×

সারাদেশ

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চায় যুদ্ধ শিশু ছেপি খাতুন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৩, ০২:০৫ পিএম

রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চায় যুদ্ধ শিশু ছেপি খাতুন

ছবি: মর্তুজা ফারুক রুপক, মেহেরপুর

স্বাধীনতার পর বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে এগিয়ে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭২ সালে প্রতিটি জনসভায় বীরাঙ্গনাদের উদ্দেশে বলেন, কেউ যদি বীরাঙ্গনার সন্তানদের পিতার নাম জিজ্ঞেস করে, তবে বলে দিও তাদের পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। আর তাদের ঠিকানার পাশে লিখে দিও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর।

মুক্তিযুদ্ধের সময় লাঞ্ছিত, নির্যাতিত নারীদের বীরাঙ্গনা খেতাব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। অথচ মেহেরপুরের বীরাঙ্গণাদের স্থানীয় সমাজ তথা রাষ্ট্র মূল্যায়ন করেনি। স্বাধীনতা পরবর্তী এদের জীবন চলেছে কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে।

পাকসেনাদের আদিম উন্মত্ততার ফসল মেহেরপুরের বিরাঙ্গনা মুনজুরা খাতুনের মেয়ে ছেপি খাতুন। এই বীরাঙ্গনা কন্যা ও বীরাঙ্গনার ভাগ্যে আজও জোটেনি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। কালের গহ্বরে তাদের অবদান যেন ছাইচাপা পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসেও এরা উপেক্ষিত। চিকিৎসার অভাবে ১৯৯৮ সালে মারা যান মুনজুরা খাতুন।

পরে যুদ্ধ শিশু ছেপি খাতুন পড়েন সমাজের রোসানলে। পিতৃ পরিচয়হীন ছেপি খাতুনের বেঁচে থাকায় কঠিন হয়ে পড়ে।

পাকসেনাদের লালশায় বীরাঙ্গনা মুনজুরার গর্ভে জন্ম নেয়া ছেপি খাতুন বলেন, দেশের মধ্যে থেকে আমার মা একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে। আমার জন্ম পাক সেনাদের ঔরসে। অথচ কোন সরকারই আমার মায়ের আত্মত্যাগের কোন মূল্য দেয়নি। দেয়নি তার ত্যাগের স্বীকৃতি। চিকিৎসার অভাবে মায়ের মৃত্যু এখনও আমাকে কুরে কুরে খায়। ছেপি খাতুন একথা বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে জন্ম হয় ছেপি খাতুনের। বর্তমানে ছেপি কাশ্যব পাড়ায় বসবাস করলেও সে তার পিতার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার ঠিকানা ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বলে জানায়। কারণ হিসেবে বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বীরাঙ্গনার কন্যাদের এই পরিচয়ে পরিচয় দেয়ার জন্য বলেছে বলে লোকমুখে শোনা কথা অনেকের কাছেই জাহির করে।

ছেপি, জানায় জন্ম নিয়ে তার ক্ষোভ নেই। বরং তার মা জন্মকালে মেরে না ফেলে তাকে লালন পালন করেছে এটা তার বড় গর্বের।

ছেপি স্বীকার করে বলেন, তার মা মুনজুরা খাতুনের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আছে এক কালো অধ্যায় (শরীর বিক্রি)। সেই কালো অধ্যায় থেকেই ভরণ পোষণ করেছেন ছেপির। পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে শাড়ি বিক্রি করতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় মেহেরপুর শহরে বড়বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ দিকের একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো মুনজুরা। একদিন পাকসেনারা তার বাড়িতে এসে জোরপূর্বক কয়েকজন পাকসেনা পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে গুলি করে হত্যা করবে বলে ভয় দেখিয়ে পাকসেনারা নিয়মিত ধর্ষণ করতো।

মুনজুরা খাতুন নিজ প্রাণের সাথে দেশের জন্য তাদের (পাকসেনাদের) দাবি মেনে নেয়ার কথা শুনিয়েছেন বেঁচে থাকা কালে (সিনিয়র সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম এর লেখা ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধের উপাখ্যান’ বইয়ে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে)।

সাংবাদিক তোজাম্মেল আযম বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মুনজুরাকে সমাজ মেনে নেয়নি। মেনে নেয়নি বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজন। তবে সেসময় সিরাজুল ইসলাম নামে এক যুবক তাকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দেন। কিন্তু সেই সংসার বেশীদিন টেকেনি। পরবর্তীতে অর্থকষ্টে চিকিৎসার অভাবে ১৯৯৮ সালের ২৫ মে মারা যায় মুনজুরা।

মুনজুরা খাতুন মেহেরপুরের মন্ডল পাড়ার কাঠফাড়ায়ের মিস্ত্রি ইছারদ্দির মেয়ে। এই বীরাঙ্গনার কন্যা ছেপি তার মায়ের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির দাবি করে। সেই সাথে যুদ্ধ শিশু হিসেবে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চায় ছেপি খাতুন।

বীর মুক্তিযোদ্ধ ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মালেক বলেন, ছেপি খাতুনকে মর্যাদা দেয়া উচিৎ। মন্ত্রনালয়ে আবেদন করুক। আমরা সহযোগিতা করবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App