চাঁদাবাজির মামলা ৪ দিনের রিমান্ডে দর্জি মনির

আগের সংবাদ

বন্যার পদধ্বনি : পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে

পরের সংবাদ

প্রাচ্যচিন্তায় রবীন্দ্রনাথ

প্রকাশিত: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১১ এপ্রিল পারস্য সফরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। কবির বয়স তখন একাত্তর বছর। আমৃত্যু তিনি ছিলেন চিরযুবা। জীবনের পড়ন্ত বেলায় যখন পারস্যরাজের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ এসে পৌঁছল, তখন কবি ভালোবাসার এ আহ্বান উপেক্ষা করতে পারলেন না। পথের ক্লান্তির কথা বিবেচনায় এনেও তিনি সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। বয়সের জড়ত্ব তার মনের লাগাম টেনে ধরার একেবারে চেষ্টা করেনি তা নয়। কিন্তু যৌবনে কবি আরব বেদুইন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন; বার্ধক্যে সেই বেদুইনদের আবাসভূমির কাছে যেতে পারার সুযোগ তিনি সৌভাগ্য হিসেবে গ্রহণ করলেন। কবি ভুবনে চেতনা ও বন্ধুত্বের যে জাল বুনেছিলেন তার সুতোয় পারস্যও গাঁথা হয়েছিল।
পারস্য ভ্রমণের সময় ছিল গ্রীষ্মকাল। তখনো আকাশপথ এত মসৃণ ও সহজলভ্য হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আয়োজকদের অশেষ আন্তরিকতা কবিকে না বলতে বাধা দিল। গ্রীষ্মকালে রেল এবং পানিপথে বৃদ্ধ কবির যাত্রা সুখকর হবে না বিবেচনা করে পারস্যরাজ্যের আয়োজক কর্তৃপক্ষ ওলন্দাজ বিমানে তার ভ্রমণের আয়োজন করেন। কবির জন্য এটা ছিল দ্বিতীয় আকাশ ভ্রমণ। তবু বিমানযাত্রার রোমাঞ্চকর অনুভূতি কবির মধ্যে পুরোমাত্রাতেই ছিল। মাটি থেকে ওপরে ওঠার মধ্যে যে মধ্যাকর্ষজনিত আকর্ষণ, মাটির মায়ের মায়া কবি তা এবার পুরো মাত্রায় অনুভব করেছেন। যেটা লন্ডন থেকে প্যারিস যেতে অনুভব করেননি। কবির মনে সাহস দেবার জন্য তার পারসিবন্ধু দিনসা ইরানি সঙ্গী হয়েছিলেন পারস্যের বুশেয়ার বন্দর থেকে। আর বোম্বাইয়ের পারসিক কনসাল কেহান সাহেব পারস্য সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্ব পেয়েছিলেন কবির যাত্রার সকল আয়োজন করার এবং সাহচর্য দেয়ার। বৃদ্ধ কবির অসুস্থ শরীরের দেখাশোনা এবং পারিবারিক পরিবেশ কিছুটা নিশ্চিত করতে সঙ্গে ছিলেন বউমা অর্থাৎ রথীন্দ্রনাথের স্ত্রী। আর কর্মসহায়করূপে সঙ্গে ছিলেন কেদারনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বিশ্বকবির তরুণ সচিব কবি অমিয় চক্রবর্তী। কেদারনাথ এক সপ্তাহ আগেই রওনা দিয়েছিলেন।
কবি পারস্য ভ্রমণের বায়ুযানের গল্প রসিয়ে বলেছেন। বোধকরি কবি আকাশপথের এই পর্যটনে কৌতূহলী বালকের মতো খুব মজা পেয়েছিলেন। তিনি যখন বিমানে চড়ে পারস্য ভ্রমণে বেরিয়েছেন তখনো কম ভারতীয়ই এই আকাশযানে সওয়ার হয়েছেন। মাটির মানুষের আকাশে ওড়ার স্বপ্ন আজন্ম। মানুষও চায় পাখির মতো ডানা মেলে বাতাসে ভেসে থাকতে, দূর-দূরান্তে গমন করতে। প্রকৃতি মানুষকে সেই ওড়বার ক্ষমতা দেয়নি, তবে প্রকৃতিকে জয় করবার ক্ষমতা দিয়েছে। সব প্রাণীকেই প্রকৃতি তার প্রয়োজনের সকল কিছু দিয়েছে, কেবল মানুষকেই কষ্ট করে সবকিছু অর্জন করে নিতে হয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বায়ুযানের এই উড্ডয়নে খুব একটা আনন্দিত হতে পারেননি। কেননা প্রকৃতির অধিকারে পাখির যে উড়া তার মধ্যে একটি সুষম ব্যাপার আছে, যা বায়ুযানে