×

শিক্ষা

এবার নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

এবার নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

অধ্যাপক নাদির জুনাইদের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদেরকে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় 'ব্যক্তিগত আক্রোশে' নম্বর কম দেয়ার অভিযোগের পরে এবার বিভাগের এক নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। 

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ এনে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন ওই নারী শিক্ষার্থী। অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে কিছু অডিও রেকর্ড এবং স্ক্রিনশট দেয়া হয়েছে। 

অধ্যাপক নাদির জুনাইদের কৃতকর্মের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন ওই নারী শিক্ষার্থী। 

এর আগে, গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিভাগটির ২০২২ সালের স্নাতকোত্তর শ্রেণির চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়। ফলাফল প্রকাশের পর বিভাগটির ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে ফলাফলে ভয়াবহ ধ্বস নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে পরেরদিন বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিকট লিখিত অভিযোগ দেন। 

আরো পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি থেকে ইবির বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বরাবর লিখিত অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, "২০২২ সালে করোনার পর উনাকে আমরা প্রথম সশরীরে ক্লাসে পাই। প্রতি ক্লাসেই তিনি অ্যাসাইনমেন্টের টপিক নির্ধারণ করতে বলতেন এবং টপিক অনুমোদনের জন্য উনাকে সরাসরি ফোন দিতে বলতেন। এ সুবাদে আমি টপিক নির্ধারণের জন্য তাকে চারবার ফোন দিই, কেননা তিনি বারবার টপিক বাতিল করছিলেন। প্রতিবার ফোন দিলে তিনি রাতে কল ব্যাক করতেন এবং ন্যূনতম এক ঘন্টা ধরে কথা বলেছেন। এসময় তিনি টপিকের বাইরে গিয়েও ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহ সহকারে কথা বলেছেন।" 

এতে আরো বলা হয়, "তিনি (নাদির জুনাইদ) আমার শারীরিক অবয়র সম্পর্কে নোংরা মন্তব্য করতেন এবং যৌন উত্তেজনা প্রকাশ করতেন। একই সাথে আমাকে উনার সাথে বাজে জিনিস কল্পনা করতে প্ররোচিত করতেন। বলতেন, “ধরে নাও তোমার সাথে বিয়ে হলে, তোমার সাথে এটা করলে ওটা করলে কেমন হতো”, ‘মনে কর, আমরা সি-বিচ গিয়েছে, সান-বার্থ.......’। এছাড়াও বিভিন্ন 'ডাবল মিনিং' কথাবার্তা বলতেন এবং সারাক্ষণ “সেক্সুয়াল" কথোপকথনে প্ররোচিত করতেন। বিষয়টি সহ্যের সীমার বাইরে যেতে থাকলো। উনি বিভাগের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আমাকে নজরদারি করতেন। এছাড়াও অন্য শিক্ষার্থীদেরও নজরদারি করতেন এবং তাদের নিয়ে আমার কাছে বিভিন্ন মন্তব্য করতেন।"

অধ্যাপক নাদির শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন করার পাশাপাশি এসব প্রশ্ন এড়িয়ে গেলে রেগে যেতেন। এই প্রসঙ্গে অভিযোগকারী বলেন, '‘উনি আমার শরীরের স্পর্শকাতর জায়গা নিয়ে প্রশ্ন করতেন, দেখতে কেমন, ইত্যাদি নানান কথার প্রশ্ন উনি খুব আগ্রহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করতেন। এড়িয়ে গেলেও আবার একই কথা রিপিট করতেন, আমাকে প্রায় জিজ্ঞেস করা হতো আমার কেন কোনো অনুভূতি হয় না? আমার শারীরিক কোনো চাহিদা কেন নাই? আমার ইচ্ছা করে কিনা?’ সাড়া না দিলে ওই শিক্ষার্থীকে ‘অনুভূতিহীন’, ‘নির্বোধ’, ‘ডাক্তার দেখানো উচিত’—প্রভৃতি বিষয় বলতেন এই অধ্যাপক।"

আরো পড়ুন: ঢাবির হলে বাণিজ্যিক শুটিং, হল প্রশাসন জানালো 'মুক্তিযুদ্ধের শুটিং'

ওই শিক্ষার্থী আরো বলেন, '‘আমাকে এমনও বলেছেন, ‘আই অ্যাম সরি টু সে, তুমি স্বাভাবিক না, তোমার ডাক্তার দেখানো উচিত।’ উনি বার বার আমাকে মানসিক চাপ দিতেন, ’কেন কোনো অনুভূতি নাই? কেন উনাকে আমি ফিল করি না! উনি আমাকে এত বুঝাচ্ছেন, তবুও আমি সাড়া দিতাম না। উনি আমাকে এই বলে চিৎকার করে বলেন যে, ‘তুমি একটা নির্বোধ, অনুভূতিহীন গবেট।’’

