×

জাতীয়

২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে ঝড়েছে ১৪৩২ শ্রমিকের প্রাণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৭ পিএম

২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে ঝড়েছে ১৪৩২ শ্রমিকের প্রাণ

২০২৩ সালে অনিরাপদ কর্মক্ষেত্রের কারণে বিভিন্ন সেক্টরে ১৪৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৫০২ জন। ২০২২ সালে নিহত হয়েছিলেন ৯৬৭ জন এবং আহত হয়েছিল ২২৮ জন। গতবছরের (২০২২) তুলনায় শ্রমিক নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬৫ এবং আহতের সংখ্যা বেড়েছে ২৭৪।

বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেইফটি, হেল্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (গুশি) ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ১৫টি সংবাদপত্র এবং ওশির উদ্যোগে মাঠপর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। ওশি ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন ড. এসএম মোর্শেদ সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ওশি ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন সাকি রিজওয়ানা, রিসার্চ এন্ড মনিটরিং অফিসার নূর আলম, কেস ম্যানেজম্যান্ট অফিসার নুসরাত জাহান প্রমুখ।

ড. এসএম মোর্শেদ বলেন, ২০২৩ সালে কর্মক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ৩২৯ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২৭৭ জন এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিহত। শ্রমিকের সংখ্যা ১১০৩ জন ও আহত শ্রমিকের সংখ্যা ২২৫ জন। সেক্টরভিত্তিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে পরিবহনখাতে সর্বোচ্চ ৬৩৭ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন ও আহত হয়েছে ১২৭ জন, ২২০ জন দিনমজুর নিহত হয়েছেন ও আহত হয়েছেন ৭৬, নির্মানখাতে নিহত ১৪৯ এবং আহত ৭২ জন, কৃষিশ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা ১৪৬ ও আহত হয়েছে ১০ জন (যাদের মধ্যে বজ্রপাতে মারা গেছেন ৭১ জন), পোশাকশিল্পে নিহত ৬৪ ও আহত ৮৯ জন, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে নিহত ৯৪ ও আহত ১৫ জন, মৎস্যখাতে নিহত ৫৩ ও আহত ২২ জন, সেবাখাতে নিহত ২৬ ও আহত ২২ জন, সিরামিকথাতে নিহত ১৭ ও আহত ৯ জন, চামড়াশিল্পে নিহত ৪ ও আহত ১৭ জন, ইটভাটা/ব্রিকফিল্ড নিহত ১১ ও আহত ৬ জন, জাহাজভাঙ্গা/শিপব্রেকিং এ নিহত ৭ ও আহত ২৯ জন, চা শ্রমিক নিহত ১ ও আহত ৬ জন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নিহত ৩ ও আহত ২ জন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিবহণ খাতে নিহত হয়েছেন সর্বোচ্চ সংখ্যক শ্রমিক। ২০২৩ সালে এ খাতে নিহত ৬৩৭ ও আহত ১২৭ জন, অথচ ২০২২ সালে নিহত ১০৫ ও আহত ২৯ জন।

প্রতিবেদনে কর্মস্থলে হতাহতের উল্লেখযোগ্য কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া, অগ্নিকাণ্ড, ভবন বা স্থাপনা থকে পড়ে যাওয়া, বজ্রপাত, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, সহিংসতা, গৃহশ্রমিকদের ক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, দেয়াল-ভবন-ছাদ ও ভূমিধসের কথা বলা হয়েছে।

কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নয়নে ওশি'র পক্ষ থেকে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ এ উল্লিখিত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিধানের যথাযথ প্রয়োগের লক্ষ্যে পরিবীক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করা, পোশাক খাতের মত অন্যান্য সেক্টরেও শ্রমিক ও মালিক পক্ষের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সেইফটি কমিটি গঠন করে তোলা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে নিহত শ্রমিকের পরিবারকে এককালীন ১০ লাখ টাকা এবং আহত শ্রমিককে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তার বিষয়টি শ্রম আইনে অর্ন্তভুক্ত করা, এছাড়া আহত শ্রমিককে পুনর্বাসনের বিষয়টি শ্রম আইনে অন্তর্ভুক্ত করা, শিল্প খাতের সকল সেক্টরে এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কীম (ইআইএস) চালু করা, সরকারিভাবে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা সংক্রান্ত তথ্যের সঠিক ডেটাবেইজ তৈরি করা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় নিহত/আহত শ্রমিকদের সার্বজনীন পেনশন স্কিমে অর্ন্তভুক্ত করা এবং তাদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ হতে প্রদান করা, শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত মালিকপক্ষ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা এবং এটির আধুনিকায়ন করা, কর্মস্থলে শ্রমিকদের উপযোগী ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা, শিল্প মালিক ও ব্যবস্থাপকদের জন্য জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতিমালা-২০১৩ সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন প্রদান করা, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ইউনিট চালু করা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পেশাগত রোগের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App