নেই। কবিকে বহনকারী এই উড়ন্ত দানবযানটির প্রতি তিনি খুব একটা দয়ার্দ্র হতে পারেননি। বিশেষ করে আকাশ পথে এর দাপাদাপি এবং চিৎকারে কবি স্বস্তি পাননি। তবে কবি সেই আকাশযানে উঠে একটি সত্য আবিষ্কার করেছিলেন। সেটি হলো, যন্ত্রযুদ্ধে মানুষ কেন এত নির্মম এবং ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। কারণ মাটির মানুষ যখন আকাশে ওঠে তখন মাটির মাকে তার বড় অচেনা মনে হয়। মানুষের অস্তিত্বই তার চোখে পড়ে না। কবি এখানে একটি চমৎকার সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন মহাভারতের কৃষ্ণচরিতের সঙ্গে। শ্রীভগবদ্গীতাতে যেমন শ্রীকৃষ্ণ মায়াকাতর অর্জুনকে তত্ত্বোপদেশ দিয়ে তার মায়ার বন্ধনকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আত্মীয়বধের জন্য প্রস্তুত করে তুলছেন, তেমন যন্ত্রের দ্বারা মানুষকে দূরে সরিয়ে নিয়ে মানুষকে বাধ্য করে তোলা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের এ ভ্রমণ ছিল দুটি মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে। যুদ্ধের ভয়াবহতা মানুষের ও নির্মমতা কবি প্রত্যক্ষ করেছেন। কবির মন কেঁদে উঠেছে। কবি সতর্ক করে দিতে চেয়েছেন। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মহত্ত্ব এখানেই- ধর্ম কিংবা সংস্কারে নয়; মানুষ গুরুতেই তার নিষ্ঠা। গীতার যে ধর্ম মানুষ মারার বিধান দেয় রবীন্দ্রনাথ ধর্মের সেই বাণীকে উপহাস করতে ছাড়েন না। খ্রিস্টান অনুসারী যারা মানুষ মারে রবীন্দ্রনাথ তাদেরকেও বিশ্বাস করেন না। ব্রিটিশ ফৌজ পারস্যে শেখদের গ্রামে নিয়মিত বোমাবর্ষণ করে চলছিল সে সময়ে। খ্রিস্টান ধর্মযাজকের মুখে এই সংবাদ রবীন্দ্রনাথের ভালো লাগেনি। রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘গীতায় প্রচারিত তত্ত্বোপদেশও এই রকমের উড়োজাহাজ- অর্জুনের কৃপাকাতর মনকে সে দূরলোকে নিয়ে গেল, সেখান থেকে দেখলে মারেই বা কে মরেই বা কে।’
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যনীতি ব্যক্তি বিশেষের সত্তাকে অস্পষ্ট করে দেয় বলেই তাদের মার এত সহজ। খ্রিস্ট এই সব মানুষকেও পিতার সন্তান বলে স্বীকার করেছেন। কিন্তু খ্রিস্টান ধর্মযাজকের কাছে সেই পিতা এবং পিতার সন্তান হয়েছে অবাস্তব। সেজন্য সাম্রাজ্যজুড়ে আজ মার পড়ছে সেই খ্রিস্টেরই বুকে। যে কারণে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর ধর্মযাজকের অনুরোধেও রবীন্দ্রনাথ এই আকাশযমকে আশীষ করতে পারেননি। যে বাণী দিয়েছিলেন, সে বাণীর মর্মার্থ আলাদা। রবীন্দ্রনাথের ঠিক বোধগম্য নয়, মানুষকে মারার জন্য কেন আকাশে উঠে বোমাবর্ষণ করতে হবে! রবীন্দ্রনাথ একে পধহহরনধষরংঃরপ মৎববফ বলে উল্লেখ করেছেন। রবীন্দ্রনাথের পারস্য সফরকালেও ভারত ছিল ইংরেজ শাসনের অধীন। তাদের নীতি ছিল দ্বিমুখী- নিজের দেশ এবং উপনিবেশের জন্য আলাদা আলাদা আইন। উপনিবেশ থেকে অর্থ শোষণ করে নিয়ে নিজের দেশকে রসালো করে তোলা ছিল তাদের উদ্দেশ্য।
যাত্রার তৃতীয় দিনে রবীন্দ্রনাথ পারস্যের বুশরায় পৌঁছান।
