গণপরিবহন চালু, স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে শঙ্কা : লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি হটিয়ে খুলল সবই

পরের সংবাদ

বিবিএসের প্রতিবেদন : ৫ বছরে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : দেশের বিনিয়োগে গত কয়েক বছর ধরেই চলছে মন্দাভাব। জাতীয় বিনিয়োগ (বর্তমান মূল্যে) জিডিপির ৩০ থেকে সাড়ে ৩১ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। তবে করোনাকালে তা নেমেছে ৩০ শতাংশের নিচে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে জিডিপির ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে আরো কমে ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২০-২১ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
এই বিনিয়োগ গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাতীয় বিনিয়োগ জিডিপির ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে ৩১ দশমিক ২৩ শতাংশে ওঠে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে ৩১ দশমিক ৫৭ শতাংশে উঠে, যা ছিল জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি অনুপাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। এ বিনিয়োগের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
এ ব্যাপারে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেকটা এগিয়েছে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভসহ অর্থনীতির অন্যান্য সূচক ভালো অবস্থায় আছে। তবে বিনিয়োগে কোনো উন্নতি হয়নি। গত ৪-৫ বছর জিডিপির ৩০ থেকে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে আটকে ছিল বিনিয়োগ। কোভিডের ধাক্কায় এখন তা ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
এ সময়ে সরকারি বিনিয়োগ কিছুটা বাড়লেও বেসরকারি বিনিয়োগ বেশ কমেছে। মহামারির আগে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ ছিল। এখন তা ২ দশমিক ৩ শতাংশ পয়েন্ট কমে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হচ্ছে বেসরকারি খাত। এই খাতে বিনিয়োগ না বাড়াতে পারলে কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতিতে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে পারব না।
বিবিএসের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে দেশের মোট জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে (বর্তমান বাজার মূল্যে) ৩০ লাখ ১১ হাজার ৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিনিয়োগ অঙ্ক হচ্ছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ জিডিপির ২৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বিনিয়োগ হয়েছে। আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ জিডিপির ৩০ দশমিক ৪৭ শতাংশ টাকা বিনিয়োগে এসেছে।
্যান ব্যুরোর তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, গত ২০২০-২১ অর্থবছরে জিডিপি অনুপাতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ একেবারে তলানিতে নেমে এসেছে। এ বিনিয়োগের হার দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা গত ১৪ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল ২১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এর পরের বছরগুলোতে এই হার ২২ শতাংশের উপরে ছিল। ২০১১-১২ অর্থবছরে ছিল ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ছিল ২২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ছিল ২৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ, যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। করোনার ধাক্কায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই বিনিয়োগ ২২ দশমিক ০৬ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরো কমে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
বেসরকারি বিনিয়োগ পরিস্থিতি বোঝার অন্যতম সূচক হচ্ছে শিল্পঋণ। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় শিল্পঋণ বিতরণ কমে যায় ৮ শতাংশের বেশি। আর গত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় শিল্পঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে গত অর্থবছরে বেসরকারি খাত ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ। শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানি কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
এদিকে মহামারির মধ্যেও সরকারি খাতে বিনিয়োগে খুব নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি, উল্টো কিছুটা বেড়েছে। বিবিএসের ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১১-১২ অর্থবছরে সরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে বাড়তে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়ায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা ৮ শতাংশের ‘ঘর’ অতিক্রম করে ৮ দশমিক ০৩ শতাংশে ওঠে। করোনার মধ্যেও ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগ বেড়ে ৮ দশমিক ৪১ শতাংশে দাঁড়ায়। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আরো বেড়ে ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশে উঠেছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়