চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

স্লিপিং পার্টনার

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

নেহাল ছেলেটা বেশ হাসি-খুশি, স্মার্ট, প্রাণবন্ত স্বভাবের। ব্যবসায়িক আলোচনা ও কাজের সূত্রে আজকাল এ বাসায় ঘন ঘন যাতায়াত তার। অল্পদিনে ছোট ভাইয়ের বয়সি নেহাল তার বেশ ভক্ত হয়ে গেছে। সে-ই রেহনুমাকে তাদের নতুন ব্যবসায় একজন পার্টনার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তার এমন প্রস্তাবে ভীষণ অবাক হয়েছে রেহনুমা। বিজনেস পার্টনার হওয়ার মতো তার কাছে আলাদা পুঁজি মানে টাকা-পয়সা নেই। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যের তেমন কোনো ধারণাও নেই। পড়াশোনা করেছে বোটানিতে। আরমান বউয়ের মনের ইচ্ছের কথাটা জানতো। সে কোনোদিনই চায়নি রেহনুমা ঘরের বাইরে যাক, দশটা-পাঁচটা চাকরি জীবনে ঢুকে পড়–ক। ছেলেটাকে ঠিকভাবে বড় করে তোলা এবং ঘর-সংসার করার মধ্যে নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, বিদ্যা-শিক্ষাকে কাজে লাগাক সে- তেমনটি চেয়েছে আরমান। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে আকারে-ইঙ্গিতে নয়, সরাসরি মুখ ফুটে সে নিজের চাওয়ার কথা বলেছে তার বউকে। ট্রাডিশনাল হাউসওয়াইফ মানে আটপৌরে গৃহবধূ বলতে যা বোঝায়, তাই চেয়েছে সে। শহরের ভালো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করানো থেকে শুরু করে তাকে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া, ‘ও’ লেভেল, ‘এ’ লেভেলে ভালো গ্রেড নিয়ে পাস করানো পর্যন্ত দীর্ঘযাত্রায় সব সময় নিজেকে ধরে রাখার পাশাপাশি ঘর-সংসার সামলানোর কাজ করতে গিয়ে চাকরি-বাকরির চিন্তা-ভাবনা কোন দিকে উবে গেছে- বুঝতেই পারেনি রেহনুমা। এখন তার বড় পরিচয় সে একজন হাউসওয়াইফ, ব্যবসায়ী আরমান আহমেদের বউ। ছেলে শাফিনের মা।
রেহনুমা পাকোড়ার প্লেট আরমান এবং নেহালের সামনে তুলে ধরে। প্লেট থেকে পাকোড়া তুলে নিতে নিতে নেহাল তাকায় তার দিকে। তার ঘর্মাক্ত, বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ভাবি, কে বলেছে আপনাকে এতো কষ্ট করে পাকোড়া ভেজে আনতে। আপনার সুন্দর মুখটার কী অবস্থা হয়েছে চুলার পাশে এতোক্ষণ ধরে থাকতে থাকতে। আমি এটা মেনে নিতে পারছি না। এতো সুন্দর মুখটার কী অবস্থা হয়েছে দেখেন তো আরমান ভাই।
নেহালের কথায় কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় রেহনুমা।
‘ধূর, কী যে বলো, আমি কি কিচেনে আজ প্রথম ঢুকলাম? বিয়ের পর থেকেই তো ঢুকেছি, ঘরের রান্নাবান্না সবই তো আমিই করি। এ আমার জন্য নতুন কোনো ব্যাপার নয়। আই এনজয় ইট ভেরি মাচ।’
কথাগুলো বলতে বলতে নিজের শাড়ির আঁচলে মুখের, ঘাড়ের, গলার ঘাম মুছে নেয় সে আলতো ভাবে। একপাশে সোফায় বসতে বসতে বলে, ‘তোমাদের পেপারস সব রেডি হয়ে গেছে? আজই তো ব্যাংকে জমা দিতে পারবে?’
