চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতেও ছোটদের ঋণে ধীরগতি

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মরিয়ম সেজুঁতি : দেশের কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ খাতটিই। সব মিলিয়ে বিপাকেই পড়েছে দেশের কুটির, ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনেও একই চিত্র উঠে এসেছে। মূলত, ব্যাংক খাতে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়ায় ব্যাংকগুলো এখন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ দিতে চায় না। একই কারণে মাঝারি উদ্যোক্তারাও আগের মতো ঋণ পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা তদারকিতেও এ খাতে ঋণ বিতরণে গতি বাড়ছে না বললেই চলে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ করা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে ঋণ বিতরণ আগের চেয়ে কমেছে। বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকা, যা এর আগের প্রান্তিকে বিতরণ করা ঋণের তুলনায় ৪ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর ত্রৈমাসিকে সিএমএসএমই খাতে ৪৮ হাজার ৯৮১ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো। এর আগের ত্রৈমাসিক অর্থাৎ ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে ৩৮ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা এসএমই ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো।
সব মিলিয়ে বিদায়ী অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে এসএমই ঋণ বিতরণ হয় ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। তবে এর আগে বিতরণ করা সব ঋণ মিলিয়ে এসএমই ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ২ লাখ ৪০ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। ২ লাখ ২৮ হাজার ৩২৭টি গ্রাহকের অনুকূলে এ ঋণ দেয়া হয়েছে।
গত বছরের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের সুদহার কমার পাশাপাশি কমেছে আমানতের সুদহার। এতে ব্যাংকের আমানতেও টান পড়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনার ধাক্কা। এ ধাক্কায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড়, ছোট, মাঝারি- সব ধরনের প্রতিষ্ঠান।
উদ্যোক্তা সংগঠনগুলোর অভিযোগ, করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও তাদের উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা অজুহাতে তাদের ঋণ দিতে গড়িমসি করছে। তবে ব্যাংকগুলোর দাবি, ঋণ নিতে উদ্যোক্তারাই যোগাযোগ করছেন না। আবার যাঁরা আসছেন, তাঁরাও ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে পারছেন না। তাই ঋণ বিতরণ কম হচ্ছে।
ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তুলনায় ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ কমলেও গত বছর একই প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ ২০২০) তুলনায় ঋণ বিতরণ ৬ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা বা ১৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি-মার্চ সিএমএসএমই খাতে ৩৭ হাজার ৭৬২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকগুলো।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি-মার্চ এসএমই খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৬ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। পল্লী এলাকার এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দেয়া হয় ৮ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার ঋণ।
জামানতবিহীন ঋণ ছিল ৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে কুটির (কটেজ) প্রতিষ্ঠানে ৫৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো। মাইক্রো খাতের প্রতিষ্ঠানে ৫ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা, ক্ষুদ্র শিল্পে ২৮ হাজার ৩২ কোটি টাকা এবং মাঝারি শিল্প খাতে ১০ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকগুলো।
বিতরণ করা এসব ঋণের মধ্যে প্রস্তুতকারক শিল্পে গেছে ১৫ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ঋণ। সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানে গেছে ৯ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা এবং ব্যবসা উপখাতের প্রতিষ্ঠানে ১৮ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছে ব্যাংকগুলো। তথ্য বিশ্লেষণে আরো দেখা যায়, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত সিএমএসএমই খাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ২৪ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ৩ হাজার ১৮ কোটি টাকা।
বিশেষায়িত ব্যাংক বিতরণ করে ৯২০ কোটি টাকা। ইসলামিক ব্যাংকগুলো বিতরণ করে ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ব্যাংক খাত থেকে সিএসমএসএমই খাতে ঋণ যায় ৪২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এছাড়া লিজিং প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) সিএমএসএমই খাতে বিতরণ করে ১ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।
নিয়মিত এসএমই ঋণের পাশাপাশি কোভিড-১৯-এর প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দিতে গত বছরের এপ্রিল থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই প্যাকেজ থেকে গত জুন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয় সিএমএসএমই খাতে। গত জুলাই থেকে প্রণোদনার দ্বিতীয় মেয়াদের ঋণ বিতরণ শুরু হয়েছে। এ ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার, বাকিটা গ্রাহক পরিশোধ করবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়