আপিল বিভাগের আদেশ : ল্যাবএইডের ডাক্তার হত্যায় আমিনুলের মৃত্যুদণ্ড বহাল

আগের সংবাদ

ঝুঁকি নিয়েই উঠল লকডাউন

পরের সংবাদ

সাইরেন হেড এন্ড কোম্পানি

প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

মহামারি করোনার কারণে গত বছর যখন লকডাউন শুরু হয় তখন মানুষ ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বন্ধ হয়ে যায় বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া। এমনকি কলোনির খেলার মাঠে বিকাল বেলা বন্ধুদের উপস্থিতি কমতে শুরু করে। কিছুদিনের মধ্যেই ছেলেমেয়েরা মাঠে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এই সুযোগে মাঠের ঘাসগুলো তরতর করে বাড়তে শুরু করে। অল্প কদিনেই বাচ্চাদের খেলার মাঠটি হয়ে যায় কাঁটাঅলা লজ্জাবতী গাছের অভয়ারণ্য!
আর ওদিকে, ঘরে বসে অস্থির সময় কাটাতে থাকে আমাদের বন্ধু ধীমান নভো। তার কাছে সবকিছু বোরিং লাগতে শুরু করে।
অবশ্য লকডাউনের প্রথম দিকে এমনটি ছিল না। তখন টিভি আর স্মার্টফোনে ইউটিউব দেখে আনন্দেই কাটছিল দিনগুলো। কিন্তু কিছুদিন পরেই শুরু হয় বিরক্তি।
ঠিক সেই সময়ে নভো ইউটিউবে একটি চ্যানেল খোলে। ঠিক নভো নয়, তার আম্মু সাবিহা ইয়াসমিন খুলে দেন চ্যানেলটি। ওর আম্মুই ভিডিও তৈরি করে দিতেন এবং ইউটিউবে আপলোড করতেন।
প্রথম ভিডিওটা ছিল মাত্র দেড় মিনিটের। বিষয় ছিল সাইরেন হেড। বলে রাখি, সাইরেন হেড নভোর খুব পছন্দ। ফলে সাবিহা ইয়াসমিন মোবাইল ফোনে ভিডিও অন করে নভোকে কিছু বলতে বললে সে নিজের পছন্দের বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলেছিল।
কথাগুলো ছিল এ রকম- ‘হাই বন্ধুরা! আমার নাম ধীমান নভো। আমি ক্লাস ওয়ানে পড়ি। আজ আমি তোমাদের সাথে সাইরেন হেড নিয়ে কথা বলব। সাইরেন হেড হলো কার্টুনের মতো একটি ভূত, যা ইউটিউবে দেখা যায়। এটা আমার খুবই প্রিয়। আমি আগে সাইরেন হেড দেখে খুব ভয় পেতাম। কিন্তু এখন ভয় পাই না। ভয় পাওয়ার অভিনয় করি। তোমরাও আমার মতো ভয় পাওয়ার অভিনয় করো আর মজা পাও।’
নভোর ছোট্ট এই ভিডিওটা কদিনেই এক লক্ষ ভিউ পেয়ে যায়। দেশ-বিদেশের বন্ধুরা খুব পছন্দ করে ফেলে নভোকে। তাকে অভিনন্দিত করে। এভাবে প্রতিদিন বাড়তে থাকে ভিউ। নভোও উৎসাহিত হয়ে একের পর এক ভিডিও তৈরি করতে থাকে।
রাতারাতি সে দেশের খুদে তারকার মর্যাদা পেয়ে যায়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তার ছবি ছাপা হতে থাকে। ইউটিউবও তাকে সার্টিফিকেট দেয়। বর্তমানে সবাই তার প্রশংসা করে।
আজ আমাদের পত্রিকায় ছাপা হলো নভোর সাক্ষাৎকার। করোনার কারণে কারো বাসায় যাওয়া নিষেধ তাই টেলিফোনেই তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তোমাদের সবার প্রিয় মুকুল ভাইয়া।
– কেমন আছ নভো?
– আমি ভালো আছি ভাইয়া। তুমি কেমন আছ?
– আমিও ভালো আছি। তো এবার শুরু করি?
– ওকে।
– প্রথমেই আমি জানতে চাই, এই যে তোমার চ্যানেলে এত এত সাবস্ক্রাইবার, এত এত ভিউ, এটা দেখে তোমার কেমন লাগে?
– আমার তো খুবই ভালোলাগে। যারা সাবস্ক্রাইব করে, লাইক দেয় এবং কমেন্ট করে তারা আমার গুড ফ্রেন্ড।
– হা হা হা… দারুণ বলেছ। তোমার গুড ফ্রেন্ডের সংখ্যা কত বলতে পারবে?
– লাখ লাখ।
– বাহ! তো আসছে কুরবানি ঈদ উপলক্ষে তোমার চ্যানেলে বন্ধুরা নতুন কী দেখতে পাবে?
