কলকাতায় বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ পাওয়া নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ বুধবার (২২ মে) সকালে কলকাতার নিউটাউনের সঙ্গে সঞ্জীবা গার্ডেন নামে একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে তার মরদেহ উদ্ধারের খবর মিললেও এখন পুলিশ সূত্র বলছে, মরদেহ উদ্ধার হয়নি। তবে এমপি আনারের যে রুমে থাকার তথ্য মিলেছিলো, সেখানে রক্তের দাগ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে একটি গণমাধ্যম।

এদিকে ভারত ও বাংলাদেশের কোনো দুষ্কৃতকারী চক্র এ ঘটনায় জড়িত বলে ধারণা করছে কলকাতা পুলিশ। ওই আবাসনের ৫৬ নং রুমে তাকে হত্যার পর টুকরো করা হয়েছে এবং সেখান থেকে মরদেহের টুকরো কোথাও ‘গায়েব করে ফেলেছে’ দুষ্কৃতকারীরা। পুলিশ নিশ্চিত যে, এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গে আসেন এমপি আনার। এরপর বরানগরে মণ্ডল পাড়ার পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। পরদিন অর্থাৎ ১৩ মে তিনি নিখোঁজ হন বলে গত ১৮ মে বরানগর থানায় ডায়েরি করেন গোপাল বিশ্বাস।

এরপর ভোটের মধ্যেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। কলকাতার বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে আনারের খোঁজ নেন ঢাকার গোয়েন্দারা। কর্তৃপক্ষ ভারতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সহযোগিতা চায়। এরপরই তদন্তে জোর আসে।

এরপর খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এমপি আনারের মোবাইল ফোনের শেষ অবস্থানস্থল (লোকেশন) ঝাড়খন্ড রাজ্যে। কিন্তু কলকাতা পুলিশের কিছু সূত্র মাধ্যমে নিশ্চিত হয়, এমপি ঝাড়খন্ডে যাননি। তার মোবাইল ফোন অন্য কেউ নিয়ে গেছে সেখানে। যাতে তদন্তে বিঘ্ন ঘটানো যায়।

গোপাল বিশ্বাসের ডায়েরি অনুসারে, এমপি আনার ডাক্তার দেখাতে ১২ মে সন্ধ্যা ৭টার সময় তার বাড়িতে আসেন। পরের দিন দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে ডাক্তার দেখানোর জন্য ওই বাড়ি থেকে বের হন। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘আমি দুপুরে খাব না, সন্ধ্যায় ফিরে আসবো’। তারপর তিনি সন্ধ্যায় না ফিরে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, ‘আমি বিশেষ কাজে দিল্লিতে চলে যাচ্ছি। ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই’। এরপর ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, ‘আমি দিল্লিতে পৌঁছেছি। আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন। ফোন করার দরকার নেই’। এই একই মেসেজ নিজের বাড়িতে এবং নিজের পিএকে ফরওয়ার্ড করেছিলেনে এমপি।

তখনই কলকাতা পুলিশের সন্দেহ হয়। ওই কদিনে একবারও ফোনে কথা না বলে কেন তিনি মেসেজ করছেন। এরপরই শহরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ। তখন তারা নিশ্চিত হয়, এমপি আনার কলকাতার বাইরে যায়নি। বরং কেউ তার মোবাইল ফোন ঝাড়খন্ড পর্যন্ত নিয়ে যায়।

এরপর বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও সূত্র ধরে তদন্ত এগোতে থাকে পুলিশের। সে অনুসারে তারা খোঁজ পায়, কলকাতার নিউ টাউন লাগোয়া সঞ্জীবা গার্ডেনের। তারা জানতে পারে, ওই আবাসিকের ব্লক-বিইউ ৫৬ নং রুমে এমপি আনারের মরদেহ টুকরো করে তিনজন দুষ্কৃতকারী। তারপর সেখান থেকে ব্যাগে করে খণ্ডিত মরদেহ কোনো জলাশয়ে ফেলে আসে দুষ্কৃতকারীরা। এই ঘটনায় আরো অনেকে জড়িত বলে ধারণা করছে কলকাতা পুলিশ।

একটি সূত্র জানায়, পুলিশ ওই ফ্ল্যাটের মালিকের কাছ থেকে জানতে পারে, ফ্ল্যাটটি একজনকে ভাড়া দেয়া হয়েছিলো। একটি সূত্রমতে, সেই ভাড়াটিয়া পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার। আরেক সূত্র বলছে, তিনিও এখন নিখোঁজ।  

পুলিশ আরো বলছে, পূর্ব-পরিকল্পনা করেই কলকাতায় ডাকা হয়েছিলো এমপি আনারকে। দুই দেশের দুষ্কৃতকারী এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। তবে তদন্ত কোনদিকে যাবে তা সময় বলবে। কিন্তু নিশ্চিত যে, এমপি আনার আর বেঁচে নেই। তবে এ-ও নিশ্চিত, এমপি আনারের মরদেহ এখনো উদ্ধার হয়নি।

ভারতের স্বাধীনতার ৭৭ বছরে বাংলাদেশের কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত এমপি এই প্রথম এভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন কলকাতার মাটিতে।