×

জাতীয়

চিরনিদ্রায় শায়িত মেয়র আনিসুল হক

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ০৬:৫৩ পিএম

শনিবার বিকালে ঢাকার বনানী কবরস্থানে সমাহিত করার পর ভক্তরা বলেন, মেয়র হিসেবে আনিসুল হককে কখনও ভুলতে পারবেন না তারা।

ক্ষমতাসীন দলটির সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতা থাকলেও আনিসুল হককে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির ছিলেন বিএনপি নেতারাও, নানা মতের ব্যবসায়ীরাও এক হয়েছিলেন সেখানে।

যে দল থেকে আনিসুল হক মেয়র হয়েছিল, সেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলছেন, ওই দায়িত্ব পালনের জন্য দ্বিতীয় আনিসুল হক আর পাওয়া যাবে না।

দুপুরে লন্ডন থেকে মরদেহ আসার পর বনানীর বাড়িতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা হয় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হকের। তারপর কফিন নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে।

আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হক লন্ডন থেকে মরদেহ নিয়ে আসার পর বিমানবন্দর থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত পুরো সময় উপস্থিত ছিলেন ভাই সেনাপ্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।

চার মাস আগে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ৬৫ বছর বয়সী আনিসুল হক, ধরা পড়ে ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’য়ে আক্রান্ত তিনি।

এরপর অধিকাংশ সময় তিনি হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন। বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

এই পুরোটা সময় স্বামীর সঙ্গে থাকা রুবানা স্বামীর মরদেহ নিয়ে বনানীর বাড়িতে যাওয়ার পর সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন রুবানা।

শেখ হাসিনা আনিসুল হকের মরদেহের সামনে মোনাজাত করেন। এরপর রুবানা ও তার সন্তানদের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরও সেখানে যান।

তোফায়েল সাংবাদিকদের বলেন, “একদিকে তার সততা ছিল, অন্যদিকে তার যোগ্যতা ছিল। যতদিন ঢাকা মহানগর থাকবে, মানুষের স্মৃতিতে তিনি অক্ষয় হয়ে বিরাজ করবেন।”

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন আনিসুল হকের কফিনে।

আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, “নির্দলীয় অবস্থান থেকে স্থানীয় সরকার যে চালানো যায়, উন্নয়ন করা যায়, সেটা (নজির) তিনি রেখে গেছেন।”

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আনিসুল হকের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালও যান আনিসুল হকের শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানাতে।

জাফর ইকবাল সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি (আনিসুল হক) ঢাকা শহর নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে গেছেন, কেউ না কেউ যেন তার স্বপ্নগুলো পূরণ করে তাকে শান্তি দেয়।”

ব্যবসায়ী নেতাদের অনেকে উপস্থিত হন বিজিএমইএ ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আনিসুল হকের বনানীর বাড়িতে।

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ সাংবাদিকদের বলেন, “তিনি ছিলেন আমাদের ব্যবসায়িক লিডার। তার চলে যাওয়ায় দেশের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে।”

আনিসুল হককে এফবিসিসিআইর ‘সফলতম সভাপতি’ অভিহিত করেন তার মেয়াদের পর ওই দায়িত্ব পালনকারী এ কে আজাদ।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে এফবিসিসিআইর সভাপতি ছিলেন আনিসুল হক। তার আগে বিজিএমইএর সভাপতিও ছিলেন তিনি।

মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান আনিসুলের তৈরি পোশাক ছাড়াও বিদ্যুৎ, তথ্যপ্রযুক্তি, আবাসন, কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে। ডিজিযাদু ব্রডব্যান্ড লিমিটেড এবং নাগরিক টেলিভিশনের মালিকানাও আছে তার ব্যবসায়িক গ্রুপের।

টিভি উপস্থাপনা দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া আনিসুল হক পরে ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে চেনামুখ ছিলেন, তবে রাজনীতিতে তার পা রাখা আকস্মিকভাবেই ঘটে।

২০১৫ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে তাকে প্রার্থী করে, তখন তা চমক হিসেবেই দেখা গিয়েছিল।

শুক্রবার লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক জামে মসজিদে প্রথম জানাজার পর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের কথায়ও তা ফুটে ওঠে- “আমরা অনেকে অবাক হয়েছিলাম তিনি যখন রাজনীতিতে যোগদান করেন।”

মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এই দুই বছরে অবৈধ দখল উচ্ছেদসহ বেশ কিছু বিষয়ে শক্ত অবস্থান নিয়ে অনেকের নজর কেড়েছিলেন আনিসুল হক। ঢাকার কূটনীতিকপাড়া বারিধারা ও গুলশানের বিভিন্ন দূতাবাসের দখলে থাকা ফুটপাতও দখলমুক্ত করেন মেয়র আনিসুল। পরিবহন শ্রমিকদের বিরোধিতার মুখেও তেজগাঁও ট্রাক টার্মিনালের সামনের সড়ক দখলমুক্ত করেছিলেন তিনি।

এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, ঢাকা চাকা, বিলবোর্ড উচ্ছেদ, গ্রিন ঢাকা কর্মসূচিসহ বেশকিছু উদ্যোগের জন্য আলোচিত হন তিনি।

তবে অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাইরে আনিসুল হক তেমন মনোযোগ দেননি বলে অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ।

নাতির জন্ম উপলক্ষে গত ২৯ জুলাই রুবানা ও আনিসুল হক যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ অগাস্ট তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারপর থেকে হাসপাতালেই ছিলেন তিনি; তারপর আর জীবনে ফেরা হয়নি তার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App