×

রাজনীতি

সচিবালয় অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ কর্মসূচি পণ্ড

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম

সচিবালয় অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ কর্মসূচি পণ্ড

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক ‘লোপাট’ ও অর্থ পাচারের প্রতিবাদে সচিবালয় অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ কর্মসূচি পুলিশের লাঠিপেটায় পণ্ড হয়ে গেছে।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলিস্তান জিরো পয়েন্টের কাছে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে মঞ্চের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জানিয়েছেন।

এক পর্যায়ে মঞ্চের কর্মীরা জিরো পয়েন্টের কাছে বসানো তারকাটার ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে চাইলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। তাতে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকিসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে সাইফুল হকের ভাষ্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, 'উনাদের কর্মসূচি ছিল। এখানে এসে তারা অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু ব্যারিকেড ভেঙে কেপিআই এলাকায় ঢোকার চেষ্টা করলে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।' 

এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে শাহ আলম জানান। তবে ঠিক কতজন আটক হয়েছেন বা তাদের নাম পরিচয় কী, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু তিনি বলতে পারেননি।

আরো পড়ুন: পল্লবীর ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে বিএনপি

এডিসি জানান, পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা লাঠি শোঠা ছুড়ে মারে এবং পুলিশ সদস্যদের লাঞ্ছিত করে। পুলিশের কতজন আহত হয়েছে তা পরে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

পুলিশের লাঠিপেটায় বিক্ষোভ মিছিল পণ্ড হওয়ার পর বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক জিরো পয়েন্টের সামনে আহত জোনায়েদ সাকিকে নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আজকে গণতন্ত্র মঞ্চের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপর পুলিশ কিভাবে লাঠিচার্জ করেছে তা আপনারা (সাংবাদিকরা) দেখেছেন। কোনো উস্কানি ছাড়া যেভাবে পুলিশ আমাদের বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছে, তারা লাঠিচার্জ করেছে, এই হামলা ও লাঠিচার্জে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা জোনায়েদ সাকিকে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়েছে। যেভাবে সকলের সামনে পুলিশ তাকে লাঠিপেটা করেছে, অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদেরকে পুলিশ লাঠিপেটা করেছে এই ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাই, আমরা প্রতিবাদ জানাই।' 

‘যে পুলিশ কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে আমরা অনতিবিলম্বে সেই পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য দাবি জানাচ্ছি।'

আহত জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ওপরে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। আপনারা সব দেখেছেন। আমি পুলিশকে নিরস্ত্র করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম কিন্তু সেখানে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমার ওপর লাঠিচার্জ করেছে। আমাদের কর্মীদের ওপর তারা বেপরোয়া লাঠিচার্জ করেছে, অনেকে জখম হয়েছে। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই।' 

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হয়। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক ‘লোপাট’ ও অর্থ পাচারের প্রতিবাদে সচিবালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

আরো পড়ুন: কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিবের পদত্যাগ

গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, জেএসডির তানিয়া রব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

বেল ১২টা ৪৭ মিনিটে সমাবেশ শেষ করে নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করে সচিবালয় অভিমুখে রওনা হয়। মিছিলে নেতাকর্মীরা ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ছে কেনো, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে, কমাতে হবে’ ইত্যাদি শ্লোগান দেয়।

মিছিলের অগ্রভাগে মাহমুদুর রহমান মান্না, সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকিসহ মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন। তোপখানা রোড দিয়ে মিছিলটি জিরো পয়েন্টের কাছে আসলে সচিবালয়ের সড়কের  মুখে পুলিশের ব্যারিকেডের কাছে নেতাকর্মীরা এসে বিক্ষোভ করতে থাকে। কয়েক মিনিটের মধ্যে কর্মীরা ব্যারিকেড ঠেলাঠেলি করে সরিয়ে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে পড়ে। 

এক পর্যায়ে পুলিশ হুইসেল বাজানো এবং লাঠি দিয়ে কর্মীদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুঁড়ে মারতে দেখা গেছে। পরে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে এসে এলোপাতাড়িভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। এ সময়ে জোনায়েদ সাকিসহ বেশ কিছু কর্মীরা রাস্তায় পড়ে যায়।

পরে সাইফুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সরকারকে বলতে চাই, হামলা-আক্রমণ করে অতীতে যেমন কোনো স্বৈরাচার শেষ রক্ষা করতে পারেনি, বর্তমান ফ্যাসিবাদী ভোটবিহীন এই সরকারও হামলা-আক্রমণ করে গণতন্ত্র মঞ্চকে আক্রমণ করে শেষ রক্ষা করতে পারবে না।' 

আরো পড়ুন: দুঃশাসন প্রলম্বিত করতেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে

তিনি বলেন, ‘অনেক নেতাকর্মীকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। জোনায়েদ সাকিকে আমরা এখন হাসপাতালে নিয়ে যাবো।

পুলিশের রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিক) নিজেরা দেখেছেন এখানে কি ঘটেছে। তারা এসেছেন আমাদের অনুমতি নেয়নি। প্রেসক্লাবের সামনে একটা সমাবেশ করেছেন… আমরা বলেছি, শেষ করে দিন। উনারা শোনেননি.. বিক্ষোভ মিছিল করে এখানে (জিরো পয়েন্টের কাছে) এসেছেন। উনারা কথা দিয়েছিলেন যে, উনারা শান্তিপূর্ণভাবে এসে চলে যাবেন। কিন্তু আপনারা দেখেছেন যে, আমাদের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ে ঢুকার তারা চেষ্টা করেছেন।' 

‘আমরা বারবার উনাদেরকে বলেছি, ব্যারিকেডের ভেতরে আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন না। উনারা এসে ব্যারিকেড সকলে মিলে কিভাবে উপরে উঠিয়েছে আপনারা দেখেছেন। তখন আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদেরকে বুঝিয়েছে কিন্তু তারা সেটা না শুনে তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করেছেন, পুলিশ সদস্যদের ওপরে চড়াও হয়েছেন। আপনারা ভিডিও দেখবেন তা হলে বুঝতে পারবেন তারা আসলে কি করেছে? যেহেতু এটা কেপিআই সচিবালয় এলাকা। এখানে কোনোভাবেই অবস্থান করা বা প্রবেশ করা সম্ভব নয়। পরে আমরা তাদেরকে মিনিমাম শক্তি প্রয়োগ করে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি।' 

‘তাদের কিছু লোক হাতে লাঠি নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে আমরা তাদের প্রতিহত করেছি এবং কয়েকজনকেও গ্রেপ্তারও করেছি’ বলেন রমনা জোনের এই পুলিশ কর্মকর্তা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App