অভিযোগকারী শিক্ষার্থী আরো জানান, অধ্যাপক নাদির জুনাইদের ‘ব্যক্তি-আক্রোশের’ শিকার হওয়ার ভয়ে গত দেড় বছর যাবত মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন তিনি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগে তিনি বলেন, "আমি অনেকের কাছ থেকে দেখেছি একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত আক্রোশ কত ভয়ংকর হতে পারে। যেই ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার হতে পারি বলে আমি গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে নিজের উপর হওয়া যৌন হয়রানি মুখ বুজে সহ্য করেছি’'

অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী আরো উল্লেখ করেন, "উনার সাথে কথা বলাটা ছিল আমার জন্যে যন্ত্রণাদায়ক। আমি ঘুমের ঔষধ নিতে শুরু করলাম, কারণ আমি ঘুমাতে পারতাম না, উনার কথাবার্তাগুলো আমার চিন্তায় আসতো। আমি চোখ বন্ধ করলে আজেবাজে স্বপ্ন দেখতাম। আমি প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকতাম।"

আরো পড়ুন: ফলাফলে ধস নামিয়ে দেয়ার অভিযোগ ঢাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে

"আমি বিগত দেড় বছর প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। কিন্তু এ যন্ত্রণার প্রকাশ আমি উনার সামনে করতে পারিনি। এক পর্যায়ে এ যন্ত্রণার পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে আমি রাতে ঘুমাতে পারতাম না। গত বছরের শুরুতে আমি কাউন্সিলিং-ও করি। ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধ খেতে হত।"

সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বিভাগে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘'আমরা নিজ বিভাগে ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠছি, নিজেদের মধ্যে সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করছি। একজন শিক্ষকের কাছে সবাই কোণঠাসা হয়ে পড়লাম! যেখানে উনি উনার মতো একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছেন এবং সামনে আরো করতে যাচ্ছেন’'

নাদির জুনাইদের যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করার কথা উল্লেখ করে অভিযোগপত্রে ওই নারী শিক্ষার্থী আরো বলেন, "উনি আমাদের সামনের চেয়ারপার্সন। শুধু এই ভয়ে আমার পরিবারের কাছে আমার দেড় বছর আগে থেকে বলতে হচ্ছে যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করবো না। দরকার হলে নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করব।"

আরো পড়ুন: জাবির ধর্ষণকাণ্ডে ইউজিসির কমিটি গঠন

নাদির জুনাইদকে মানসিকভাবে অস্থিতিশীল উল্লেখ করে অভিযোগ পত্রে বলা হয়, "সবমিলিয়ে উনাকে আমার মানসিকভাবে অস্থিতিশীল মনে হয়েছে। উনি পরিচয়ের শুরুতে উনার সুন্দর আচরণ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেন। আদর্শের ভেক ধরে থাকেন। এর মাধ্যমে ধীরে ধীরে নারী শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। আমার সাথে কথোপকথনের সময়ও উনি বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ করতেন। এমনকি বিভিন্ন সময় তাদের শারীরিক অবয়ব নিয়েও নোংরা মন্তব্য করেছেন। আমার মত অনেক শিক্ষার্থীকেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন বিভিন্ন সময় জানতে পেরেছি।"

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক নাদির জুনাইদ গণমাধ্যমকে বলেন, কে অভিযোগ করেছে তার নাম না জেনে আমি কি বলবো? সাত তারিখ থেকে আমার কাছে খবর আসছে কেও কেও আমার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ করার চেষ্টা করছে। এতদিন কিছুই হলো না, হঠাৎ করে এখন আমার বিরুদ্ধে লেখালেখি হচ্ছে তারপরেই আমার কানে আসলো আপনার বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, মানুষকে প্রেশার দেয়া হচ্ছে, জোর করে তাদেরকে বলা হচ্ছে অভিযোগ দাও অভিযোগ দাও। 

তিনি জানান বিষয়টি জেনে গতকাল (শুক্রবার) শাহবাগ থানায় নিরাপত্তাহীনতা ও মানসিক অশান্তিতে ভুগছি উল্লেখ করে উৎকণ্ঠার কথা জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বক্তব্য সেখানে দেবেন বলেও উল্লেখ করেন। 

অভিযোগের বিষয়ে ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, অভিযোগপত্রটা পেয়েছি। এটা দেখে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App