‘হুম রেডি, এখন শুধু বাকি আমাদের বিজনেসের একজন পার্টনারের সিগনেচার, তার সিগনেচার হয়ে গেলেই সব কাজ কমপ্লিট হয়ে যাবে,’ নেহাল পাকোড়া খেতে খেতে বলে। রেহনুমা বুঝতে পারে তার কথাই বলছে সে। নতুন এই ব্যবসায় তাকে একজন পার্টনার রাখা হয়েছে। রেহনুমা নিজেও কিংবা আরমান কেউই চায়নি ব্যাপারটা। নেহালের জোরাজুরিতে এবং বিশেষ আগ্রহে তাকে পার্টনার করা হয়েছে।
নিজের পার্টনার হওয়ার বিপক্ষে যুক্তি খাড়া করে রেহনুমা বারবার বলেছে, ‘আরে আমি তো তোমাদের ব্যবসায় কোনো টাকা-পয়সা ইনভেস্ট করছি না, আমার কাছে আলাদাভাবে তেমন কোনো টাকা-পয়সাও নেই যে ইনভেস্ট করবো। আর ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া কি বিজনেসে পার্টনার হওয়া যায়?’
‘যায়, যায়। ভাবি, ইনভেস্টমেন্ট না করেও অনেক সময় বিজনেসে পার্টনার হওয়া যায়। এ রকম হলে তাকে সিøপিং পার্টনার বলে। আপনি হলেন আমাদের নতুন এই ব্যবসায় সিøপিং পার্টনার। এখানে আপনার গুরুত্ব কোনোভাবেই কম নয়’, বলতে বলতে নেহাল একটি ফাইল আর কিছু কাগজপত্র নিয়ে এগিয়ে এসে রেহনুমার কাছে এসে পাশে বসে। সেগুলো এগিয়ে দিতে দিতে কোথায় সিগনেচার করতে হবে দেখিয়ে দিতে থাকে।
‘আরমান ভাই, ভাবিকে নতুন ব্যবসার ডিটেলস জানাবেন না? হাজার হোক, ভাবি তো আমাদের এই বিজনেসে একজন ডিস্টিংগুইসড পার্টনার। বিজনেসটার বিষয়ে তার তো ডিটেলস জানার অধিকার রয়েছে।’
‘আরে, রাখো তো। তোমার ভাবিকে আর কী বলতে হবে? শি ইজ জাস্ট এ সিøপিং পার্টনার। ওর এর চেয়ে আর বেশি কিছু জানার দরকার নেই। জানলেও কী করবে সে? কী করতে পারবে? তোমার ভাবির কি কিছু করার ক্ষমতা বা সামর্থ্য আছে?’
আরমানের মুখে তেমন কথা শুনে নিজেকে আরো একবার ভীষণভাবে অপমানিত বোধ করে রেহনুমা। অনেক ছোট মনে হয় নিজেকে। বাইরের লোকজনের সামনে তাকে ছোট করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলা, অপমান করাটা আরমানের মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে গেছে। খুব খারাপ লাগলেও রেহনুমার কিছু করার নেই। নীরবে মুখ বুজে সব অপমান, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা সহ্য করা ছাড়া তার কিছুই করার নেই যেন। এটাই যেন তার নিয়তি।
ব্যাংক লোনের জন্য তৈরি বিভিন্ন ফাইল এবং অন্যান্য কাগজে একজন পার্টনার হিসেবে নিজের স্বাক্ষর দিতে দিতে এক ধরনের শিহরণ খেলে যায় রেহনুমার দেহ-মনে। হোক না সে একজন সিøপিং পার্টনার, তবুও তো তার একটা ভূমিকা রয়েছে নতুন এই ব্যবসায়। একজন অংশীদার হিসেবে নিশ্চয়ই তার কিছু কিছু অধিকার রয়েছে। যার স্বীকৃতি হলো বিভিন্ন ডুকমেন্টস এবং ফাইলে তার এই স্বাক্ষর। সারা শরীর অদ্ভুত শিহরণ কাঁটা দিয়ে ওঠে। স্বাক্ষর দেয়া শেষ হলেও তার ঘোর যেন কাটতেই চায় না। এতোদিন স্রেফ একজন গৃহবধূ হিসেবে ঘর-সংসারের নানা দায়িত্ব পালন ছাড়া অন্য কিছু করার সুযোগ হয়নি। ঘরের চার দেয়ালের বাইরের জগতে তার অনেক কিছু না হলেও কিছু করার যোগ্যতা এবং ক্ষমতা রয়েছে- এটা আজ প্রমাণিত হলো।

দুই.
