাছ ধরার বিশেষ ধরনের ফাঁদ খলসানী বা চাঁই বানানোর কাজে পটু। এ খলসানী বা চাঁই এমনভাবে তৈরি, যে এর ভেতরে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না।
বিভিন্ন জলাশয়ে বাঁশ বা আগাছা দিয়ে বাঁধ তৈরি করে তার মাঝে মাছ শিকারিরা এ ফাঁদ স্থাপন করেন। পরে ফাঁদে আটকে পরা মাছ সংগ্রহ করেন। বর্ষা মৌসুমে চাঁই বা খলসানী বিক্রি থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো মতে তাদের দিন চলে। তবে বছরের বাকি সময় জীবিকা নির্বাহের জন্য অন্য কাজ করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। এমনটাই জানিয়েছেন ওই গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগর ও বিক্রেতা বিমল চন্দ্র।
এক সময় জেলার বিভিন্ন খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর ও ধানক্ষেত পানিতে পরিপূর্ণ থাকায় বাঁশের তৈরি মাছ ধরার এ বিশেষ ধরনের যন্ত্র খলসানীর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও এখন আর সে অবস্থা নেই।
পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে একদিকে কমেছে জলাশয়ের সংখ্যা। অন্যদিকে জলাশয়গুলোতে আর মাছও পাওয়া যায় না তেমন।
তা ছাড়া চাঁই বা খলসানীর স্থান দখল করে নিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির কারেন্ট জাল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা ভাইরাস। ফলে হাটবাজারে চাঁইয়ের আমদানির তুলনায় বেচাকেনা কম বলে জানান চাঁই বিক্রেতা গণেশ। তবে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে এখানকার তৈরি চাঁই বা খলসানীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাজারে এখন ভালোমানের প্রতি পিস ছোট খলসানী বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৫০ টাকা আর বড় আকারের চাঁইয়ের দাম ৫০০-৫৫০ টাকা।
ডিজিটালাইজেশনের এ যুগে উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ঐতিহ্যবাহী এ হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বেরইল গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে শত বছরের পুরনো এ নান্দনিক হস্তশিল্পকে টিকিয়ে রাখার আকুতি বেরইল গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলোর।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট সমাজসেবক ও মানবাধিকার কর্মী খোরশেদ আলম ভোরের কাগজকে জানান, এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার কোনো বিকল্প নেই।
সহযোগিতা পেলে এই শৈল্পিক এ পেশা যেমন রক্ষা পাবে, তেমনি মানবিক জীবনধারণের অধিকার ফিরে পাবে চাঁই শিল্পের সঙ্গে জড়িত দরিদ্র পরিবারগুলো।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়