×

সারাদেশ

ঝালকাঠিতে ট্রাক চাপায় নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেছে

Icon

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০৪ পিএম

ঝালকাঠিতে ট্রাক চাপায় নিহতদের পরিচয় পাওয়া গেছে

ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠিতে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের চাপায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশার ১৪ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে আরো ১৫ জন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর দুইটায় জেলার শহরতলীর খুলনা-বরিশাল মহাসড়কের গাবখান সেতুর পূর্ব টোলপ্লাজায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এসময় ঘাতক ট্রাকের চালক ও হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার পর প্রায় এক ঘণ্টা সড়কে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। উদ্ধার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর বেলা সারে তিনটার দিকে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। 

এদিকে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায়। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

সরকারের পক্ষ থেকে মৃত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লাখ টাকা, পঙ্গুত্ব বরণকারীদের তিন লাখ টাকা ও আহতদের এক লাখ টাকা করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম। 

ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, বরিশালে বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলো একটি প্রাইভেটকার ও তিনটি অটোরিকশা যাচ্ছিলো শহরে। দুপুর ২টার দিকে গাবখান টোল-প্লাজায় টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো একটি প্রাইভেট কার ও তিনটি অটোরিকশা। এ চারটি যানবাহন ঝালকাঠি শহরের মধ্যে যাচ্ছিলো। এসময় দ্রুতগতিতে আসা একটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক (খুলনা মেট্রো ০৯৫৭) প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলোকে চাপা দেয়। এতে দুমড়ে মুচড়ে যায় প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাগুলো। ঘটনাস্থলেই মারা যায় অটোরিকশার ৬ যাত্রী। পরে প্রাইভেটকার থেকে আরো ৮ যাত্রীকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে ৮ জনের মৃত্যু হয়। নিহত মোট ১৪ জনের মধ্যে শিশু রয়েছে চারজন, নারী তিনজন ও পুরুষ সাতজন। নিহতদের বাড়ি রাজাপুর, ভান্ডারিয়া ও কাঁঠালিয়া উপজেলায়। সড়ক দুর্ঘটনায় এমন মৃত্যু দেখে হতবাক স্থানীয়রা। 

প্রত্যক্ষদর্শী গাবখান টোলের কর্মী আবুল বাশার (৫০) বলেন, প্রাইভেটকার ও তিনটি ব্যাটারীচালিত অটো টোল দেয়ার জন্য অল্পগতিতে ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে পশ্চিম দিক থেকে আসা দ্রুত গতির একটি ট্রাক প্রাইভেটকার ও অটোকে চাপা দিলে কার ও অটো দুমরে মুচরে যায়। মুহুর্তেই কি যে হয়ে গেলো বুঝলাম না। শুধু রক্ত আর কান্না। তিনি আরো বলেন, আমার ধারণা ট্রাকের ব্রেক ফেল করেছিলো। এ কারণে টোলপ্লাজায় ব্রেক না করেই সরাসরি প্রাইভেটকার ও অটোরিকশাকে চাপা দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। 

বিষয়টি নিয়ে ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মোট ১৪ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে প্রাইভেট কারে একই পরিবারের ৬ জন ছিলো, হাসপাতালে নেয়ার পরে মারা যায় ৪ জন এবং ঘাতক ট্রাকের ধাক্কায় উল্টে যাওয়া অপর ট্রাকের মধ্য থেকে ১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল শের-ই- বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন মারা যায়। পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আরো একজন মারা যায়। 

এই কর্মকর্তা আরো জানান, ঘাতক ট্রাকটি সেতু থেকে নামার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটায়। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সেতুর পশ্চিম দিক থেকে খুলনা মেট্রো-ট 

১১-৯৫৭ নম্বরের সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি দ্রুতগতীতে টোল ঘরের দিকে যাচ্ছিলো। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘাতক ট্রাকটি টোল দেয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকা ৩টি ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা, একটি প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো- গ ৩৯-৫৭৪২) এবং ঘরের আসবাবপত্র বহনকারী অপর একটি ছোট ট্রাকটিকে (ঢাকা মেট্রো-ন ১২-২২০৪) ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে অটোরিক্সা ৩টি এবং প্রাইভেট কারটি দুমরে মুচড়ে যায়। এসময় প্রাইভেট কার ও অটোরিক্সার ৭ জন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। 

হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে নিহত যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, একই পরিবারের ৬ জন রাজাপুর উপজেলার সাউথপুর গ্রামের হাসিবুর রহমান (৩২), স্ত্রী নাহিদা আক্তার (২৭), তাদের সন্তান তাকিয়া (সাড়ে চার বছর), তাহমিদ (১ বছর ), সদ্য বিবাহিত ইমরান (২৬) ও তার স্ত্রী নিপা (২২) দক্ষিণ রাজাপুর  গ্রামের ইব্রাহিম ফকির (৩০) (প্রাইভেট কারের চালক), ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), ওস্তাখান গ্রামের শফিকুল মাঝি (৫০) নওয়াপাড়া গ্রামের আতিকুর রহমান সাদিক (১১), কাঁঠালিয়া উপজেলার তালগাছিয়া গ্রামের নুরজাহান (৭), রাজাপুর থানার আনোয়ার (৫৫),গাবখানের শহিদুল ইসলাম (৪৫), সোহেল মাঝি (৩০)।

ঝালকাঠি থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আমরা এখন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে লাশের সুরতহাল তৈরি করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের কাজ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে মামলা দায়ের করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App