অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

মেহেরপুরে লতিকচু চাষে বাজিমাত

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর থেকে : মেহেরপুর জেলা শহরের উপকণ্ঠে দীঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া প্রথমবার লতিকচু চাষ করে বাজিমাত করেছেন। মেহেরপুর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২৪ কাঠা জমির লতিকচু ইতোমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ টাকার। এখনো লাখখানেক টাকার বিক্রির আশা করছেন এই চাষি। তুলনামূলক নিচু স্যাঁতসেঁতে জমিতে ভালো জন্মে এই কন্দাল জাতের লতিকচু।
পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কচুর ফুলও বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে মেহেরপুরের খুচরা বাজারে লতিকচু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। বাবু মিয়ার ২৪ কাটা জমিতে প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ মণ কচু তোলা যায়। বিঘাপ্রতি লতিকচুতে খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তবে বাবু মিয়ার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। বাকি খরচ বহন করেছে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বাবু মিয়ার দেখাদেখি ইতোমধ্যে অনেকেই ঝুঁকছেন লতিকচু চাষে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এ বছর মেহেরপুর ১০ হেক্টর জমিতে এই লতিকচু চাষ হচ্ছে।
কৃষিনির্ভর মেহেরপুর জেলা সবজি চাষের জন্য দেশজুড়ে সুখ্যাতি আছে লতিরাজ কচুর। তবে কন্দাল জাতের লতিকচু বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়নি। জেলায় প্রথম এ বছর বাবু মিয়া কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেছেন। গত ২/৩ বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক লতিরাজ কচু চাষ করছেন। তারা লাভবান হওয়াতে জেলায় লতিরাজ কচু চাষ বাড়ছে। এবার বাড়বে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ।
বাবু মিয়া বলেন, শীতের শেষে জমিতে বীজ লাগাই। লাগানোর তিন মাস পর থেকেই লতিকচু তোলা শুরু করি। ক্ষেত থেকে দুই সপ্তাহ পরপর কচুর লতি তোলা হয়। আর এক মাস পরপর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করি। চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। কন্দাল জাতের লতিকচু হওয়ায় জমিতে সব সময় পানি দিয়ে স্যাঁসসেঁতে করে রাখতে হয়। এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার টাকার লতি, ১৫ হাজার টাকার ফুল, ৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেছেন। এখনো ১ লাখের বেশি বেচাকেনা করতে পারব। চলতি মৌসুমেও তিনি ২ বিষা জমিতে চাষ করবেন বলে জানান।
গোলাম হোসেন নামের এক চাষি বলেন, কচু একবার লাগালে লতি, মুখি (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আর বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো। বাবু মিয়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে লতিকচু ফলিয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন আমিও ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছি।
সবজি বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০-৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হয়।
লতিকচুর পাইকারি ক্রেতা মেহেরপুর জেলা শহরের আড়তদার শাহি, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী অভিন্ন সুরে বলেন, লতিকচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এবার নতুন করে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। চাহিদাও ব্যাপক।
সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভীন ভোরের কাগজকে জানান, মেহেরপুরে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতিকচু চাষ হয় না বললেই চলে। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করছেন। লতিকচু চাষে এই সাফল্য অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধু নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশপাশে স্যাঁতসেঁতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভব। মেহেরপুরের লতিকচু ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। কন্দাল জাতের লতিকচু ঘন করে লাগাতে হয় এবং সব সময় জমিতে পানি সংরক্ষণ রাখা প্রয়োজন। যাতে লতি ও ফুল বেশি হয়। লতি ও ফুল উৎকৃষ্ট সবজি হিসেবে বিক্রি হয়। মেহেরপুরে এবার প্রথম কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়