ওই দিন বিকালে পারস্যের পার্লামেন্টের একজন সদস্য কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানতে চেয়েছিলেন, পারস্যকে জানার জন্য কবির কী ধরনের আগ্রহ রয়েছে? কবি জানান, পারস্যের শাশ্বত রূপটিই তিনি জানতে চান। যে পারস্য ইতিহাসের অন্ধকার ভেদ করে আলোর মধ্যে উদ্ভাসিত হয়েছে। ১৯১২ সালে কবি যখন ইউরোপ ভ্রমণে গিয়েছিলেন তখনো একজন ইংরেজ কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে জানতে চেয়েছিলেন কবির ইউরোপে আসার উদ্দেশ্য কি? কবি বলেছিলেন, ইউরোপের মানুষকে দেখতে, যে ইউরোপের চারদিকে জ্ঞানের আলো জ্বলছে, প্রাণের আলো জ্বলছে, সেই আলোকিত মানুষ দেখার জন্যই কবি ইউরোপে এসেছেন। কবির আলোকিত মন সবখানেই আলোর সন্ধানে ব্যাপৃত ছিল।
প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি পারস্য। পারস্যের একটি শাশ্বত স্বরূপ আছে, যা আপন মহিমায় স্বপ্রতিষ্ঠ, সেই পারস্যকে জানার বড় আগ্রহ কবির। কিন্তু কবির সে আগ্রহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কারণ আধুনিক পারস্যের একদিকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা, যাদের কাছে সুষম পরিবর্তনটি এসে পৌঁছেনি। অপরদিকে যে পারস্য আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তারাও প্রাচীন সভ্যতার প্রতি সচেতন নয়।
পারস্যে কবি যে সম্মান ও আপ্যায়নে ভূষিত হয়েছিলেন তা সম্ভব হয়েছিল পারস্যের নিজস্ব ঐতিহ্যের কারণে। কেননা তাদের রক্তের মধ্যে মিশে আছে কবির মন। পারস্যের কবিমনও রবীন্দ্রনাথকে কবি হিসেবে তাদের স্বগোত্রীয় কবির ভালোবাসায় সিক্ত করেছিল। তারা মনে করেছিলেন পারস্যের মরমিয়া কবিদের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের মনের মিল রয়েছে প্রচুর। তাছাড়া কবি বিবেচনার ক্ষেত্রে পারস্য ও ইউরোপের মধ্যে একটি বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। ইউরোপে কবিকে যারা জানে কিংবা যারা কেবল কবিতা পাঠক তারাই শুধু কবিকে বিবেচনা করে থাকে। কিন্তু পারস্যে কবির বিবেচনা সবার কাছে। কবি আধ্যাত্মিক গুরুর মতো পারস্যজীবনে প্রভাব বিস্তার করে আছেন। এখানকার মানুষের বোধের জগতের সঙ্গে কবি একটি আলাদা মেজাজ নিয়ে অবস্থান করছে। সুতরাং কবিকে সম্মান করতে তাদের বাধে না। আর রবীন্দ্রনাথ কেবল ভারতের কবি নন, এশিয়ার এই কবি পুরোহিত পারস্যের মেজাজের সঙ্গেও সম্পৃক্ত। রবীন্দ্রনাথ পারস্যে যেয়ে বুঝতে পেরেছিলেন, প্রাচ্যদেশীয় কবি হিসেবে তার বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। প্রাচ্যদেশীয় সম্মানের রীতিটিই এমন। কবি যখন এই যাত্রায় মিসরে যান তখন তার সম্মানে সেখানকার আইনসভার কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য মুলতবি রাখা হয়েছিল। এ ধরনের সম্মান কেবল প্রাচ্যেই সম্ভব, পাশ্চাত্যে নয়। পারস্যবাসী যে কবিকে তাদের মরমিয়া কবিদের সমগোত্রীয় মনে করেছিলেন, এতে কবি বেশ পরিতৃপ্তিবোধ করেছিলেন। আর তাদের মনে করার কারণে কাব্যের পরীক্ষা দিয়ে কবিকে তাদের কাছে পৌঁছাতে হয়নি। রবীন্দ্রনাথের একটি অবস্থান পারস্যের কাছে আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তাছাড়া কবির ভাষার সঙ্গে যেহেতু পারস্যবাসীর পরিচয় ছিল না, সেহেতু যাচাই করার বন্ধুর পথে কবিকে যেতে হয়নি বলে কবি যেন একটু স্বস্তি বোধ করেছেন। কবি মুগ্ধ হয়েছিলেন পারস্যেরও গ্রহণ করবার ক্ষমতা দেখে। ধর্মীয় সংকীর্ণতা ও স্বার্থের ভেদবুদ্ধি থেকে পারস্য অনেকখানি মুক্ত বলে সে সময়ে কবির কাছে মনে হয়েছিল। কবি বলেছেন, ‘ইউরোপীয় সভ্যতায় সামাজিক বাধা নিয়মের বেড়া আরো কঠিন। বাংলার নিজের কোণ থেকে বেরিয়ে পশ্চিমেই যাই, দক্ষিণেই যাই কারো ঘরের মধ্যে আপন স্থান করে নেয়া দুঃসাধ্য, পায়ে পায়ে সংস্কার বাঁচিয়ে চলতে হয়- এমনকি বাংলার মধ্যেও। এখানে অশনে বসনে ব্যবহারে মানুষে মানুষে সহজেই মিশে যেতে পারে। এরা আতিথেয় বলে বিখ্যাত, যে আতিথ্যে পঙ্ক্তিভেদ নেই।’