বাইরে থেকে দেখা হ্যান্ডসাম-সুপুরুষ, নিপাট ভদ্রলোক আরমানকে দেখে কেউ বলতে পারবে না রেহনুমার একান্ত জীবনে সে কতটা জঘন্য মানসিক বিকারগ্রস্ত এবং কুৎসিত রুচির মানুষ হিসেবে আবির্ভূত হয়। রেহনুমার সাথে তার একান্ত মুহূর্তগুলো কতটা ভয়ংকর, যন্ত্রণাদায়ক, অসহ্য হয়ে ওঠে। জীবনসঙ্গীর কোনো গুণ মানুষটির চোখে পড়ে না, তার মুখে স্ত্রীর কোনো কৃতিত্বের প্রশংসা শোনা যায় না। সব সময় ‘তুমি এটা পারো না’, ‘ওটা কেন করোনি, ‘তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না’, ‘আসলে তুমি একটা অপদার্থ মেয়ে মানুষ।’- এমন অপমানজনক মন্তব্য শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যেতে হয়েছে রেহনুমাকে। অথচ তার মুখে সামিয়া ভাবি, লিজা আপা, নুসরাত আন্টি- এ রকম অসংখ্য মহিলার উচ্ছ¡সিত প্রশংসা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে তার। তাদের রূপের, গুণের, শারীরিক সৌন্দর্যের, সাজগোজ, পোশাক-আশাকের স্টাইলের উচ্ছ¡সিত বর্ণনা লেগেই থাকে আরমানের মুখে। বিছানায় একান্তভাবে যখন স্বামীকে কামনা করে, নিজেকে তার ভালোবাসা-আদরে ভাসিয়ে দিতে প্রস্তুত হয় তখন তার মুখে সেই সব নারীর নাম উচ্চারিত হয়, তাদের কারো না কারো অশরীরী উপস্থিতি যে চরম অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেকে সঁপে দেবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়- এটা কোনোভাবেই আরমানকে বোঝাতে পারেনি রেহনুমা। এ রকম বিকৃত মন-মানসিকতা রুচির প্রকাশের জন্য প্রতিবাদ জানাতে চেয়েছে। কিন্তু তাতে কিছুই হয়নি। বরং অশ্লীল গালিগালাজ শুনতে হয়েছে। কুড়ি বছরের দাম্পত্য জীবনে বউকে ঠিকমতো আদর করার কাজটা করতে পারেনি লোকটা। একজন নারীকে কীভাবে, কতোটা আনন্দ, সুখ এবং পরিতৃপ্তি দেয়া যায় সেটা জানে না সে। জানার চেষ্টাও করেনি কোনো সময়ে। নিজের মতো করে চড়াও হয়ে বন্য জন্তুর মতো আচরণ করে বিছানায়, তারপর একপাশে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়াটাকে সে তার রুটিন কাজ বলে মনে করে।

তিন.
