সাহেদের আত্মগোপনের ফিল্মিস্টাইলে বিস্ময়!
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২০, ০৫:৪১ পিএম
আলোচিত রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে ‘প্রতারক জগতের আইডল’ বলে আগেরদিনই আখ্যা দিয়েছিল র্যাব। পরদিনই সাতক্ষীরা সীমান্ত হয়ে ভারতে পালানোর সময় বলা যায় তাকে দাবড়ে ধরেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।
আবার গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে উঁচুমানের প্রতারক হিসেবে উল্লেখ করে র্যাব কর্মকর্তারা জানান, সাহেদ বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে ছদ্মবেশ ধারণ করে আত্মগোপণের চেষ্টা করছিলেন। তার বাড়ি সাতক্ষীরা হলেও তিনি বাড়ি না গিয়ে বিভিন্ন গাড়ি পরিবর্তন করে আশপাশে ঘুরছিলেন।
সারাদেশে গত কয়েকদিন ধরে কঠোর নজরদারির পরও সাহেদকে ধরতে বহু বেগ পেতে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে। এর কারণ সাহেদের স্টাইল। প্রতারকদের আইডল হিসেবে সবার চোখে ধুলো দেয়ার অবিশ্বাস্য কায়দা-কৌশল বা উঁচুমানের স্টাইল আগে থেকেই রপ্ত ছিল তার।
আত্মগোপনে থেকে নির্বিঘ্নে দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সব কৌশলই প্রয়োগ করেছিলেন তিনি। এসব কৌশলের কিছু কিছু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
[caption id="attachment_231769" align="aligncenter" width="700"] সাহেদ[/caption]সাদা চুল কালো, গোঁফ ফেললেন কেটে... নিজের পরিচয় লুকানোর জন্য চুলের রং পরিবর্তন করে সাদা থেকে কালো করেছেন। শুধু তাই নয়, গোঁফ কেটেও কালো করে ফেলেছেন। তার নাকি প্ল্যান ছিল মাথা ন্যাড়া করার। অবশ্য সে প্ল্যানটা ছিল ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলে।
নারীর ছদ্মবেশ... চুল কালো করে, গোঁফ ছেটে ফেলেও ভরসা পাচ্ছিলেন না। তাই পরিচয় পুরোপুরি লুকিয়ে ফেলতে পালিয়ে যাওয়ার সময় নারীর ছদ্মবেশ নিয়েছিলেন। পরেছিলেন বোরকা। সেই বোরকা পরেই উঠিছিলেন মাছ ধরার নৌকায়। তবে সেই অবস্থাতেই র্যাবের হাতে ধরা পড়েন।
[caption id="attachment_231773" align="aligncenter" width="700"] র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার সাহেদ[/caption]ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন... গেল নয়দিন ধরে সাহেদকে অনুসরণ করছিল আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। তথ্য ছিল, নিজ জেলা সাতক্ষীরা শহরেই আত্মগোপনে ছিলেন। তবে ঘন ঘন অবস্থান পরিবর্তন করছিলেন। তথ্যমতে, বাড়ির আশেপাশেই অবস্থান ছিল তার। কখনও আবার বার বার গাড়ি বদল করছিলেন। এতে তাকে চিহ্নিত বা অবস্থান শনাক্ত করা কঠিন হয়ে উঠছিল। আর এসব কারণে সাহেদকে গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি পৌঁছলেও সামান্যের জন্য মিস করছিল আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।
কব্জা করেছিলেন দালালদের... সীমান্ত পার হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহেদ স্থানীয় কয়েকজন দালালকে ম্যানেজ করেছিলেন। দালালরাও তাকে নৌকায় নদী পার হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় সহায়তা করছিলেন। কোন রুট দিয়ে, কখন কীভাবে সবার চোখে ধূলা দিয়ে পালাতে হয় সেসব কৌশল জানিয়ে দিয়েছিলেন দালালরাই। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। যদিও দালালরা আগেই সটকে পড়েছিলেন।
[caption id="attachment_231765" align="aligncenter" width="700"] সাহেদ[/caption]শুয়েছিলেন নর্দমায়... র্যাবের উপস্থিতি টের পাওয়ার পরই সাহেদ গ্রেপ্তার এড়াতে নর্দমার মধ্যে শুয়ে পড়েছিলেন। তার পরনে ছিল শার্ট, প্যান্ট। তবে এর ওপর চাপিয়েছিলেন বোরকা। এসব নিয়েই শুয়ে পড়েছিলেন নর্দমার মধ্যে। পরে র্যাবের টিম সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর বেইলি ব্রিজের পাশে ইছামতী নদীর নর্দমার মধ্যে থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে। নর্দমায় শুয়ে পড়ার কারণেই বোরকায় কাদা লেগে যায়।
ভারী শরীরে নড়তে পারছিলেন না... সাহেদকে ভারতে পালাতে সহযোগিতা করছিল একজন মাঝি। ঘটনার সময় সে সাঁতরে পালিয়ে গেছে। তবে র্যাবের উপস্থিতি টের পাওয়ার পর সাহেদ করিম মোটা হওয়ায় দৌড়াতে পারেননি। সেজন্য নিজেকে আড়াল করতে সহজ পন্থা বেছে নেন। নর্দমার মধ্যে শুয়ে পড়েন যেন কেউ ধরতে না পায়। তবে ভাবনাটা তাকে সুফল দেয়নি।
[caption id="attachment_231782" align="aligncenter" width="700"] ঢাকায় সাহেদ[/caption]মারমুখী ছিলেন কিশোররা... করোনা মহামারির সময় সবাই যখন নিজেদের জীবন বাঁচানোর লড়াইয়ে ব্যস্ত তখন করোনা নিয়ে সাহেদের অবিশ্বাস্য প্রতারণায় ক্ষুব্ধ ছিলেন সাতক্ষীরার মানুষও। সাহেদকে যে এভাবে গ্রেপ্তার হবেন তা চিন্তাই করতে পারেনি সাতক্ষীরার মানুষ। তারপরেও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা জনতা সাহেদের ওপর ছিলেন মারমুখী। গ্রেপ্তারের পর র্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় একদল কিশোর তার গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করেছিল। ওই সময় ভিডিও ধারন করা এক কিশোর র্যাব কর্মকর্তাদের কাছে আবদার করে বলে, ‘সবাই মিলে একটু মারলে হইতো।’ তবে র্যাব ওই কিশোরের আবদার রাখেনি।