পারস্যের অন্তরের রূপে কবি যেমন মুগ্ধ হয়েছিলেন, তেমনি ভূপ্রকৃতির রূপও কবিকে ভাবতে অবসর দিয়েছিল। কারণ ভারতবর্ষের জলহাওয়ায় কবি বেড়ে উঠেছেন, পারস্যের সঙ্গে যার রয়েছে বিস্তর ফারাক। পারস্য সমতলভূমি নয়। সমতলভূমির কবি যখন মালভূমিতে এসেছিলেন তখন তার মনের অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। মাঠের পরে মাঠ এবং খুব কমসংখ্যক ঘরবাড়ি বা বৃক্ষরাজি সেখানে কবির চোখে পড়েছিল। ভারতবর্ষের প্রায় সবখানেই ঘন গাছপালা এমনকি অরণ্য প্রকৃতি। সুতরাং অরণ্য প্রকৃতির মানুষ এবং মরুভূমির মানুষের বিশ্বাস ও এবং মনোজাগতিক গঠন আলাদা হওয়া স্বাভাবিক। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ-ছয় হাজার ফুট ওপরে অবস্থিত পারস্য। রবীন্দ্রনাথের চোখে ধরা পড়েছিল, এশিয়ার এদিক থেকে ওদিক যেন দুটি বিপরীত মেরু। আফগানিস্তান থেকে আরম্ভ করে মেসোপোটেমিয়া হয়ে আরব পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘নির্দয়ভাবে নিরস কঠিন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, সৌভাগ্যক্রমে এরা বাহন হিসেবে পেয়েছে উট ও ঘোড়া, আর জীবিকার জন্য পালন করেছে ভেড়ার পাল। এই জীবিকার অনুসরণ করে এখানকার মানুষকে নিরন্তর সচল হয়ে থাকতে হয়। আর এ কারণেই পশ্চিম এশিয়ার মানুষ বারে বারে বড় বড় সম্রাজ্য স্থাপন করতে পেরেছে। এর প্রধান কারণ এখানকার ভূমির কঠোরতা। এই ভূমি তাদের সহজে খাদ্য আশ্রয় দেয়নি। ঠেলে দেশ থেকে বের করে দিয়েছে। তাই পরের দেশে পরের অন্ন সংগ্রহ করে তাদের অস্তিত্ব¡ রক্ষা করতে হয়েছে। তারা পরিণত হয়েছে যোদ্ধার জাতিতে।’
বোধ করি কবির পারস্য ভ্রমণের উল্লেখযোগ্য অর্জন ছিল হাফিজ। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারটির সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটেছিল পারসিয়ানা ছাঁদে, আর মনের বিকাশ ঘটেছিল পারস্যের মরমি কবিদের কাব্যপাঠের মাধ্যমে। বিশেষ করে কবিপিতার হাফিজমুগ্ধতা ছিল তার উপনিষদ সাধনার মতো সত্য। কবি পারস্য থেকে ফিরে এসে বিচিত্রায় (আশ্বিন ১৩৩৯) যে ভ্রমণ বৃত্তান্ত লেখেন তাতে তার প্রমাণ আছে। কবি হাফিজের সমাধিতে এসে সত্যি আপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন। কবির কথায়, ‘তখন আমি বালক। যে পারস্য ভাবরসের পারস্য, কবির পারস্য। তার ভাষা যদিও পারসিক, তার বাণী সকল মানুষের। আমার পিতা ছিলেন হাফিজের অনুরাগী ভক্ত। তার মুখ থেকে হাফিজের কবিতার আবৃত্তি ও তার অনুবাদ অনেক শুনেছি। সেই কবিতার মাধুর্য দিয়ে পারস্যের হৃদয় আমাদের হৃদয়ে প্রবেশ করেছিল। আজ পারস্যের রাজা আমাকে আমন্ত্রণ করেছেন, সেই সঙ্গে সেই কবিদের আমন্ত্রণও মিলিত। আমি তাদের উদ্দেশে আমার সকৃতজ্ঞ অভিবাদন অর্পণ করতে চাই যাদের কাব্যসুধা জীবন্তকাল পর্যন্ত আমার পিতাকে এত সান্ত¡না এত আনন্দ দিয়েছে।’ মৈত্রেয়ী দেবী কলেছেন, মহর্ষি দেবেন্দ্র নাথ কবি হাফিজের ভক্ত ছিলেন- সুফি কবিদের গান ভালোবাসতেন- হাফিজের কাব্যরস তার জীবনের মূল রস সিঞ্চন করতে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়