– ঈদ উপলক্ষে আমি নতুন একটা ভিডিও দেব।
– সেটা কীরকম? আমাকে বলা যায়?
– কেন নয়, অবশ্যই।
– তাহলে বল। আমি শুনতে চাই।
– অনুষ্ঠানটির নাম দিয়েছি- হাউ টু মেইক আ সাইরেন হেড। মানে, কীভাবে সাইরেন হেড বানাতে হয় সেটা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করব।
– ও তাই! তার মানে তুমি নিজেই সাইরেন হেড বানাতে পার?
– হ্যাঁ।
– দারুণ! দারুণ হবে ব্যাপারটা। আমার তো এখনই তোমার প্রোগ্রাম দেখতে ইচ্ছে করছে। প্লিজ, অন্তত এটা বল যে, তুমি কীভাবে সাইরেন হেড বানিয়েছ?’
– কিন্তু ভাইয়া, এটা তো সিক্রেট বিষয়। ভিডিওটা আমার চ্যানেলে ঈদের দিন প্রকাশ করব। তার আগেই বলে দেয়া কি ঠিক হবে?’
– পুরোটা নয়, সংক্ষেপে বল। পত্রিকায় তোমার অনেক পাঠকবন্ধু রয়েছে। তারা এই সাক্ষাৎকারটা পড়ে তোমার সাইরেন হেড বানানোর খবর জানতে পারবে। জেনে ঈদের দিন ওরা প্রোগ্রামটা দেখবে। তোমার প্রোগ্রাম বেশি ভিউ হোক, এটা নিশ্চয় চাও?’
– অবশ্যই চাই।
– তাহলে বলো। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই সাক্ষাৎকার পড়ে অনেকেই তোমার প্রোগ্রাম দেখতে আগ্রহী হবে।
– ঠিক আছে। তাহলে বলছি- হাউ টু মেইক আ সাইরেন হেড। প্রথমেই বলে নিচ্ছি, সাইরেন হেড বানাতে যা যা লাগবে। ছোট এক বাটি আটা বা ময়দা, সহজেই বাঁকা করা যায়- এমন কয়েক টুকরা তার এবং একটি তুলি লাগবে। আর লাগবে কালো রং এবং গোলাপ বা সন্ধ্যামালতি ফুলের রস।
– কালো রং লাগবে সাইরেন হেডকে কালার করতে সেটা বুঝলাম কিন্তু ফুলের রস লাগবে কেন?
– পরে বলছি।
– ওকে।
– আটা বা ময়দার সাথে সামান্য পানি মিশিয়ে একটা মণ্ড বানাব। ঠিক রুটি বানানোর মণ্ডের মতো। তারপর দু’হাতের তালুতে ঘষে মণ্ড থেকে চিকন লাঠির মতো কয়েকটি টুকরা করে নেব। এবার এগুলোর ভেতরে তার ঢোকাব। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যে আমরা সাইরেন হেডের দুটি পা, দুটি হাত, শরীর ও মাথা বানিয়ে ফেলব। ছোট ছোট তারের টুকরার সাথে মণ্ড পেঁচিয়ে হাত ও পায়ের নখ জোড়া লাগাব। ব্যস, এভাবে তৈরি হয়ে যাবে সাইরেন হেড।
এবার সাইরেন হেডকে রোদে শুকাতে দেব। তারপর রং করার পালা। সাইরেন হেডের পুরো শরীরে কালো রং করব। তুমি জানতে চেয়েছিলে না, ফুলের রস দিয়ে কী করা হবে?
– হ্যাঁ।
– ফুলের রসের রং নিয়ে সাইরেন হেডের জিহ্বায় দিতে হবে। কিন্তু শরীর হবে কালো রঙের।
– ও আচ্ছা। এইবার বুঝতে পেরেছি। কিন্তু সাইরেন হেডের শরীরে কালো রং কিন্তু জিহ্বায় লাল রং দেয়া হবে, এই ব্যাপারটা বুঝলাম না।
– খুব সহজ ব্যাপার। সাইরেন হেডের জিহ্বা লাল থাকে তাই লাল রং দিতে হবে আর শরীর কালো থাকে বলে কালো রং দিতে হবে। অবশ্য তুমি চাইলে তোমার ইচ্ছেমতো অন্য যে কোনো রংও দিতে পার। তো এভাবেই হয়ে গেল একটি হোম মেইড সাইরেন হেড।
– হোম মেইড সাইরেন হেড? দারুণ বলেছ তো!
– আমি যেভাবে বললাম, আমার চ্যানেলেও ঠিক এমনটি দেখা যাবে। তবে সেখানে বাড়তি পাওনা হিসেবে সাইরেন হেডের সাইরেন শুনতে পাবে। সেটাই বেশি মজার।
– অবশ্যই দেখব নভো। যা হোক। আমাকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
– তোমাকেও ধন্যবাদ।
– ভালো থেকো। বাই।
– বাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়