দরজা খুলতেই সামনে দাঁড়ানো নেহালকে দেখে কিছুটা অবাক হয় রেহনুমা।
কিছুটা অবাক এবং প্রশ্নবোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রেহনুমা বলে, ‘ওহ নেহাল, তুমি হঠাৎ এ সময়ে? তোমার আরমান ভাই তো বাইরে, ফিরতে ফিরতে নাকি বিকাল হবে।’
‘ভাবি, নো মোর বিজনেস ওয়ার্ক টুডে। আজ আপনাকে দিয়ে ডকুমেন্টস অথবা অন্যান্য কাগজপত্র সিগনেচার করাতে আসিনি’, ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নেহাল বলে। ‘আপনি হলেন আমাদের একজন বিজনেস পার্টনার। ভাবি, আপনার তো আলাদা একটা পজিশন এবং মর্যাদা আছে। আপনার সম্মানকে আমি মূল্য দিই সবসময়।’
‘আরে, আমি তো জাস্ট একজন সিøপিং পার্টনার। আমার আবার সম্মান, মর্যাদা আর পজিশন।’
কিছুটা খেদ মেশানো গলায় হালকাভাবে বলে রেহনুমা।
‘ভাবি, আপনাকে আজ অন্যরকম লাগছে দেখতে। এতোদিন ধরে যে রকম দেখছি, তার চেয়ে আলাদা। অন্যসময়ে আপনাকে কিছুটা ডিপ্রেসড, টায়ার্ড, ড্যুল মনে হলেও এখন দারুণ ফ্রেশ লাগছে খোলা চুলে।’ নেহালের মুখে তার রূপের প্রশংসা শুনে ভেতরে ভেতরে হালকা শিরশিরে অনুভূতি ছড়ালেও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চায় রেহনুমা।
তখনই হঠাৎ আচমকা নেহাল প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা ভাবি, আপনি কি সুখী? সত্যি করে বলবেন। লুকোবেন না কিন্তু।’ তার হঠাৎ এ ধরনের প্রশ্নে কেমন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় রেহনুমা। অপ্রস্তুত কণ্ঠে সে বলে, ‘আমাকে দেখে তোমার কী মনে হয়? আমাকে দেখলে কি তোমার অসুখী মনে হয়? বিশ্বাস করো, আমি কিন্তু বেশ সুখী।’ কথাগুলো বলতে গিয়ে গলাটা কেমন কেঁপে ওঠে যেন তার।
‘নো, আই ডোন্ট বিলিভ! ভাবি আপনি যতই সুখী থাকার ভান করেন না কেন, জোর গলায় দাবি করেন না কেন- আমি বলবো, আপনার মধ্যে অনেক দুঃখবোধ বাসা বেঁধে আছে। আপনি তা কারো কাছে প্রকাশ করতে চান না। আমি কিন্তু ঠিকই ধরে ফেলেছি।’
নেহাল হাসতে হাসতে বলতে গিয়ে হঠাৎ কেমন গম্ভীর হয়ে যায়।
‘আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি আরমান ভাই আপনাকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করে না, প্রাপ্য সম্মান দেয় না। আমার চোখে ব্যাপারটা বেশ খারাপ লাগে। আরমান ভাই আপনাকে সেভাবে মূল্যায়ন না করলেও আপনার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। তার দেয়া উচিত। আমি কিন্তু আরমান ভাইয়ের মতো নই। যার যার প্রাপ্য সম্মান-মর্যাদা আমি দিই সব সময়। সে নারীই হোক কিংবা পুরুষ। আমি আপনার প্রাপ্য সম্মান-মর্যাদা দিতে চাই। আপনার মধ্যে অনেক গুণ, অনেক মেধা, যোগ্যতা রয়েছে। ঘরের মানুষটি তার উপযুক্ত মূল্য দিতে না চাইলেও আমি কিন্তু সেগুলো ঠিক বুঝেছি। আই স্যালুট ইয়্যু এভরি টাইম,’ নেহালের কথাগুলো রেহনুমাকে খুশি করতে বলা। এটা সে বুঝতে পারে ঠিকই। তবুও ঘরের বাইরের একজনের মুখে তেমন কথাগুলো শুনতে ভালোই লাগে রেহনুমার।
