ভূমিহীনদের ঘর পুনর্নির্মাণের দাবি বিএনপির

আগের সংবাদ

ঈদ ঘিরে লকডাউন শিথিল : ১৫ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ৮ দিন সারাদেশে বিধিনিষেধ শিথিল, আজ প্রজ্ঞাপন

পরের সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেড পালমার আমে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা

প্রকাশিত: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: জুলাই ১২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আতিক ইসলাম সিকো, শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে : চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের নালার পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় ঝোপঝাড়ে ঢেকে ছিল দুটি আম গাছ। তাই স্বাভাবিকভাবেই এতদিন গাছ দুটি কারো চোখে পড়েনি। গত বছর জঙ্গল পরিষ্কার করার পর গাছগুলো উদ্ধার হলেও ফলন আসেনি। তবে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। গাছ দুটি থাকা আমগুলোই সবুজের ওপরে লাল রঙে ছেয়ে গেছে। পরিপক্ব হওয়ার পর আকর্ষণীয় এই আমের জাত নিয়ে ভাবনায় পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন।
হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদদের নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। খুঁজতে থাকলেন এই রঙিন আমের জাত উদ্ধারে। শরণাপন্ন হন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ ইউসুফের কাছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে তিনি জানান, রঙিন আমটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমেরিকান বিখ্যাত রেড পালমার জাতের। আমের পাশাপাশি এর ডালপালাগুলোও লাল রঙয়ের।
জানা যায়, আমেরিকার ফ্লোরিডার মিসেস ভিক্টর মেল নামক ব্যক্তির অধীনে ১৯২৫ সালে বীজ থেকে জন্ম নেয় পালমার জাতের আম গাছ। পরের কয়েক দশক পর্যন্ত এই গাছ সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও ২০০৫ সালে এটি সরকারিভাবে নামকরণ করা হয় আমেরিকান পালমার। হর্টিকালচার সেন্টারের কর্মী মেহেদী হাসান জানান, গত বছর জঙ্গল পরিষ্কার করার পর দুয়েকটা আম এসেছিল। তারপরও পরের বছর গাছের ফলন ও জাত দেখার জন্য ডিডি মহোদয় গাছটি রাখতে বলেছিলেন। এ বছর ব্যাপকভাবে আম ধরেছে। লাল রঙে ছেয়ে গেছে দুটি গাছ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ হাবিবুল্লাহ জানান, গাছ দুটির বয়স প্রায় ৮-৯ বছর। কিন্তু ঝোপঝাড়ে ঢেকে যাওয়ায় আমাদের নজর এড়িয়ে ছিল বিখ্যাত ও বিশ্বের সবচেয়ে দামি আমগুলোর মধ্যে অন্যতম আমেরিকান রেড পালমার। গত বছর হর্টিকালচার সেন্টারের বর্তমান উপপরিচালক যোগদান করার পর ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিলে গাছটি উদ্বার হয়েছে। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মো. ইউসুফ বলেন, হর্টিকালচার সেন্টারের আমন্ত্রণে সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমগুলো বিখ্যাত আমেরিকান রেড পালমার বলেই মনে হয়েছে। আম পাকলে আরো পরীক্ষার দরকার রয়েছে।
এছাড়াও এর বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমেরিকান রেড পালমার জাতের আমের গড় ওজন প্রায় ৩৫০ গ্রাম। জুলাই মাসের মাঝামাঝি দিকে পাঁকে বলে বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দামও ভালো পাওয়া যায়। দেখতে আকর্ষণীয় বলে অনেকের খুব পছন্দের আম রেড পালমার। এই জাতের আমের আঁশহীন শাঁস রয়েছে। মিষ্টতা (টিএসএস) ১৮ শতাংশ। নাবী জাতের ভালো মিষ্টি এই আমের উদ্ভাবন আমেরিকার বলে জানান তিনি। শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক ও আম রপ্তানিকারক ইসমাইল খান শামীম বলেন, বর্তমানে বিখ্যাত এই আমের জাতটি বিভিন্ন বাসার ছাদে ও টবে চাষ করা হচ্ছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। নাবী জাতের হাওয়ায় এর বিশাল বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে খিরসাপাত-ল্যাংড়া জাতের আম শেষ হওয়ার পর পালমার জাতের আম পরিপক্ব হয়। এছাড়া এই আমের স্বাদ ভালো মিষ্টি। পালমার জাতের আমের সবচেয়ে বড় গুণ এর আকর্ষণীয় রঙ। যা সবাইকে আগ্রহী করে। এই আমের জাত উদ্বারের পাশাপাশি এই আমের সংরক্ষণ, চারা বাজারজাতকরণ ও বিদেশি রপ্তানির সুযোগ করে দিলে জেলার আমচাষিরা লাভবান হতে পারবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক মোজদার হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, বিশ্বজুড়ে খ্যাতি রয়েছে বিখ্যাত আমেরিকান রেড পালমার জাতের আমের। বিশ্বব্যাপী চাহিদা ছাড়াও আমাদের দেশে উচ্চবিত্তদের মাঝে এই আমের প্রতি ব্যাপক দুর্বলতা রয়েছে। তাই এটি চাষাবাদে বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তিনি জানান, এই জাতের আম গাছ প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারে এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো এতদিন ঝোপঝাড়ে থেকেও বেঁচে আছে। চারিদিকে পানির নালা থাকার পরেও জঙ্গল থেকে মুক্তি পেয়েই এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক পর্যায়ে এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে আমরা এর চারা তৈরি শুরু করব। আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেড পালমার জাতের আমের প্রসারে হর্টিকালচার সেন্টারের পক্ষ থেকে কাজ করা হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়