রেহনুমার মুখের দিকে সরাসরি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কী যেন দেখে সে। নেহালের চোখের দৃষ্টির সামনে কেমন যেন বিমূঢ় হয়ে যায় রেহনুমা। কিছুই বলতে পারে না। সে ধরা পড়ে গেছে নেহালের কাছে। তার কাছে ফাঁকি দেয়ার কোনো উপায় নেই যেন। নিজেকে সুখী দাবি করার শক্তি, সাহস কোনোটাই নেই তার এই মুহূর্তে। নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। পুরো শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেছে। নড়চড় করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে নেহালের দৃষ্টিসীমানায় বন্দি হয়ে। এর মধ্যে নেহাল উঠে এসে কখন যে তার পাশে বসেছে, নিজের চোখে দেখলেও কিছু বলতে পারছে না। রেহনুমার বোধশক্তি যেন ক্রমেই লোপ পাচ্ছে। নেহাল তার মাথার এলো চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছে, তার গালে আলতোভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে।
নেহাল যা করছে কিংবা যা বলছে, তা ঠিক হচ্ছে না। তাকে বাধা দেয়া দরকার। তেমন বোধ মনে জাগতেই এক ঝটকায় নেহালের হাতটা সরিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায় রেহনুমা। অনেকটা কঠিন গলায় বলে, ‘প্লিজ, নেহাল এখন তুমি যাও। আমার একদম ভালো লাগছে না। শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে, প্লিজ, তুমি চলে যাও। ফর গডসেক, প্লিজ, তুমি এখন যাও।’
তার দু’হাতের শক্ত বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে প্রথমে চেষ্টা করলেও এক সময় কী যেন হয়ে যায় রেহনুমার। সারা শরীরে হঠাৎ যেন বিদ্যুৎ খেলে যায়। একজন পরপুরুষের বাহুবন্ধনে এভাবে নিজেকে আবিষ্কার করলেও ব্যাপারটাকে অবাঞ্ছিত, অনাকাক্সিক্ষত মনে হয় না। নেহাল যেন তার মনের গভীরে চেপে বসা সব দুঃখবোধ, অপমান, লাঞ্ছনা, গøানির ভারী বোঝা সরিয়ে হালকা করে দিতে তার কাছে এসেছে। সে তার মনের সব কষ্ট দূর করে যেন সেখানে সুখ আর আনন্দের পসরা সাজিয়ে দিতে চাইছে- তেমন অনুভব রেহনুমাকে গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে। সে ভুলে যায় তার নিজের পরিচয়, অবস্থান, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ। মুহূর্তেই নেহালের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হারিয়ে যেতে থাকে অন্য এক পৃথিবীতে। ক্লান্ত, অবসন্ন, বিধ্বস্ত হলেও নিজেকে এই মুহূর্তে পরিপূর্ণ সুখী এবং পরিতৃপ্ত মনে হয় তার। কুড়ি বছরের দাম্পত্য জীবনে আরমান যা তাকে দেয়নি, দিতে পারেনি তার অনেকটাই যেন কিছুক্ষণ আগে পেয়েছে সে নেহালের কাছে। বয়সে তার চেয়ে ছোট হলেও সে জানে একজন নারীকে কীভাবে পরিপূর্ণ সুখ, আনন্দ, পরিতৃপ্তি এবং ভালোবাসা দিতে হয়। নিজের কৃতকর্মের জন্য তার মধ্যে কোনো অপরাধ বোধ জাগে না। বরং স্বামী আরমানের কাছ থেকে দিনের পর দিন পাওয়া লাঞ্ছনা, অবজ্ঞা-অপমান আর শারীরিক নির্যাতনের উপযুক্ত প্রতিশোধ নেয়ার এক ধরনের আনন্দ অনুভব করে। নেহালকে কাক্সিক্ষত পুরুষ মনে হয় তার কাছে এই মুহূর্তে, যার অপেক্ষায় ছিল সে দীর্ঘ সময় ধরে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়